চট্টগ্রামের মিরসরাই উপজেলার বড়তাকিয়া পূর্ব পোলমোগরা এলাকায় তুচ্ছ ঘটনায় ইফতেখার পলাশ নামে এক অভিনয়শিল্পী ও সংস্কৃতিকর্মীকে হেনস্তার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় গতকাল বুধবার মিরসরাইয়ের সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন তিনি। 

অভিযোগে পলাশ উল্লেখ করেছেন, গত শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে নিজ বাড়ির আঙিনায় তাঁর পরিবারের এক সদস্য প্রতিবেশীদের সঙ্গে পারিবারিক বিষয়ে আলাপ করছিলেন। তাদের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় জামায়াত অনুসারী স্থানীয় মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর ওই কথোপকথনে রমজানের পবিত্রতা বিঘ্ন হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। তাঁর কথা না মানলে গাছের সঙ্গে বেঁধে রাখবেন বলে হুমকিও দেন। ওই সময় পলাশ তাঁকে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ না করতে এবং বয়োজ্যেষ্ঠদের সঙ্গে সৌজন্যতা বজায় রাখতে বলেন। তবে জাহাঙ্গীর আরও উদ্যত হয়ে একপর্যায়ে তাঁকে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে আখ্যা দেন। মারধর করতে উদ্যত হওয়ার পাশাপাশি গালিও দেন। এ ছাড়া কল করে আরও ১০-১৫ জন উচ্ছৃঙ্খল যুবককে ডেকে আনেন। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়, বিএনপি কর্মী পরিচয় দেওয়া স্থানীয় মাহমুদুল হক রকি, জাহাঙ্গীরের ছোট ভাই মোহাম্মদ শাহাদাতের নেতৃত্বে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ওই দলটি এসে পলাশকে ঘিরে ধরে। তারা ‘সুশীল রাখব না, সুশীলের আস্তানা রাখব না’, ‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর রাখব না’ বলতে বলতে পলাশকে মারতে উদ্যত হয়। পরে স্থানীয়রা পলাশকে সরিয়ে নেন। 

ইফতেখার পলাশ ও তাঁর পরিবার আশঙ্কা করছে, যে কোন সময় তাদের বাড়িতে এবং পরিবারের সদস্যদের ওপর ‘মব জাস্টিস’ এর নামে সন্ত্রাসী আক্রমণ হতে পারে। উল্লেখ্য, ইফতেখার পলাশ অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক সংস্কার কর্মসূচির পরামর্শক হিসেবে কর্মরত। তাঁর আশঙ্কা, যে কোনো সময় তাদের বাড়িতে অথবা পরিবারের সদস্যদের ওপর ‘মব’ তৈরি করে হামলা হতে পারে। 

স্থানীয় কয়েকজন জানান, ৫ আগস্টের পর গ্রামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কারও নিয়ন্ত্রণে নেই। এই সুযোগে ব্যক্তিগত, সামাজিক ও পারিবারিক ইস্যুতেও রাজনীতি টেনে এনে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে। সুযোগ পেলেই আওয়ামী লীগ ট্যাগ দিয়ে সাধারণ মানুষকে হয়রানি করা হচ্ছে।

তারা আরও জানান, আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শান্তিশৃঙ্খলা নষ্ট করার অভিযোগে মামলা হওয়ার পর জাহাঙ্গীর ও রকি দেশত্যাগ করে। সম্প্রতি দু’জনই মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফিরে ভিন্ন মতাবলম্বীদের বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেওয়া, উচ্ছেদের হুমকিসহ সাধারণ মানুষকে অপদস্থ করে বেড়াচ্ছেন। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পর ব র আওয় ম

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