একে অপরের দিকে কাদা ছুড়লে বিজয় নিঃশেষ হয়ে যাবে: মির্জা আব্বাস
Published: 13th, March 2025 GMT
ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে একসঙ্গে পথচলা দলগুলো একে অপরের দিকে কাদা ছুড়লে বিজয় নিঃশেষ হয়ে যাবে বলে মনে করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস। তিনি বলেন, ‘বিভিন্ন দল একে অপরের দিকে কথা বলছে, কাদা ছুড়ছে। এই জিনিসটা ঠিক না। তাহলে পাঁচ তারিখে আমাদের যে আন্দোলন, আমাদের যে বিজয়, তা নিঃশেষ হয়ে যাবে।’
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় রাজধানীর মালিবাগের একটি হোটেলে রাজনৈতিক নেতা ও পেশাজীবীদের সম্মানে গণ অধিকার পরিষদ আয়োজিত ইফতার অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন মির্জা আব্বাস। অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, বিগত বছরগুলোয় ইফতার অনুষ্ঠানে আসতে হতো শঙ্কা নিয়ে, এখন আর সেই শঙ্কা নেই। এখন নিশ্চিন্তে আরামের সঙ্গে সবাই আসতে পারছেন। এমন পরিস্থিতি ৫ তারিখের (গত বছরের ৫ আগস্ট) আগে ছিল না।
ইফতার অনুষ্ঠানে যে টেবিলে মির্জা আব্বাস বসেছিলেন, সেই টেবিলে আটটি রাজনৈতিক দলের নেতারা বসেন। বিষয়টি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সবাই একসঙ্গে ইফতার করতে পারছেন। একইভাবে বাকি সময়টাও বাংলাদেশ গড়ে তোলার জন্য এভাবে থাকতে পারলে অসুবিধাটা কোথায়? এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আজকে ইফতার পার্টিতে যেভাবে বসেছি, আগামীতে সকল কার্যক্রমে নির্বাচন থেকে শুরু করে সরকার গঠন পর্যন্ত সব একসঙ্গে করতে চাই।’
তবে কৃত্রিমভাবে কিছু অসুবিধার সৃষ্টি করা হচ্ছে উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, হিংসা–বিদ্বেষ–ঈর্ষা নিয়ে, ঈর্ষাপরায়ণ হয়ে কিংবা পরশ্রীকাতর হয়ে কখনোই দেশের ভালো করা যাবে না। সবাইকে নিজের বিবেকের কাছে দায়ী থাকতে হবে। রক্তের বিনিময়ে যে বিজয় অর্জিত হয়েছে, সেটা যেন কারও ষড়যন্ত্রের কারণে বৃথা না যায়।
ইফতার অনুষ্ঠানে বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য সালাহউদ্দিন আহমেদ জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে পরিষ্কার রোডম্যাপ (পথনকশা) ঘোষণা করতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি অনুরোধ জানান। তিনি বলেন, জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের আকাঙ্খা ছিল স্বৈরাচারমুক্ত শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা। জন–আকাঙ্ক্ষাকে ধারণ করে এমন রাষ্ট্র বিনির্মাণ করা যেখানে কোনো বৈষম্য থাকবে না, সাম্যের ভিত্তিতে একটি গণতান্ত্রিক ও ন্যায়বিচারের বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠিত হবে।
সালাহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বর্তমান প্রজন্ম বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বিনির্মাণের জন্য ব্যাপক সংস্কার চায় এবং সেই সংস্কারের সঙ্গে বিএনপিও একমত। তবে তিনি বলেন, সংস্কার, প্রস্তাব, আলাপ–আলাচনা, প্রস্তাব গ্রহণ করা, এগুলো চলতেই থাকবে। কিন্তু জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য একটা সিদ্ধান্ত নিতে হবে। সে জন্য বিএনপি নির্বাচনের রোডম্যাপ চায়।
এই ইফতার অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্য দেন গণ অধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক। অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল হালিম, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান (কাজী জাফর) মোস্তফা জামাল হায়দার, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণফোরাম নেতা সুব্রত চৌধুরী প্রমুখ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
৭ উপাচার্যের অংশগ্রহণে গোবিপ্রবিতে শিক্ষা সমাপনী
গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (গোবিপ্রবি) নবম ব্যাচের (নবনীতক ৯) শিক্ষার্থীদের নিয়ে শিক্ষা সমাপনী-২০২৪ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থীদের বিদায় বেলায় এক মঞ্চে আসীন হন দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতিমান সাত উপাচার্য।
বুধবার (৩০ জুলাই) দুপুর ১২টায় একাডেমিক ভবন প্রাঙ্গণে আনন্দঘন পরিবেশে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর ছাড়াও অনুষ্ঠানে অতিথি ছিলেন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী, খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী, পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এসএম আব্দুল আওয়াল, রাঙ্গামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আতিয়ার রহমান ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন তারেক।
