স্বামী, শ্বশুরসহ অপরাধীদের ফাঁসি চান আছিয়ার বোন
Published: 15th, March 2025 GMT
বড় বোন হামিদা আক্তারের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক ছিল আছিয়ার। মায়ের মতো প্রায়ই আছিয়াকে খাইয়ে দিতেন তিনি। বিয়ের পর তাঁর শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ছোট বোনের ওপর নির্মম ও পাষণ্ড আচরণ কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেন না হামিদা। স্বামী, শ্বশুরসহ অপরাধীদের ফাঁসি চাইলেন তিনি।
গতকাল শুক্রবার শ্বশুর হিটু শেখসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হামিদা। স্বজন বলছেন, সে মানসিক ও শারীরিকভাবে যে আঘাত পেয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। গতকাল তাঁকে মাগুরা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, হামিদা বর্তমানে ট্রমার মধ্যে আছেন। তাঁর বুকের ওপর দু’পাশেই ব্লেড দিয়ে কাটার বেশ কিছু চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে সেগুলোতে এখন আর কোনো ইনফেকশন নেই। সামান্য ওষুধেই সেরে যাবে। তাঁর কাউন্সেলিং দরকার।
গতকাল আছিয়ার গ্রামের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সোনাইকুন্ডিতে ছিল মাতম। মাগুরার মতো দেশের বিভিন্ন এলাকায় গতকালও ছিল নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি। আছিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার মা আয়েশা আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। এক পর্যায়ে আহাজারি করে বলছিলেন, ‘সবার ফাঁসি চাই।’ আছিয়ার প্রতিবন্ধী বাবা নির্বাক।
পরিবারের অন্য সদস্যরাও বিলাপ করছেন।
ঘটনার শুরু থেকেই আয়েশার পাশে ছিলেন তাঁর বড় ভাই ইউসুফ বিশ্বাস।
তিনি সমকালকে জানান, হিটু শেখ ও তার ছেলে সজীব হোসেন একসময় রাজমিস্ত্রির কাজ করত। পরে শুনেছি এই পরিবার মাদকের সঙ্গে জড়িত। আমার বড় ভাগনি হামিদা অত্যন্ত সহজ-সরল। বয়স মাত্র ১৫ বছর। অভাবের কারণে অল্প বয়সে বিয়ে দিতে হয়েছে। আছিয়ার বাবার চিকিৎসার জন্য ওদের দুটি গাভি বিক্রি করতে হয়েছে। আগে ওর বাবা অটোরিকশা চালাত। ৮-৯ মাস আগে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে। এখন আবার মেয়েকে হারাল। হামিদার ভাগ্যটাই খারাপ। ভালো একটা মেয়ে এত খারাপ পরিবারে গিয়ে পড়ল!
আছিয়ার মা আয়েশা বলেন, কয়েক মাস আগে আকস্মিকভাবে আমার স্বামী মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর অসুস্থতার কারণেই পরিবারে বিপর্যয় নেমে এসেছে। তাঁর সুচিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চান তিনি।
গতকাল বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মী আছিয়ার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস বলেন, বিগত সরকারের আমলে একটিও ধর্ষণের ঘটনার বিচার হয়নি। আশা করি বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে ড.
