Prothomalo:
2025-07-31@07:27:55 GMT

সামুদ জাতির উট হত্যা

Published: 11th, March 2025 GMT

আজ খতমে তারাবিহতে পবিত্র কোরআনের সুরা হিজর ও সুরা নাহল তিলাওয়াত করা হবে। পড়া হবে ১৪তম পারা। এই অংশে খুঁটিহীন আকাশ নির্মাণ, আসমানে হরেক রকম গ্রহ-নক্ষত্র, আসমানের সুরক্ষা, জমিন, জমিনের পেটে পাহাড় আর সব ধরনের বৃক্ষ, লতাগুল্ম, বন, দিগন্ত বিস্তৃত ফসলের মাঠ, মানুষের জীবিকার উপকরণ, অবারিত বাতাস, উড়ে বেড়ানো মেঘমালা, পানি পানে সৃষ্টির তৃষ্ণা মেটানো, আল্লাহর নিয়ন্ত্রণে জীবন-মৃত্যু, তাঁর কুদরত ও একত্ববাদ, বান্দার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ, পশুপাখির জীবনাচরণে মানুষের শিক্ষা, কন্যাসন্তান আল্লাহর নিয়ামত, মানুষ সৃষ্টির ইতিকথা, জান্নাত-জাহান্নাম, বিশ্বাসের দৃঢ়তা, কিয়ামত দিবসে কাফেরদের আফসোস, শয়তানের ধোঁকা, আল্লাহর নিয়ামত ভুলে যাওয়া, ইবরাহিম (আ.

)-এর সন্তান লাভ, লুত (আ.) ও তাঁর জনপদের কাহিনি এবং কাফেরদের প্রশ্নের খণ্ডনসহ অনেক কথার বিবরণ রয়েছে।

আরও পড়ুনএক শ বছর পর জীবিত১৮ মার্চ ২০২৪সামুদ জাতির উট হত্যা

৯৯ আয়াতবিশিষ্ট সুরা হিজর মক্কায় অবতীর্ণ। কোরআন কারিমের ১৫তম সুরা এটি। এ সুরায় হিজরবাসীদের কথা আলোচনা হওয়ায় সুরার নাম হিজর রাখা হয়েছে।

 হিজাজ ও সিরিয়ার মধ্যস্থলে ‘ওয়াদিউল কোরা’ প্রান্তরে তাদের বসতি ছিল। বর্তমানে তা ‘ফাজ্জুহ নাকাহ’ নামে প্রসিদ্ধ। তারা ছিল অর্থশালী ও শক্তিশালী। তারা বড় বড় প্রাসাদ ও পাহাড় কেটে দালানকোঠা নির্মাণ করত। তাদের ছিল সবুজ-শ্যামল উদ্যান। সোনা-রুপার প্রাচুর্যে মোড়ানো জীবন। কিন্তু তারা এক আল্লাহতে বিশ্বাসী ছিল না। তাদের কাছে নবী হয়ে এলেন সালেহ (আ.)। তিনি তাদের আল্লাহর পথে ডাকলেন। দুর্বল ও নগণ্য গুটিকয়জন ছাড়া কেউ তাঁর ডাকে সাড়া দিল না। তারা তাদের প্রাসাদ, অর্থবৈভব ও বিলাসসামগ্রী নিয়ে গর্ব-অহংকার করতে লাগল। তারা সালেহ (আ.)-এর কাছে নবী হওয়ার দলিল চাইল। তারা দাবি করল, আপনি যদি বাস্তবিকই আল্লাহর রাসুল হন, তাহলে আমাদের ‘কাতেবা’ নামের পাথরময় পাহাড়ের ভেতর থেকে একটি ১০ মাসের গর্ভবতী, সবল ও স্বাস্থ্যবতী উষ্ট্রী বের করে দেখান।

সালেহ (আ.) আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করলেন। আল্লাহ তাঁর ডাকে সাড়া দিলেন। গর্ভবতী ও দুগ্ধবতী উট বেরিয়ে এল পাথরময় পাহাড় থেকে। এ বিস্ময়কর মোজেজা দেখে কিছু লোক তৎক্ষণাৎ ইমান আনলেও অনেকে বিরত থাকল। এই উট হত্যা করতে তাদের নিষেধ করা হয়েছিল। তারা অবাধ্য হয় এবং উটটি হত্যা করে।

