শিক্ষার্থীর ওপর হামলার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিবকে বহিষ্কারের দাবি
Published: 11th, March 2025 GMT
সাধারণ শিক্ষার্থীর ওপর হামলার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলা শাখার সদস্যসচিব আল মিজান মাহিনকে বহিষ্কারের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। আজ মঙ্গলবার দুপুরে কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবে সাধারণ শিক্ষার্থীর ব্যানারে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
‘জুলাই অভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী’ রুবেল মিয়ার ওপর ৯ মার্চ (রোববার) বিকেলে রাজারহাট উপজেলা পরিষদ চত্বরে এ হামলা হয় বলে সংবাদ সম্মেলন থেকে অভিযোগ করা হয়। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজারহাট উপজেলা শাখার সদস্যসচিব আল মিজান।
সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীদের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাইদুর রহমান নামের এক শিক্ষার্থী। তিনি বলেন, আল মিজান মাহিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজারহাট শাখার আহ্বায়ক পদপ্রত্যাশী হলেও সদস্যসচিব পদ পেয়েছিলেন। এই ক্ষোভ থেকে ঘোষিত কমিটির আহ্বায়ক তোফায়েল আহমেদকে নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে বিভিন্ন মিথ্যা প্রোপাগান্ডা ছড়ান। এ নিয়ে অন্য শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদ করলে তাঁদের বিভিন্ন হুমকি দেন। এমনকি তিনি কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের নিয়েও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, এসব নিয়ে জুলাই আন্দোলনের সম্মুখসারির যোদ্ধা রুবেল মিয়া প্রতিবাদ করায় ৯ মার্চ বিকেলে রাজারহাট উপজেলা পরিষদ চত্বরে রুবেলের ওপর হামলা করেন মাহিন ও তাঁর সহযোগীরা। রুবেলের মাথায় ও ঘাড়ে কিল–ঘুষি মেরে তাঁকে আহত করেন। পরে স্থানীয় লোকজন তাঁকে উদ্ধার করে রাজারহাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
এ ঘটনায় সোমবার (১০ মার্চ) রাজারহাট থানায় লিখিত অভিযোগ করা হয়। অন্যদিকে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন কুড়িগ্রাম জেলা শাখায়ও তাঁর বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, এর আগেও মাহিন বিভিন্ন অরাজকতা করলে তাঁর সহকর্মী আরিফুল প্রতিবাদ জানান। এ কারণে আরিফুলকে মারধর করেন মাহিন। এ নিয়ে থানায় মামলা হয়। দায়িত্বশীলরা মাহিনকে বহিষ্কার করেন। পরবর্তী সময়ে মাহিন নিজের প্রভাব খাটিয়ে পুনরায় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যুক্ত হন।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজারহাট উপজেলা শাখার যুগ্ম সদস্যসচিব জিসান ইসলাম, হামলার শিকার রুবেল মিয়া, শিক্ষার্থী আসিফ মিয়া, রাকিবুল হাসানসহ অন্য শিক্ষার্থীরা।
অভিযোগের বিষয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রাজারহাট উপজেলা শাখার সদস্যসচিব আল মিজান মাহিন বলেন, সোশ্যাল মিডিয়ায় রুবেল মিয়ার পোস্ট নিয়ে কথা–কাটাকাটি হলেও কোনো প্রকার সংঘাত হয়নি। তিনি এটিকে ভিন্ন খাতে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। এর রেশ ধরে মাহিনের বাড়িতেও তাঁরা হামলা হয়েছেন। যা রাজারহাট থানার ওসি ও ইউএনও অবগত আছেন। বিষয়টি জেলা কমিটি ও কেন্দ্রীয় কমিটি অবগত রয়েছে।
এ ব্যাপারে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কুড়িগ্রাম জেলা শাখার আহ্বায়ক আবদুল আজিজ বলেন, ‘মাহিনের বিষয়ে অভিযোগ পেয়েছি। আমাদের তদন্ত সেল তদন্ত করে প্রতিবেদন দেবে। সে অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র সদস যসচ ব আল ম জ ন র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।