আরো পড়ুন:
নতুনবাজারের সেই রনির বুলেটের যন্ত্রণা আজো থামেনি
শিশু ছাত্রীকে যৌন নির্যাতন, মাদ্রাসা শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা
এক মঞ্চে একইসঙ্গে এতজন উপাচার্যকে পেয়ে সমাপনী ব্যাচসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. হায়দার আলী বলেন, “এভাবে একসঙ্গে পুরো সেশনের শিক্ষা সমাপনী আয়োজনের আইডিয়াটি অত্যন্ত চমৎকার। এতে করে একটি ব্যাচের একইসঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে প্রবেশ ঘটে। যেখানে সবার একসঙ্গে পরীক্ষা হয়, রেজাল্ট প্রকাশ হয় এবং কোনো সেশন জট থাকে না। আমি এই আইডিয়াটি আমার নিজ বিশ্ববিদ্যালয়েও বাস্তবায়নের চেষ্টা করব।”
খুলনা কৃষি বিশ্বিবদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাজমুল আহসান বলেন, “আমরা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যগণ এখানে এসেছি সংহতি জানানোর জন্য। আমি নবম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের জীবনে সফলতা কামনা করছি।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এম সরওয়ারউদ্দিন চৌধুরী বলেন, “শিক্ষার্থীদের বিসিএস দেওয়া, বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করা বা ব্যবসা করার লক্ষ্য থাকে। তবে জীবনে কোনো না কোনো কিছু করতেই হবে। এক্ষেত্রে অবসর বলে কোনো শব্দ থাকা উচিত নয়।”
পিরোজপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. শহীদুল ইসলাম বলেন, “আমি যখন দেশের বাইরে পড়াশোনা করতাম, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যকে আমি কখনোই দেখিনি। আর বাংলাদেশের কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্চে কখনো একসঙ্গে সাতজন উপাচার্যকেও বসতে দেখিনি, এটা অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর করে দেখিয়েছেন।”
পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এস এম আব্দুল আওয়াল বলেন, “আমরা যদি আন্তর্জাতিক পরিপ্রেক্ষিতে চিন্তা করি, আমাদের চাকরি খোঁজার পাশাপাশি এমন কিছু করার মানসিকতা রাখতে হবে, যা দেশ ও জাতির জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।”
রাঙামাটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আতিয়ার রহমান বলেন, “শিক্ষা সমাপনী মানেই সব সম্পর্ক ছিন্ন করা নয়। বিশ্বে এমন অনেক নজির আছে, যেখানে অ্যালামনাই থেকে উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। তাই নিজেকে বিস্তৃত পরিসরে মেলে ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের মুখ উজ্জ্বল করার দায়িত্ব নিতে হবে।”
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুসলেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, “নিজেকে চেনাই সবচেয়ে বড় শিক্ষা। আর শিক্ষার্থীদের কর্মজীবনই বলে দেবে, তারা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে কতটা জ্ঞান অর্জন করেছে।”
প্রধান অতিথিরি বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. হোসেন উদ্দিন শেখর আগত উপাচার্যদের কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, “শিক্ষার্থীদের অনুপ্রেরণা দেওয়ার জন্যই আমাদের এই প্রয়াস। একইসঙ্গে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি তুলে ধরাও আমাদের লক্ষ্য। আমরা জানিয়ে দিতে চাই, গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে চায় এবং অচিরে দাঁড়াবেই।”
তিনি বলেন, “আমরা ইতোমধ্যে ইউজিসির দুইটি হিট প্রকল্প পেয়েছি এবং ভবিষ্যতে আরো পাব। আমরা আশা করছি, বি ক্যাটাগরি থেকে আগামী অর্থবছরের আগেই আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়টি এ ক্যাটাগরিতে উন্নীত হবে।”
গোবিপ্রবির উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সোহেল হাসানের সভাপতিত্বে এতে কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ নাজমুল আহসানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার, প্রক্টর, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক, সব অনুষদের ডিন, বিভাগীয় সভাপতি ও প্রাধ্যক্ষগণ, দপ্তর প্রধানগণ, বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে, জুলাই শহিদদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু করা হয়।
শিক্ষা সমাপনী উপলক্ষে বুধবার ছাত্রদের কালার ফেস্ট ও সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা এবং আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৩১ জুলাই) সন্ধ্যায় একটি কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে।
ঢাকা/রিশাদ/মেহেদী