সুনামগঞ্জের দিরাইয়ে জমি নিয়ে বিরোধে দু'পক্ষের সংঘর্ষে গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। এতে ১৮ জন গুলিবিদ্ধসহ অন্তত ৩০ জন আহত হয়েছেন। রোববার সকালে দিরাই উপজেলার তাড়ল ইউনিয়নের রণভূমি গ্রাম রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল। 

স্থানীয়রা জানায়, সকাল ১০টা থেকে রামদা, টেঁটা, চাইনিজ কুড়ালসহ নানা জাতের দেশীয় অস্ত্রসহ মুখোমুখি অবস্থান নেয় গ্রামের সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান লুৎফর রহমান চৌধুরী ও সাবেক ইউপি সদস্য আব্দুস সালামের লোকজন। সেই সঙ্গে ছিল একই গ্রামের প্রভাবশালী আশিক মিয়া ও শফিক চৌধুরীর লোকজন।

কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে দু'পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাঁধে। কিছুক্ষণ সংঘর্ষ চলার পর শোনা যায় গুলির আওয়াজ। পাইপগান হাতেও দেখা যায় কয়েকজনকে। এসময় গুলিবিদ্ধ হন আশিক মিয়ার পক্ষের অন্তত ১৮ জন। এছাড়াও ইটপাটকেল ও লাঠিসোটার আঘাতে উভয়পক্ষের আরও ১০-১২ জন আহত হন। 

গুলিবিদ্ধরা হলেন- মাদ্রাসা ছাত্র মুন্না ও বিজয় ইসলাম, আমিরুল, মোজ্জাকির, তুফায়েল মিয়া, মরম মিয়া, ছাতির মিয়া, মাসুম আহমেদ, জাহিদ আলম, জয় ইসলাম, শাকিবুল, পাবেল মিয়া, শাহরুখ খান, মো.

মোজাহিদ, শাহ আলম মিয়া, বারেক চৌধুরী রুবেল, টিপু মিয়া ও আব্দুস সাত্তার। এদের মধ্যে গুরুতর আহতদের দিরাই হাসপাতালে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়ার পর সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

দিরাই হাসপাতালের কর্তব্যরত মেডিকেল অফিসার পিন্টু দাস জানান, আহতদের শরীরে গুলির চিহ্ন পাওয়া গেছে। এক্সরে করার পর এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যাবে।

দিরাই থানার ওসি মুহাম্মদ আব্দুর রাজ্জাক বলেন, দুই পক্ষের মধ্যে আগে থেকেই বিরোধ ছিল। থানায় মামলাও আছে দুই পক্ষের লোকজনের। দুইদিন আগে সরকারি খাস জায়গার পাশে ব্যক্তিগত জায়গা বিক্রয় নিয়ে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। এর জেরে রোববার সংঘর্ষে জড়ান তারা। সংঘর্ষের পর পুরো গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে গেছে। পুলিশ অপরাধীদের ধরতে অভিযান চালাচ্ছে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স ঘর ষ আহত স ঘর ষ

এছাড়াও পড়ুন:

৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে

জুলাই ঘোষণাপত্র ও জুলাই সনদ বাস্তবায়ন এবং দ্রুত স্থায়ী বিধানে যুক্ত করার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় ৯ ঘণ্টা ধরে অবরোধ করে রেখেছেন ‘জুলাই যোদ্ধারা’। আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে জুলাই শহীদ পরিবার ও জুলাই যোদ্ধাদের (আহত) ব্যানারে তাঁরা এ ‘অবস্থান কর্মসূচি’ পালন করছেন।

রাজধানীর অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতে। এসব সড়কে দিনভর ব্যাপক যানজট তৈরি হয়। ফলে বৃষ্টির মধ্যে জীবনের তাগিদে ঘর থেকে বের হওয়া মানুষদের বেশ ভোগান্তি পোহাতে হয়। বাধ্য হয়ে বিকল্প পথে চলে গণপরিবহন, অনেক যাত্রীকে গন্তব্যে পৌঁছাতে দেখা গেছে হেঁটে হেঁটে। বিশেষ করে অফিসফেরত মানুষকে বেশি ভোগান্তিতে পড়তে হয়।

