শিশু সন্তানকে জিম্মি করে ধর্ষণের চেষ্টা, থানায় অভিযোগ
Published: 13th, March 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে শিশু সন্তানকে জিম্মি করে এক গৃহবধুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগ পাওয়া গেছে। বুধবার (১২ মার্চ) সন্ধ্যায় সিদ্ধিরগঞ্জের জালকুড়ি উত্তরপাড়া পানি টাংকি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগি ওই গৃহবধুর স্বামী বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, অভিযুক্ত আরিফ (৩২) ও ডালিম (৩৫) জালকুড়ি উত্তর পাড়া এলাকায় বাদীর ভাড়া বাসার প্রতিবেশী। আরেক অভিযুক্ত বেলাল (৩৫) আরিফ ও ডালিমের সহকর্মী।
এক বাড়িতে ভাড়া থাকার সুবাদে অভিযোগের বাদীর সাথে অভিযুক্ত আরিফের পরিচয়। পরিচয়ের সূত্র ধরে গত বুধবার (১২ মার্চ) অভিযুক্ত আরিফ বিকেল আনুমানিক পৌনে ছয়টায় ইফতারি দেওয়ার জন্য বাদির ঘরের দরজায় টোকা দেয়।
এসময় বাদির স্ত্রী দরজা খুলে ইফতারি নিয়ে আবার দরজা লাগিয়ে দেয়। ইফতারির পর পুনরায় আবার আরিফ দরজায় নক করলে বাদীর স্ত্রী দরজা খুলে দিলে অভিযুক্ত তার তিন মাসের শিশু সন্তানকে কোলে নেয়ার বাহানায় ঘরে প্রবেশ করে এবং দরজা লাগিয়ে দেয়।
এসময় ওই গৃহবধুকে অভিযুক্ত আরিফ জোর পূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়।
একপর্যায়ে ভুক্তভোগী গৃহবধুর ডাক চিৎকার শুরু করলে তার শিশু সন্তানকে ছিনিয়ে নিয়ে অভিযুক্ত আরিফ তার ঘরে চলে যায়।
অভিযোগে উল্লেখ করা, এসময় শিশু সন্তানকে সহিসালামতে ফেরত পেতে হলে ওই গৃবধুকে আরিফের সাথে অনৈতিককর্মকান্ডে জড়াতে হবে বলে হুমকি ধমকি দেয়।
এঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে ওই গৃবধু তার স্বামীকে ফোন করে বিস্তারিত ঘটনা জানায়। পরে ওই গৃহবধুর স্বামী দ্রুত তার এক সহকর্মীকে নিয়ে বাড়িতে আসে এবং অভিযুক্ত আরিফের ঘর থেকে তার শিশু সন্তানকে উদ্ধার করে।
অভিযোগে আরো উল্লেখ করা হয়, শিশুটিকে তার বাবা উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়ার পর অভিযুক্ত আরিফ ডালিম ও বেলালসহ আরো দশ থেকে বারোজন ব্যাক্তিকে ফোন করে নিয়ে আসে এবং ভুক্তভোগী গৃহবধু এবং তার স্বামীকে আইনগত ব্যাবস্থা গ্রহণ না করার জন্য নানা ধরনের হুমকি ধামকি প্রদর্শন করে।
এ বিষয়ে সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শাহাদাৎ হোসেন জানান, এক গৃহবধুকে ধর্ষণের চেষ্টার অভিযোগে তার স্বামী বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন থানায়। আমরা বিষয়টি তদন্ত করে দেখছি। এ বিষয়ে পরবর্তী আইনগত কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স দ ধ রগঞ জ ন র য়ণগঞ জ স দ ধ রগঞ জ গ হবধ
এছাড়াও পড়ুন:
দুই বন্ধু ও দুটি স্বপ্নের বিদায়
উত্তরার ১৭ নম্বর সেক্টরের ৬ নম্বর অ্যাভিনিউতে বিজিএমইএ ভবন। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকশিল্প প্রতিষ্ঠান টিম গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল্লাহ হিল রাকিবের জানাজায় শোকাবহ পরিবেশ। প্রিয় মানুষকে চিরবিদায় জানাতে এসেছেন দীর্ঘদিনের সহকর্মী, বন্ধু, পরিবারের সদস্য ও পরিচিতজন। শোক ও অশ্রুতে তারা রাকিবকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করছিলেন। রাকিবের অসমাপ্ত কাজ ও স্বপ্ন এগিয়ে নেওয়ার অঙ্গীকার করেন সহকর্মীরা।
৯ জুন কানাডায় একটি লেকে ভ্রমণের সময় নৌকাডুবে মারা যান আবদুল্লাহ হিল রাকিব ও তাঁর বন্ধু বাংলাদেশ বিমানের ক্যাপ্টেন মো. সাইফুজ্জামান। কানাডায় বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া মেয়ের সঙ্গে সাইফুজ্জামান ঈদের ছুটি কাটাতে স্ত্রী ও আরেক মেয়েকে নিয়ে গিয়েছিলেন। সেখানে বন্ধু ব্যবসায়ী রাকিব ও তাঁর ছেলের সঙ্গে একটি লেকে ঘুরতে গিয়েছিলেন। অন্টারিও প্রদেশের স্টারজিয়ন লেকে ক্যানুতে (সরু লম্বা ছোট্ট নৌকা) চড়ে ভ্রমণে বের হন। নৌকাটি উল্টে গেলে পানিতে ডুবে প্রাণ হারান দু’জন। বিদেশের মাটিতে একসঙ্গে দুই বন্ধুর মৃত্যু, একই ফ্লাইটে ফেরা, দেশে ফিরে একই কবরস্থানে শেষ শয্যা!
