বাগেরহাট পৌর যুবদলের সাবেক সভাপতি জসিম উদ্দিনের দুই পায়ের রগ কেটে দিয়েছে প্রতিপক্ষ। বুধবার রাতে শহরের বাসাবাটি এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। মুমূর্ষু অবস্থায় প্রথমে তাঁকে বাগেরহাট সদর হাসপাতাল এবং পরে ঢাকার হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে। 

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বুধবার সন্ধ্যায় স্থানীয় শ্রমিক দল নেতা সেলিম ভূঁইয়ার ভাই আজিম ভূঁইয়া ও তাঁর লোকজন শহরের নাগেরবাজার এলাকায় আজিম খান নামে এক ব্যক্তিকে মারধর করেন। আজিম যুবদল নেতা জসিম উদ্দিনের প্রতিবেশী। পরে রাত ৮টার দিকে বাসাবাটি এলাকার বগা ক্লিনিকের সামনে আজিমের কাছে মারধরের কারণ জানতে চান জসিম। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে আজিম ও তাঁর লোকজন জসিমের ওপর হামলা চালায়। প্রাণ বাঁচাতে জসিম স্থানীয় একটি বাড়িতে ঢোকেন। আজিম ও তাঁর লোকজন ওই বাড়ির ফটক ও দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে জসিমকে বেধড়ক মারধর ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপায়। তাঁর দুই পায়ের রগও কেটে দেয়। 

জসিমের মামাতো ভাই সাইফুল ইসলাম পিঞ্জুর বলেন, প্রতিবেশীর ঘরে আশ্রয় নিয়েও রক্ষা পায়নি জসিম। তার অবস্থা খুবই আশঙ্কাজনক। আমরা খুলনা থেকে ঢাকার হাসপাতালে নিয়ে আসছি। এর আগে জসিমের ভাগনে রাব্বিকে মারধর ও মোটরসাইকেল নিয়ে গিয়েছিল আজিম। সেই মোটরসাইকেল এখনও ফেরত দেয়নি।

প্রথমে মারধরের শিকার আজিম খানের স্ত্রী নাদিরা বেগম বলেন, আজিম ও তাঁর লোকজন এর আগেও আমাদের বাড়িতে এসে হুমকি-ধমকি দিয়েছে। আজিমের সঙ্গে গতকাল কয়েল ফারুক, মাসুদ, মুরাদ, অভি, শাওনসহ ১৫-১৬ জন ছিল। আমরা এ হামলার বিচার চাই।

এদিকে এ ঘটনায় আজিম ভূঁইয়ার বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার দুপুরে বাগেরহাট শহর রক্ষা বাঁধ এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন মাছ ব্যবসায়ীরা। মাছ ব্যবসায়ী মো.

ওসমান বলেন, জসিমকে মারধর করার পর আজিম ও তাঁর লোকজন এসে মাছ ব্যবসায়ী কুটুকে মারধর করেছে। এর আগে আব্দুস সালাম নামে আরেকজন এক মাছ ব্যবসায়ীকে মারধর করে। আমরা তাদের বিচার চাই। 

বাগেরহাট মডেল থানার ওসি মাহমুদ উল হাসান বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কেউ অভিযোগ দেয়নি। কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ম ছ ব যবস য় আজ ম ও ত র ল কজন ম রধর ক

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