 এক শনিবার প্রভাতের সময় গগনবিদারী গর্জন, মুহুর্মুহু বিজলির চমক আর ভয়াবহ ভূমিকম্পে তাদের প্রাণবায়ু বেরিয়ে গেল। তারা নিজ নিজ ঘরে মুখ থুবড়ে পড়ে রইল। পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেল সামুদ জাতি। এ সুরার ৮০ থেকে ৮৪ নম্বর আয়াতে এ ঘটনার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা রয়েছে।

আরও পড়ুনবাদশাহ ও এক বুদ্ধিমান বালকের ঘটনা১১ মার্চ ২০২৪জাহান্নামের ৭ দরজা

সুরা হিজরের ৪৩ নম্বর আয়াতে জাহান্নামের সাতটি দরজার কথা উল্লেখ হয়েছে। তাফসিরের বিভিন্ন কিতাবে সে নাম পাওয়া যায়। যেমন: ১. জাহান্নাম (আগুনের গর্ত), ২. সায়ির (উজ্জ্বল অগ্নি), ৩. জাহিম (জ্বলন্ত আগুন), ৪. হুতামা (চূর্ণবিচূর্ণকারী), ৫. হাবিয়া (অতল গহ্বর), ৬. লাজা (অতি উত্তপ্ত) এবং ৭. সাকার (যা ঝলসিয়ে ও গলিয়ে দেয়)।

 ইবরাহিম (আ.)-এর মেহমান ও কওমে লুতের কাহিনি

সুরা হিজরের ৫৫ থেকে ৭৪ নম্বর আয়াতে ইবরাহিমের কাছে মেহমানের বেশে ফেরেশতাদের আগমন, তাঁকে সন্তানের সুসংবাদ প্রদান ও তাদের সঙ্গে লুত (আ.)-এর জাতির আচরণ এবং তাদের ধ্বংসের ঘটনার বর্ণনা রয়েছে।

হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর বয়স তখন ১২০ বছর। তাঁর স্ত্রীরও বেশ বয়স সে সময়। দুজন ফেরেশতা এলেন তাঁর কাছে মানুষের বেশে। পুত্রসন্তানের সুখবর দিলেন। আনন্দিত হলেন ইবরাহিম। তাঁদের মেহমানদারি করলেন।

 নবীর থেকে বিদায় নিয়ে তাঁরা গেলেন লুত (আ.)-এর কাছে। তাঁর জাতির লোকেরা সুন্দর যুবক দুজনকে দেখে কু-বাসনার কল্পনায় আনন্দ-উল্লাস করতে লাগল। লুত (আ.) তাদের বোঝাতে চেষ্টা করলেন। কন্যাদের কথা বললেন। আল্লাহর ভয় দেখালেন। কাজ হলো না। তিনি আল্লাহর আদেশে পরিবার-পরিজন নিয়ে শহর ছাড়লেন। আল্লাহ তাদের জনপদ উল্টে দিলেন। তাদের ওপর বর্ষণ করলেন কঙ্করের প্রস্তর।

আরও পড়ুনঅবাধ্যতার শাস্তি১৩ মার্চ ২০২৪সুরা নাহলে মৌমাছির জীবন

কোরআন মজিদের ১৬তম সুরা নাহল মক্কায় অবতীর্ণ। এ সুরার আয়াতের সংখ্যা ১২৮। নাহল অর্থ মৌমাছি। মৌমাছির জীবনচক্র ও মধুর আলোচনা রয়েছে এ সুরায়, ফলে নাম রাখা হয়েছে সুরা নাহল।

এই সুরার ৬৮ ও ৬৯ নম্বর আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘তোমার প্রতিপালক মৌমাছির অন্তরে ইঙ্গিতে এ নির্দেশ দিয়েছেন, ঘর তৈরি করো পাহাড়ে, বৃক্ষে ও মানুষ যে ঘর নির্মাণ করে তাতে। এরপর প্রতিটি ফল থেকে কিছু কিছু আহার করো আর তোমার প্রতিপালক তোমার জন্য যে পথ সহজ করে দিয়েছেন, সে পথ অনুসরণ করো। এর উদর থেকে নির্গত হয় বিবিধ বর্ণের পানীয়। যাতে মানুষের জন্য রয়েছে আরোগ্য। অবশ্যই এতে রয়েছে নিদর্শন চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্য।’

