নবীজি (সা.) অত্যন্ত আগ্রহ ও ব্যাকুলতার সঙ্গে সাহরি গ্রহণ করতেন। জাঁকজমকহীন স্বাভাবিক সাহরি খাওয়া তার অভ্যাস ছিল। তিনি ভেজা খেজুর দিয়ে সাহরি করা পছন্দ করতেন। কখনো খেজুরের সঙ্গে তিনি দুধও নিতেন। (হাকাযা কানান নাবিয়্যু সা. ফি রমাদান, ৩৫)
আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসুল (সা.) সাহরির সময়ে আমাকে বললেন, ‘আনাস, আমি রোজা রাখতে চাই, আমাকে কিছু খাবার দাও।’ আমি তার সামনে শুকনা খেজুর এবং একটি পাত্রে পানি উপস্থিত করলাম। বেলালের (প্রথম) আজানের পর তিনি সাহরি গ্রহণ করেছিলেন। (নাসায়ি, হাদিস: ২১৬৭)
আবু হোরাইরা (রা.
রাসুল (সা.) সাহরি করতেন অনেক দেরিতে—সুবহে সাদিকের কিছু পূর্বে সাহরি সমাপ্ত করতেন। রমজানে কখনও ‘কিয়ামুল লাইল’র সময় এমনও হতো যে, উপস্থিত সাহাবিগণ ভাবতেন, সাহরি খাবারের সময় বুঝি আর পাওয়া যাবে না। এমনও হয়েছে, বেলাল (রা.) ফজরের আজান দেওয়ার পূর্ব লগ্নেও দেখছেন তিনি খাচ্ছেন।
আরও পড়ুননবীজি (সা.)-এর হাসি২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫সুতরাং, সাহরিতে নবীজির আমল ছিল শেষ সময়ে খাওয়া। তিনি এর কারণও বলেছেন। জায়েদ বিন সাবেত (রা.) বলেন, ‘আমরা নবীজির (সা.) সঙ্গে সাহরি খেলাম, এরপর তিনি নামাজের জন্য দাঁড়িয়ে গেলেন। আমি বললাম, সাহরি ও আজানের মধ্যবর্তী সময়ের দূরত্ব কতটা? তিনি বললেন, পঞ্চাশ আয়াত তিলাওয়াত পরিমাণ। বিলম্বে সাহরি গ্রহণ রোজার জন্য সহজ, রোজাদারের জন্য প্রশান্তিকর; এবং বিলম্বে সাহরি গ্রহণের কারণে ফজরের নামাজ ছুটে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে না।’ (বুখারি, হাদিস: ১৯২১)
আরও পড়ুন নবীজি (সা.)-এর কান্না২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫সাধারণত ৫০টি মধ্যম দৈর্ঘ্যের আয়াত পড়তে ১৫-২০ মিনিট সময় লাগে। তাই প্রতীয়মান হয় যে, তিনি ও সাহাবায়ে কেরাম ফজরের নামাজের এইটুকু সময় পূর্বে সাহরি খাওয়া শেষ করতেন। সাহরিতে দেরি করা সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘নবুওয়াতের ৭০ ভাগের এক ভাগ হলো দেরিতে সাহরি খাওয়া এবং ইফতারে জলদি করা। ইফতারের নির্দিষ্ট সময় হলে ইচ্ছা করে বিলম্ব না করা।’ (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, ৪/২৩২)
অন্য হাদিসে আছে, তিনি বলেছেন, ‘সকল নবীরই আদর্শ ছিল ইফতারে তাড়াতাড়ি এবং সাহরিতে দেরি করা।’ ( মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা, ৩/১৩; নাসবুর রায়াহ, ২/৪৭০)
আরও পড়ুননবীজি (সা.)-এর অন্তিম সময়২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।