ভারত-নিউজিল্যান্ড ম্যাচে ৭ হাজার কোটি টাকার জুয়া
Published: 9th, March 2025 GMT
দুবাইয়ে আজ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির ফাইনাল, যেখানে মুখোমুখি হবে ভারত ও নিউজিল্যান্ড। এই বহুল প্রতীক্ষিত ম্যাচকে ঘিরে জমে উঠেছে অবৈধ বেটিং চক্রের তৎপরতা। ম্যাচ ঘিরে জুয়াড়িরা ইতোমধ্যে প্রায় ৭ হাজার কোটি টাকার বাজি ধরেছে বলে জানিয়েছে ভারতের শীর্ষস্থানীয় গণমাধ্যম এনডিটিভি।
প্রতিটি বড় ক্রিকেট ম্যাচে ভারতের জুয়াড়ি চক্র সক্রিয় থাকলেও আইসিসির কোনো ইভেন্ট হলে তৎপরতা বেড়ে যায় কয়েকগুণ। এবার ফাইনাল ম্যাচটি দুবাইয়ে হওয়ায় আন্তর্জাতিক বুকিদের প্রভাবও চোখে পড়ার মতো। ভারতের কুখ্যাত মাফিয়া ডন দাউদ ইব্রাহিমের ‘ডি কোম্পানি’ও এই ম্যাচ ঘিরে সক্রিয় বলে ধারণা করছে গোয়েন্দারা।
ভারতীয় পুলিশের অপরাধ বিভাগ ইতোমধ্যেই সেমিফাইনাল ম্যাচ ঘিরে বেটিংয়ের অভিযোগে অন্তত পাঁচজন জুয়াড়িকে গ্রেফতার করেছে। তাদের মধ্যে পারভিন কোচার ও সঞ্জয় কুমার নামে দুই বুকি সেমিফাইনাল ম্যাচে জুয়ায় সক্রিয় ছিলেন। তাদের কাছ থেকে মোবাইল, ল্যাপটপসহ বেটিংয়ের বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করেছে পুলিশ।
এনডিটিভি জানিয়েছে, পারভিন কোচারের একটি ‘মাস্টার আইডি’ রয়েছে, যার মাধ্যমে বেটিং ওয়েবসাইটে অন্যদের জন্য আইডি তৈরি করা হয়। প্রতিটি লেনদেনে একটি সিন্ডিকেট ৩ শতাংশ কমিশন পায়। একই সঙ্গে ফোন কলের মাধ্যমেও অফলাইন বেটিং চালানো হয়।
সূত্র বলছে, পারভিন কোচার প্রতি ম্যাচে প্রায় ৪০ হাজার রুপি লাভ করতেন। ৩৫ হাজার রুপি ভাড়ায় একটি ঘর নিয়ে তিনি বেটিং কার্যক্রম পরিচালনা করতেন। জিজ্ঞাসাবাদে তিনি স্বীকার করেছেন, পুরো নেটওয়ার্কটি দুবাই থেকে পরিচালিত হয়—সেই শহরেই আজ হতে যাচ্ছে ভারত-নিউজিল্যান্ড ফাইনাল ম্যাচ।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ফ ইন ল ম য চ
এছাড়াও পড়ুন:
পরিস্থিতির উন্নতির জন্য নির্বাচন হতেই হবে
বাংলাদেশে নির্বাচনপূর্ব সময়ে সব সময় কিছু বিশৃঙ্খলা বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়। তবে এবারের পরিস্থিতি অন্যবারের চেয়ে বেশি নাজুক। এর কারণ বিপ্লব–পরবর্তী সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে পর্যায়ে নেমেছে, সেখান থেকে বর্তমান সরকার দেড় বছর সময় পেলেও খুব দৃশ্যমান কোনো উন্নতি ঘটাতে পারেনি।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে এবং এর আগে থেকে পরিস্থিতির ওপর যে ধরনের পর্যালোচনা বা অনুধাবনের প্রয়োজন ছিল, সেখানে ঘাটতি ছিল। কাজেই প্রস্তুতিও সেভাবে নেওয়া হয়নি। বিপুলসংখ্যক অস্ত্র এর আগে খোয়া গিয়েছিল, হারিয়ে গিয়েছিল। সেগুলো উদ্ধার করার জন্য জোর তৎপরতা চালানোর মতো দৃশ্যমান কিছু দেখা যায়নি। এর ফলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর জন্য যে পদক্ষেপগুলো নেওয়া উচিত ছিল, সেখানে বড় ধরনের ঘাটতি আমরা দেখতে পেয়েছি।