আল্লাহর বিস্ময়কর ও অপূর্ব সৃষ্টি মৌমাছি। মৌমাছি সাধারণ মাছির মতোই আকৃতিতে ছোট। মৌমাছির দিকে তাকালে বিস্ময় না হয়ে পারা যায়। মৌমাছির সুশৃঙ্খল সংঘবদ্ধ জীবন, দক্ষ নেতৃত্ব, একনিষ্ঠ আনুগত্য, কর্মদক্ষতা, উদ্যমী মনোভাব, চাক বানানো, বনবনানি ও ফসলি খেত থেকে ফোঁটা ফোঁটা করে মধু সংগ্রহসহ সবকিছুই মুগ্ধ হওয়ার মতোই ব্যাপার। তাদের তৈরিকৃত বাসায় ২০ থেকে ৩০ হাজার কক্ষ থাকে, যেগুলো মধু সংগ্রহের পর তা রাখার জন্য স্টোররুম হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া বাচ্চাদের জন্য থাকার আলাদা ঘর আছে। আছে ময়লার রাখার গুদামঘর। (তাইসিরুল কোরআন, খণ্ড: ২, পৃষ্ঠা: ৬৫)

আরও পড়ুনগাভির গল্প১৭ মার্চ ২০২৪

রাসুলুল্লাহ (সা.) মধু পছন্দ করতেন। মধু অসংখ্য রোগের ওষুধ। এটি বেহেশতের পানীয় বিশেষ। মহানবী (সা.) মধু খেতে খুব ভালোবাসতেন। (শামায়েলে তিরমিজি, ১২১)

আদেশ ও নিষেধ নিয়ে ৬ নির্দেশ

সুরা নাহলের ৯০ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা তিনটি বিষয়ের আদেশ এবং তিনটি বিষয় থেকে নিষেধ করেছেন। আদেশ তিনটি হলো ন্যায়পরায়ণতা, সদাচার ও নিকটাত্মীয়দের সহায়তা প্রদান। নিষেধ তিনটি হলো অশ্লীল কাজ, অসংগত কাজ ও সীমা লঙ্ঘনমূলক কাজ।

রায়হান রাশেদ: আলেম ও লেখক

আরও পড়ুনহাতির গল্প১৬ মার্চ ২০২৪

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইবর হ ম র আয় ত র জন য আল ল হ করল ন ক রআন

এছাড়াও পড়ুন:

মাঝরাতে সরকারি কর্মকাণ্ড কতটা স্বাভাবিক

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে বোধকরি একটা মহাকাব্য লিখে ফেলা সম্ভব। তাঁরা যেভাবে গভীর কিংবা শেষ রাতে নানা সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন, ফেসবুকে বার্তা দিচ্ছেন; তাতে তো মনে হচ্ছে সরকারের কর্তা-ব্যক্তিরা দিনে কাজ না করে রাতেই মনে হয় বেশি কাজ করেন! কয়েকটা উদাহরণ বরং দেওয়া যাক।

মাস কয়েক আগে যখন দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অস্বাভাবিক ভাবে খারাপ হয়ে গেল, আমাদের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা  মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী রাত তিনটার সময় সংবাদ সম্মেলন ডাকলেন! বাংলাদেশের ইতিহাসে রাত তিনটার সময় আর কোনো মন্ত্রী এ ধরনের সম্মেলনের আয়োজন করেছেন কি না, আমার অন্তত জানা নেই। আমরা সবাই ভাবলাম, তিনি হয়তো বড় কোনো ঘোষণা দেবেন। এরপর কী দেখলাম?