বেলা ১১টায় শাহবাগ মোড়ের সঙ্গে যুক্ত সব সড়কের মুখ আটকে দিয়ে সড়কের মাঝখানে অবস্থান নেন অবরোধকারীরা। এ সময় তাঁরা জুলাই সনদ দ্রুত বাস্তবায়নসহ বিভিন্ন দাবি জানান। অবরোধকারীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জুলাই যোদ্ধা সংসদ নামে একটি প্ল্যাটফর্ম ওই কর্মসূচির উদ্যোগ নেয়। এ সময় অবরোধকারীরা ‘জুলাই নিয়ে টালবাহানা, চলবে না চলবে না’, ‘জুলাইয়ের চেতনা দিতে হবে ঘোষণা’, ‘জুলাই সনদ দিতে হবে, দিতে হবে, দিতে হবে’ স্লোগান দিতে থাকেন।

বন্ধ হয়ে পড়ে শাহবাগ থেকে ফার্মগেট, সায়েন্স ল্যাব ও গুলিস্তানগামী প্রধান সড়কগুলোও। ফলে সকাল থেকেই এসব এলাকায় যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়। এসব সড়কে চলাচলকারী গণপরিবহনগুলো বিকল্প পথে চলাচল করে।

বেলা তিনটার দিকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদ–সংলগ্ন মূল সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড ও বাঁশ ব্যবহার করে সড়ক আটকে রেখেছেন অবরোধকারীরা। শাহবাগ থানার সামনের সড়কেও প্রতিবন্ধকতা তৈরি করেন তাঁরা।

বারডেম হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ষাটোর্ধ্ব নূরে আলম বলেন, ‘কেরানীগঞ্জে যাব। কোনো বাস পাচ্ছি না। রিকশায় যে কিছু দূর যাব, তারাও ভাড়া বেশি চাচ্ছে।’ একপর্যায়ে হেঁটেই রওনা দেন তিনি।

এক পথচারী ইমরান হোসেন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুই দিন পরপর সড়ক অবরোধ হয়। এর ভোগান্তি পোহাতে হয় আমাদের মতো সাধারণ মানুষদের।’

বেলা সাড়ে তিনটার দিকে শাহবাগ থানার সামনে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে বাগ্‌বিতণ্ডা হতে দেখা যায় মোটরবাইক আরোহীদের। শাহবাগ থানার সামনে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাকে বাধা দিলে চালক বলেন, ‘এত দাবিদাওয়া এত দিন আছিলো কই।’ তবে গণপরিবহন আটকে দেওয়া হলেও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যানবাহন এবং তাদের ব্যক্তিগত গাড়ি চলাচল করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স শুরু থেকেই চলাচল করতে দেখা গেছে।

অবরোধকারীদের দাবি

অবরোধকারীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে জুলাই শহীদ ও জুলাই যোদ্ধাদের স্বীকৃতি; শহীদ পরিবার ও আহতদের আজীবন সম্মান; চিকিৎসা, শিক্ষা ও কল্যাণের পূর্ণ নিশ্চয়তা প্রদান করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের প্রতি দায়িত্ব গ্রহণ করা; আহতদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন, কর্মসংস্থান ও কল্যাণমূলক ব্যয় রাষ্ট্রকে বহন করা; আহত ও শহীদ পরিবারের জন্য আজীবন সম্মানজনক ভাতা নিশ্চিত করা; শহীদ পরিবার ও আহতদের জন্য বিশেষ আইনি সুরক্ষা ও সহায়তাকেন্দ্র গঠন করা; শহীদ ও আহতদের ওপর সংগঠিত দমন-পীড়নের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে বিচারকাজ সম্পন্ন করা এবং একটি স্বাধীন সত্য ও ন্যায় কমিশন গঠন করা।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খালিদ মনসুর বলেন, সকাল থেকেই শাহবাগে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। শাহবাগ থানা-পুলিশ আলোচনার মাধ্যমে অবরোধকারীদের সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছেন।

তবে জুলাই যোদ্ধা সংসদের মুখ্য সংগঠক মাসুদ রানা জানান, তাঁদের আন্দোলন চলছে। সনদ ঘোষণা না আসা পর্যন্ত তাঁরা এখানেই থাকবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ
  • হতাহতের ছবি-ভিডিও সরাতে ও ছড়িয়ে পড়া বন্ধে পদক্ষেপ চেয়ে রিট, আদেশ ৩ আগস্ট
  • ৯ ঘণ্টা ধরে শাহবাগ অবরোধ, জনভোগান্তি চরমে
  • জুলাই সনদের দাবিতে শাহবাগ অবরোধ, যান চলাচল বন্ধ