Prothomalo:
2025-06-16@08:50:17 GMT

  যেমন ছিল মহানবীর (সা.) সাহরি

Published: 12th, March 2025 GMT

নবীজি (সা.) অত্যন্ত আগ্রহ ও ব্যাকুলতার সঙ্গে সাহরি গ্রহণ করতেন। জাঁকজমকহীন স্বাভাবিক সাহরি খাওয়া তার অভ্যাস ছিল। তিনি ভেজা খেজুর দিয়ে সাহরি করা পছন্দ করতেন। কখনো খেজুরের সঙ্গে তিনি দুধও নিতেন। (হাকাযা কানান নাবিয়্যু সা. ফি রমাদান, ৩৫)

আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) সাহরির সময়ে আমাকে বললেন, ‘আনাস, আমি রোজা রাখতে চাই, আমাকে কিছু খাবার দাও।’ আমি তার সামনে শুকনা খেজুর এবং একটি পাত্রে পানি উপস্থিত করলাম। বেলালের (প্রথম) আজানের পর তিনি সাহরি গ্রহণ করেছিলেন। (নাসায়ি, হাদিস: ২১৬৭)

আবু হোরাইরা (রা.

) থেকে বর্ণনা আছে, নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মুমিনের উত্তম সাহরি শুকনো খেজুর।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ২৩৪৫)

 রাসুল (সা.) সাহরি করতেন অনেক দেরিতে—সুবহে সাদিকের কিছু পূর্বে সাহরি সমাপ্ত করতেন। রমজানে কখনও ‘কিয়ামুল লাইল’র সময় এমনও হতো যে, উপস্থিত সাহাবিগণ ভাবতেন, সাহরি খাবারের সময় বুঝি আর পাওয়া যাবে না। এমনও হয়েছে, বেলাল (রা.) ফজরের আজান দেওয়ার পূর্ব লগ্নেও দেখছেন তিনি খাচ্ছেন।

আরও পড়ুননবীজি (সা.)-এর হাসি২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সুতরাং, সাহরিতে নবীজির আমল ছিল শেষ সময়ে খাওয়া। তিনি এর কারণও বলেছেন। জায়েদ বিন সাবেত (রা.) বলেন, ‘আমরা নবীজির (সা.) সঙ্গে সাহরি খেলাম, এরপর তিনি নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। আমি বললাম, সাহরি ও আজানের মধ্যবর্তী সময়ের দূরত্ব কতটা? তিনি বললেন, পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত পরিমাণ। বিলম্বে সাহরি গ্রহণ রোজার জন্য সহজ, রোজাদারের জন্য প্রশান্তিকর; এবং বিলম্বে সাহরি গ্রহণের কারণে ফজরের নামাজ ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না।’ (বুখারি, হাদিস: ১৯২১)

আরও পড়ুন নবীজি (সা.)-এর কান্না২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সাধারণত ৫০টি মধ্যম দৈর্ঘ্যের আয়াত পড়তে ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। তাই প্রতীয়মান হয় যে, তিনি ও সাহাবায়ে কেরাম ফজরের নামাজের এইটুকু সময় পূর্বে সাহরি খাওয়া শেষ করতেন। সাহরিতে দেরি করা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘নবুওয়াতের ৭০ ভাগের এক ভাগ হলো দেরিতে সাহরি খাওয়া এবং ইফতারে জলদি করা। ইফতারের নির্দিষ্ট সময় হলে ইচ্ছা করে বিলম্ব না করা।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, ৪/২৩২)

অন্য হাদিসে আছে, তিনি বলেছেন, ‘সকল নবীরই আদর্শ ছিল ইফতারে তাড়াতাড়ি এবং সাহরিতে দেরি করা।’ ( মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ৩/১৩; নাসবুর রায়াহ, ২/৪৭০)

আরও পড়ুননবীজি (সা.)-এর অন্তিম সময়২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: করত ন গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।

সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।

জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’

ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।

জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।

জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