কবিরের শখের সূর্যমুখী বাগান এখন বিনোদন কেন্দ্র
Published: 10th, March 2025 GMT
গাজীপুরের শ্রীপুরের কৃষি উদ্যোক্তা কবির হোসেন শখের বসেই চার বিঘা জমিতে সূর্যমুখী ফুলের একটি বাগান করেছিলেন। তার শখের সেই বাগানই এখন স্থানীয়দের কাছে বিনোদন কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।
জানা যায়, প্রতিদিন শত শত দর্শনার্থী দূর-দূরান্ত থেকে কবির হোসেনের সূর্যমুখী ফুলের বাগান দেখতে আসেন। বাগানের আশপাশে গড়ে উঠেছে বিভিন্ন খাদ্য পণ্যের অস্থায়ী দোকান। ফটোসেশনের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে কারুকাজের বাহারি গেট।
কবির হোসেন বলেন, ‘‘শখের বশেই সূর্যমুখী ফুলের চাষ শুরু করেছিলাম। গত ফেব্রুয়ারিতে ফুল ফোটা শুরু করলে দর্শনার্থীর আনাগোনা শুরু হয়। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে ভিড় বাড়তে থাকে। আগামী বছর আরো বেশি জমিতে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করব।’’
সূর্যমুখী বাগান ঘুরতে আসা সুমাইয়া নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘‘বাগানটা দেখতে খুব সুন্দর। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সূর্যমুখী বাগানের কথা জেনে এসেছি। খুব ভালো লাগছে। এছাড়া, বাগানে প্রবেশে কোনো টাকা লাগে না। এটা অবশ্যই বাগান মালিকের দারুণ একটি উদ্যোগ।’’
মুহিবউল্লাহ নামের আরেকজন বলেন, ‘‘সয়াবিনের চেয়ে সূর্যমুখীর তেল বেশি স্বাস্থ্যসম্মত। কবির হোসেনের বাগান দেখে অন্য কৃষকরাও সূর্যমুখী ফুল চাষে উদ্বুদ্ধ হবেন বলে আশা করি। এতে দর্শনার্থীদের জন্য যেমন বিনোদন কেন্দ্র বাড়বে, তেমনি কৃষকরাও আর্থিকভাবে লাভবান হবেন।’’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বন্যা বলেন, ‘‘উপজেলার বরমী ইউনিয়নের কায়েতপাড়া গ্রামে কবির হোসেন সূর্যমুখী ফুলের বাগান করেছেন। তার বাগান করতে উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে বিনামূল্যে বীজ, সার, কীটনাশক দিয়ে সহযোগিতা করা হয়েছে।’’
তিনি আরো বলেন, ‘‘সূর্যমুখীর তেল ভোগ্যপণ্য হিসেবে ব্যবহার করা য়ায়। কবির হোসেনের বাগান দেখে অন্য কৃষকরা আগ্রহী হলে ভোজ্যতেলের আমদানি নির্ভরতা কমবে এবং আমরা পুষ্টিসমৃদ্ধ তেল পাব।’’
ঢাকা/রাজীব
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।