অশ্রুসজল চোখে রাকিবের কানাডাপ্রবাসী মেয়ে লামিয়া তাবাসসুম বলেন, ‘বাবা স্বপ্ন দেখতেন, দেখাতেন। তিনি যেসব স্বপ্ন আমাদের দেখিয়েছেন, যেসব কাজ রেখে গেছেন, আমরা যেন সুন্দরভাবে তা বাস্তবায়ন করতে পারি। পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে কানাডায় গিয়েছিলেন বাবা।’
রাকিব ও সাইফুজ্জামান ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। তাদের মরদেহ বিমানের একই ফ্লাইটে শুক্রবার রাতে ঢাকায় আনা হয়। জানাজা শেষে ঢাকায় বিমানবাহিনীর কবরস্থানে দু’জনকে সমাহিত করা হয়। তাদের সহকর্মী ও বন্ধুরা বলছেন, এর মধ্য দিয়ে অকালে দুটি স্বপ্ন বিদায় নিল।
রাকিবের সহকর্মীরা বলেন, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক পণ্য রপ্তানিকে ১০০ বিলিয়ন বা ১০ হাজার কোটি ডলারে উন্নীত করার স্বপ্ন দেখতেন রাকিব। তারা সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে সর্বাত্মক সহায়তা করবেন বলে জানান।
উত্তরায় জানাজার আগে বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, ‘আবদুল্লাহ হিল রাকিবের সঙ্গে বেশ কয়েক বছর কাজ করেছি। সব সময়ই দেখেছি, তিনি নিজের পরিবার, বন্ধু, ব্যবসা ও বিজিএমইএকে সমান অগ্রাধিকার দিয়েছেন। তৈরি পোশাকশিল্প খাতের যে কোনো সমস্যা ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তিনি সামনে চলে যেতেন। রাকিবের দর্শন ছিল– সফলতার মাত্রা নেই। তবে একজন ব্যক্তি কতটা সফল, সেটি তাঁর কর্মযজ্ঞ দেখলে বোঝা যায়।’
বিজিএমইএর সাবেক সভাপতি এস এম ফজলুল হক বলেন, রাকিব উজ্জ্বল প্রদীপ। স্বপ্ন ছিল অনেক। ঝোড়ো হাওয়ায় সেই প্রদীপ নিভে গেছে। সবাই তাঁর জন্য দোয়া করবেন।
রাকিবের জন্য সবার কাছে দোয়া চান বিজিএমইএর সর্বশেষ নির্বাচনে বিজয়ী রাইজিং ফ্যাশনসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান। স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন রাকিবের বড় ভাই আবদুল্লাহ হিল নকীব।
ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামানের সহকর্মীরা জানান, শুক্রবার তাঁর মরদেহ কানাডা থেকে ঢাকায় আনার সময় তাঁর সঙ্গে স্ত্রী, দুই মেয়ে, বোন এবং ভগ্নিপতি ছিলেন। মরদেহ পৌঁছার পর উপস্থিত পাইলটরা সহকর্মীর মরদেহে স্যালুট দেন। এর পর বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ও পাইলটস অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। পরে মরদেহ ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের (সিএমএইচ) মর্গে রাখা হয়। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হয় তাঁর বনানীর ডিওএইচএসের বাসায়। বেলা ১১টার দিকে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর ঘাঁটি বাশারের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা হয়। সাবেক বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার মার্শাল মোহাম্মদ ইনামুল বারীসহ পাইলট, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা এতে অংশ নেন। পরে জোহরের নামাজ শেষে ডিওএইচএস মাঠে একসঙ্গে ক্যাপ্টেন সাইফুজ্জামান ও রাকিবের জানাজা হয়। সাইফুজ্জামানকে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হয়। একই কবরস্থানে দাফন করা হয় রাকিবকে। তাঁর বাবা বিমানবাহিনীর সদস্য ছিলেন।