বরিশাল বিভাগে ১৭ রুটে বাস ধর্মঘট ডেকে পাঁচ ঘণ্টা পর প্রত্যাহার
Published: 8th, March 2025 GMT
বরিশাল নগরের রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে ১৭টি রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘট ডেকে পাঁচ ঘণ্টা পর তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাসের শ্রমিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ শনিবার বেলা একটা থেকে এ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছিল। এতে বিভাগের ১৭টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয় বাস মালিক ও শ্রমিক সমিতি।
বরিশাল সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি জিয়া উদ্দিন সিকদার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেওয়ায় তাঁরা মাগরিবের পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এরপর সব রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।
আজ সকালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে বাসচালকদের সঙ্গে তিন চাকার যানের (মাহিন্দ্রা) চালকদের মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে দুপুর ১২টা থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয় বাসমালিক ও শ্রমিক সমিতি। বেলা একটার পর বরিশালের রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাট, খুলনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনার ১৭ রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন এসব রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা। তাঁরা বিকল্প যানে ঝুঁকি নিয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেশি ভাড়ায় গন্তব্যে যেতে বাধ্য হন।
এর আগে বেলা ১১টার দিকে বাস ও তিন চাকার যানবাহনের চালকদের মধ্যে মারামারি গিয়ে আলফা-মাহিন্দ্রা সমিতির নেতাদের হাতে মারধরের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী। এর প্রতিবাদে দুই ঘণ্টা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের আশ্বাসে বেলা দেড়টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
রূপাতলী বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, মহাসড়কে অবৈধ তিন চাকার যানের দাপটে বাস চালানো দায় হয়ে পড়েছে। এতে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়ছে। সামনে ঈদ। দুর্ঘটনা বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে। বাসচালক, মালিক, শ্রমিকসহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মারধর করেন তিন চাকার যানের মালিক-শ্রমিকেরা। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে তাঁরা ধর্মঘট ডেকেছিলেন। প্রশাসনের আশ্বাসে সন্ধ্যায় তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।
নগরের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম রাত পৌনে আটটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে দুপুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছিল। তবে বাস শ্রমিকদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাননি। পেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সন্ধ্যার পর থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক আছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: বর শ ল
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।