আমরা এটাও জানি যে আওয়ামী লীগ (এখন কার্যক্রম নিষিদ্ধ), বিশেষ করে আওয়ামী লীগের নেত্রী এবং অন্য যে নেতারা ভারতে পালিয়ে গেছেন, তাঁরা সেখান থেকে বিভিন্ন উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়ে আসছেন। অনেক ক্ষেত্রে তাঁরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করার জন্য প্রত্যক্ষভাবে উসকানি দিয়েছেন। এগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্ট বাহিনীগুলোর আগাম প্রস্তুতি থাকা প্রয়োজন ছিল। সে ধরনের কোনো প্রস্তুতি যদি তারা নিয়ে থাকে, তাহলে অবস্থার অবনতি হতো না বা হওয়ার কথা নয়।
যেসব বাহিনী দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হবে, সেই বাহিনীগুলোর কর্মদক্ষতায় বড় ধরনের ঘাটতি রয়ে গেছে। বিশেষ করে পুলিশ সম্পূর্ণভাবে পুনর্গঠিত হয়নি। এই বাহিনীকে সরকার সম্পূর্ণভাবে আগের জায়গাতে ফিরিয়ে নিতে পারেনি বা তৈরি করতে পারেনি।
বিশেষ করে অস্ত্র উদ্ধারের ক্ষেত্রে অনেক ঘাটতি রয়ে গেছে। এ ব্যাপারে কোনো জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ার ব্যাপারে আমরা কোনো কিছু দেখতে পাইনি। একই সঙ্গে যে ধরনের গোয়েন্দা তৎপরতা বা আগাম তথ্য থাকা উচিত, সেখানে অনেক ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে তারা আগাম তথ্য পাচ্ছে না। ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর তাদের তৎপরতা বেড়ে যাচ্ছে। কিন্তু আগাম তথ্য ছাড়া অনেক ক্ষেত্রে পরিস্থিতির ওপর সঠিক নিয়ন্ত্রণ রাখাটা দুরূহ হয়ে পড়ে।
তবে আমরা নির্বাচনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। নির্বাচন যেকোনো মূল্যে হতে হবে। নির্বাচন ছাড়া কোনোভাবেই পরিস্থিতির উন্নতি ঘটবে না। নির্বাচনই একমাত্র পন্থা, যার মাধ্যমে আমরা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক রূপান্তরের স্বপ্ন, যার জন্য হাজার হাজার মানুষ প্রাণ দিয়েছেন, সেই লক্ষ্যে আমরা পৌঁছাতে পারব। কাজেই নির্বাচন হতে হবে।
নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে, শান্তিপূর্ণভাবে করার জন্য সরকার ও নির্বাচন কমিশনের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা থাকতে হবে, যাতে পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে। এখন পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির যতটুকু অবনতি হয়েছে, সেটিকে প্রারম্ভিক পর্যায় বলা যায়। তবে এটা একটা অশনিসংকেত। উচিত হবে এখনই এটাকে সম্পূর্ণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা। পুরো পরিস্থিতির ওপর সঠিক নিয়ন্ত্রণ রাখা এবং যেকোনো ধরনের বিশৃঙ্খলার লক্ষণকে একেবারে নির্মূল করে দেওয়া।
আমরা আশা করব, আইনশৃঙ্খলার সঙ্গে যেসব দায়িত্বশীল ব্যক্তি আছেন, বিশেষ করে যাঁরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন, যাঁরা পুলিশসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন, তাঁরা নিজেদের সঠিক ভূমিকাটা রাখবেন। কোনোভাবেই যাতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি না ঘটে এবং দেশের মানুষ শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচনে ভোট দিতে পারেন, এটি অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উচিত হবে ঝুঁকিপূর্ণ প্রার্থীদের চিহ্নিত করা এবং তাঁদের জন্য এখন থেকেই বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা।
মেজর জেনারেল (অব.) আ ন ম মুনীরুজ্জামান, সভাপতি, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পিস অ্যান্ড সিকিউরিটি স্টাডিজ