বরিশাল নগরের রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে ১৭টি রুটে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস ধর্মঘট ডেকে পাঁচ ঘণ্টা পর তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। বাসের শ্রমিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে আজ শনিবার বেলা একটা থেকে এ ধর্মঘটের ডাক দেওয়া হয়েছিল। এতে বিভাগের ১৭টি রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। পরে প্রশাসনের আশ্বাসে সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নেয় বাস মালিক ও শ্রমিক সমিতি।

বরিশাল সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি জিয়া উদ্দিন সিকদার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে হামলায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দেওয়ায় তাঁরা মাগরিবের পর ধর্মঘট প্রত্যাহার করে নিয়েছেন। এরপর সব রুটে বাস চলাচল স্বাভাবিক হয়েছে।

আজ সকালে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়কে বাসচালকদের সঙ্গে তিন চাকার যানের (মাহিন্দ্রা) চালকদের মারামারির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে দুপুর ১২টা থেকে ধর্মঘটের ডাক দেয় বাসমালিক ও শ্রমিক সমিতি। বেলা একটার পর বরিশালের রূপাতলী বাস টার্মিনাল থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের বাগেরহাট, খুলনা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, ভোলা, পটুয়াখালী, বরগুনার ১৭ রুটে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েন এসব রুটে চলাচলকারী যাত্রীরা। তাঁরা বিকল্প যানে ঝুঁকি নিয়ে দুই থেকে তিন গুণ বেশি ভাড়ায় গন্তব্যে যেতে বাধ্য হন।

এর আগে বেলা ১১টার দিকে বাস ও তিন চাকার যানবাহনের চালকদের মধ্যে মারামারি গিয়ে আলফা-মাহিন্দ্রা সমিতির নেতাদের হাতে মারধরের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থী। এর প্রতিবাদে দুই ঘণ্টা বরিশাল-কুয়াকাটা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সেনাবাহিনী ও পুলিশের আশ্বাসে বেলা দেড়টার দিকে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

রূপাতলী বাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম চৌধুরী বলেন, মহাসড়কে অবৈধ তিন চাকার যানের দাপটে বাস চালানো দায় হয়ে পড়েছে। এতে দুর্ঘটনার সংখ্যাও বাড়ছে। সামনে ঈদ। দুর্ঘটনা বৃদ্ধির আশঙ্কা আছে। বাসচালক, মালিক, শ্রমিকসহ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মারধর করেন তিন চাকার যানের মালিক-শ্রমিকেরা। এ ঘটনার বিচারের দাবিতে তাঁরা ধর্মঘট ডেকেছিলেন। প্রশাসনের আশ্বাসে সন্ধ্যায় তা প্রত্যাহার করা হয়েছে।

নগরের বন্দর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম রাত পৌনে আটটার দিকে প্রথম আলোকে বলেন, এ বিষয়ে দুপুরে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি মীমাংসা করা হয়েছিল। তবে বাস শ্রমিকদের পক্ষ থেকে কোনো অভিযোগ পাননি। পেলে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সন্ধ্যার পর থেকে বাস চলাচল স্বাভাবিক আছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বর শ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।

মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা  মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?

তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।

সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি  যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?

সরকারের পক্ষ থেকে  রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।

দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।

এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন,  সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!

এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