এ সময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী সাবেক সংরক্ষিত সংসদ সদস্য নেওয়াজ হালিমা আরলি, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন খানসহ অন্যরা।
স্থানীয়রা জানান, পেশায় রাজমিস্ত্রি হিটু শেখের চরিত্র আগে থেকেই খারাপ। এর আগেও সে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটায়। গত বছর রমজানে গোসল করার সময় হিটু শেখ প্রতিবেশী এক গৃহবধূকে জড়িয়ে ধরে। এ ঘটনায় নিজনান্দুয়ালী এলাকার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার স্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে সালিশ করেন।
মাগুরা সদর থানার ওসি আয়ুব আলী বলেন, হিটু শেখকে রিমান্ডে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাকে সাত দিন ও অন্যদের পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। তাদের জ্ঞিাসাবাদ চলছে।
ঘর গুঁড়িয়ে দিল জনতা
মাগুরা শহরতলির নিজনান্দুয়ালী এলাকায় আছিয়ার ধর্ষক হিটু শেখের বাড়িতে বৃহস্পতিবার রাতে আগুন ও ভাঙচুর করেছে এলাকাবাসী। খবর পেয়ে মাগুরা সদর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের শহরের নতুন বাজার ব্রিজের মুখে আটকে দেয় জনতা। গতকাল আবারও ভাঙচুর চালানো হয়।
প্রতিবেশী রাবেয়া খাতুন বলেন, বৃহস্পতিবার ইফতারের পরপরই বিক্ষুব্ধ জনতার একটি অংশ সেখানে এসে বাড়িটিতে আগুন দেওয়ার পাশপাশি ভাঙচুর চালাতে থাকে। তারা টিনের চালা খুলে নিয়ে যায়। ঘরের দেয়াল হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে ধর্ষকদের ফাঁসি দাবি করে।
গত ৫ মার্চ রাতে বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় আছিয়া। ৬ মার্চ তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ও পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিএমএইচে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা যায় সে। পরে সন্ধ্যা ৭টায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে শিশুটিকে মাগুরা নেওয়া হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় আরেকটি হেলিকপ্টারে মাগুরায় যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠন হাসনাত আব্দুল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক প্রমুখ। এর পর শহরের নোমানী ময়দানে আছিয়ার প্রথম জানাজা ও পরে শ্রীপুর উপজেলার শব্দালপুর ইউনিয়নের জারিয়া গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা শেষে স্থানীয় সোনাইকুণ্ডি কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
মুসলমান বলেই রোহিঙ্গারা ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার
রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা বর্তমান সময়ে অন্যতম করুণ মানবিক সংকট বলে উল্লেখ করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, শুধু মুসলমান হওয়ার কারণেই রোহিঙ্গারা এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার।
গতকাল সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় তুরস্কের একটি সংসদীয় প্রতিনিধিদলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় এ কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা। পাঁচ সদস্যের ওই প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিয়েছেন তুরস্ক-বাংলাদেশ সংসদীয় মৈত্রী গ্রুপের সভাপতি ও তুর্কি পার্লামেন্ট সদস্য মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ।
সাক্ষাতে দুই পক্ষ বাণিজ্য, বিনিয়োগ ও মানবিক সহায়তার ক্ষেত্রগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা আরও জোরদার করার উপায় নিয়ে আলোচনা করে। এ সময় মেহমেত আকিফ ইয়িলমাজ বলেন, তুরস্ক ও বাংলাদেশের মধ্যে গভীর সাংস্কৃতিক ও ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান দৃঢ় বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ওপর আলোকপাত করেন তিনি।
ইয়িলমাজ বলেন, তাঁদের প্রতিনিধিদল রোববার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শন করেছে এবং তুর্কি বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, বিশেষ করে তুর্কি ফিল্ড হাসপাতালের মানবিক কার্যক্রম সম্পর্কে অবহিত হয়েছে। এ সময় রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতি তুরস্কের অবিচল সমর্থনের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন প্রধান উপদেষ্টা। তুর্কি উদ্যোক্তাদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানান তিনি।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, ‘রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের দুরবস্থা আমাদের সময়ের অন্যতম করুণ মানবিক সংকট। তারা শুধু মুসলমান বলেই এই ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার এবং তাদের নাগরিকত্ব কেড়ে নেওয়া হয়েছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আট বছর ধরে আশ্রয়শিবিরে থাকায় রোহিঙ্গা শিশুদের শিক্ষা ও ভবিষ্যৎ সুযোগ একেবারেই সীমিত হয়ে পড়েছে। এই অবস্থা হতাশা ও অস্থিতিশীলতার জন্ম দিতে পারে।’