মাদারীপুরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা সাইফুল সরদার (৩৫), তাঁর বড় ভাই আতাবুর সরদার (৪০) ও তাদের চাচাতো ভাই পলাশ সরদারকে (১৭) কুপিয়ে হত্যা করেছে প্রতিপক্ষ। গুরুতর আহত হয়েছেন তিনজন। 

শনিবার দুপুরে সদর উপজেলার খোয়াজপুর ইউনিয়নের সরদারকান্দি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত আতাবুর ও সাইফুল সরদারকান্দি গ্রামের মৃত আজিবার সরদারের ছেলে। পলাশের বাবার নাম মুজাম সরদার। এর মধ্যে সাইফুল খোয়াজপুর ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।  

স্থানীয়রা জানান, খোয়াজপুর ইউনিয়নের টেকেরহাট এলাকার মোল্লাবাড়ি ও সরদার বাড়ির মাঝখানে ড্রেজারের বালু তোলার পাইপ বসানো নিয়ে উভয় পরিবারের লোকজনের মধ্যে শনিবার দুপুরে কথা কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে আধিপত্যকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রতিপক্ষের হামলা থেকে বাঁচতে সাইফুল, আতাবুর ও পলাশ বাড়ির কাছে একটি মসজিদের সামনে আশ্রয় নেন। হামলাকারীরা সেখানেই তাদের কুপিয়ে জখম করে। তাদের উদ্ধারে এগিয়ে এলে হামলায় আহত হন আরও দু’জন। গুরুতর আহত অবস্থায় ৫ জনকে মাদারীপুর সদর হাসপাতালে নিয়ে যান গ্রামবাসী। এর মধ্যে আতাবুর, সাইফুল ও পলাশ মারা যান। আহতরা হলেন– খোয়াজপুর ইউনিয়নের আজিজুল হাওলাদারের ছেলে তাজেল হাওলাদার, আজিবার সরদারের ছেলে অলিল সরদার। তাদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। 

তিন ভাইয়ের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে তাদের পরিবারের লোকজন পাল্টা প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর, লুটপাট শেষে আগুন ধরিয়ে দেয়। খবর পেয়ে সেনাবাহিনী ও পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। ঘটনাস্থল থেকে দু’জনকে আটক করেছে পুলিশ।

মাদারীপুর সদর মডেল থানার ওসি মোকসেদুর রহমান বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দু’পক্ষে এ সংঘর্ষ হয়। দুই ভাইয়ের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সদর হাসপাতাল মর্গে রাখা হয়েছে। এ ঘটনায় এখনও মামলা করতে আসেনি নিহতের পরিবার। ভুক্তভোগী পরিবার মামলা করতে পারে। 

মাদারীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার চাতক চাকমা (সদর সার্কেল) বলেন, এলাকায় সেনাবাহিনী ও অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। নিহত সাইফুল ছিনতাইসহ একাধিক মামলার আসামি। বর্তমানে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রয়েছে। পুলিশি টহল ও অভিযান জোরদার করা হয়েছে। অপরাধীরা শিগগির ধরা পড়বে।


 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র সরদ র পর ব র দ র কর

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