তিনি খুব সাধারণভাবে বললেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য সরকার নিজেদের উদ্যোগকে কঠিন ও শক্তিশালী করার চেষ্টা করবে।

সপ্তাহখানেক আগে হঠাৎ আকাশ থেকে একটি  যুদ্ধবিমান ঢাকা শহরের উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল বিল্ডিংয়ে ভেঙে পড়ল। আগুনে দগ্ধ শিশুরা ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে নিজেরা উঠে এসে হাঁটছে; এমন দৃশ্যও আমাদের দেখতে হয়েছে। যে দৃশ্য দেখলে যে কেউ হয়তো ট্রমায় চলে যাবে। ওই স্কুলের এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা হয়তো সরাসরি সেই দৃশ্য দেখেছে। খুব স্বাভাবিকভাবেই চলতে থাকে—এইচএসসি পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়া সময়ের দাবি ছিল। এ সিদ্ধান্ত সরকার দিনের বেলাতেই নিতে পারত। অথচ আমরা কী দেখলাম?

সরকারের পক্ষ থেকে  রাত তিনটার দিকে ফেসবুকে এসে ঘোষণা করা হলো, পরের দিনের এইচএসসি পরীক্ষা পেছানো হয়েছে।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।

দিন দু-এক আগে এ সরকারকেই যাঁরা চাকরি দিয়েছেন, এ কথা বলছি কারণ, সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নিজেই বলেছিলেন, ‘ছাত্ররা আমার নিয়োগকর্তা’—সেই ছাত্রদের সংগঠন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক মুখপাত্র উমামা ফাতেমা গভীর রাতে ফেসবুক এসে লাইভ করেন প্রায় আড়াই ঘণ্টা।

এই আড়াই ঘণ্টার লাইভে মূল যে বক্তব্য তিনি তুলে ধরেছেন,  সারমর্ম করলে দাঁড়ায়: বৈষম্যবিরোধী প্ল্যাটফর্ম মানি মেকিং মেশিনে পরিণত হয়েছে এবং অনেকেই এর সঙ্গে জড়িত। তিনি এটাও বলেছেন, এই সংগঠনের সব সিদ্ধান্ত হেয়ার রোড থেকে আসে। অর্থাৎ উপদেষ্টারা যেখানে থাকেন।

এদিকে সোমবার দিবাগত রাত তিনটার দিকে উপদেষ্টা মাহফুজ আলম একটা ফেসবুক পোস্ট করেছেন। যদিও ফেসবুক স্ট্যাটাসটি তিনি বেশ কয়েকবার এডিট করেছেন। তবে প্রথমে যা লিখেছেন, সেটা হচ্ছে, নতুন একটি দলের মহারথীদের কয়েকজন দুর্নীতিতে জড়িত। এ ছাড়া তিনি এটাও বলেছেন, একটা সার্কেলের সবাই দুর্নীতিগ্রস্ত!

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে তাঁদের কেন প্রশ্রয় দেওয়া হলো? আপনারা যদি জানেনই কিছু মানুষ দুর্নীতিগ্রস্ত। তাহলে সরকারের অংশ হিসেবে আপনাদের তো দায়িত্ব তাঁদের আইনের আওতায় আনা। সেটা না করে ফেসবুকে পোস্ট করতে হচ্ছে কেন? তা–ও আবার রাত তিনটায়!

এই সরকার কি মাঝরাতের ফেসবুকীয় সরকারে পরিণত হয়েছে? পরীক্ষা পেছানোর মতো সিদ্ধান্ত যখন মাঝরাতে নিতে হয়, সংবাদ সম্মেলন যখন রাত তিনটায় করতে হয়, তখন তো প্রশ্ন জাগতেই পারে। কারণ এটা তো স্বাভাবিক কোনো বিষয় নয়।

যখনই আপনি সরকারের অস্বাভাবিক আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করবেন কিংবা আপনার মনে এই প্রশ্ন জাগবে; তখনই কিন্তু রাষ্ট্র ভালো আছে কি না; সেই প্রশ্নও সামনে আসবে।
রাষ্ট্র যদি ভালো না থাকে তবে তার মাত্রা কতটুকু, সেটা নির্ণয় এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া এখন জরুরি হয়ে পড়েছে।

আমিনুল ইসলাম প্রভাষক, এস্তোনিয়ান এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ইউনিভার্সিটি
[email protected]

সম্পর্কিত নিবন্ধ