বড় বোন হামিদা আক্তারের সঙ্গে দারুণ সম্পর্ক ছিল আছিয়ার। মায়ের মতো প্রায়ই আছিয়াকে খাইয়ে দিতেন তিনি। বিয়ের পর তাঁর শ্বশুরবাড়িতে বেড়াতে গিয়ে ছোট বোনের ওপর নির্মম ও পাষণ্ড আচরণ কোনোভাবে মেনে নিতে পারছেন না হামিদা। স্বামী, শ্বশুরসহ  অপরাধীদের ফাঁসি চাইলেন তিনি। 

গতকাল শুক্রবার শ্বশুর হিটু শেখসহ জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানাতে গিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন হামিদা। স্বজন বলছেন, সে মানসিক ও শারীরিকভাবে যে আঘাত পেয়েছে, তা কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লাগবে। গতকাল তাঁকে মাগুরা শহরের একটি বেসরকারি ক্লিনিকে চিকিৎসা দেওয়া হয়। চিকিৎসকরা বলছেন, হামিদা বর্তমানে ট্রমার মধ্যে আছেন। তাঁর বুকের ওপর দু’পাশেই  ব্লেড দিয়ে কাটার বেশ কিছু চিহ্ন পাওয়া গেছে। তবে সেগুলোতে এখন আর কোনো ইনফেকশন নেই। সামান্য ওষুধেই সেরে যাবে। তাঁর কাউন্সেলিং দরকার।
গতকাল আছিয়ার গ্রামের বাড়ি মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার সোনাইকুন্ডিতে ছিল মাতম। মাগুরার মতো দেশের বিভিন্ন এলাকায় গতকালও ছিল নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি। আছিয়ার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেছে, তার মা আয়েশা আক্তার বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন। এক পর্যায়ে আহাজারি করে বলছিলেন, ‘সবার ফাঁসি চাই।’ আছিয়ার প্রতিবন্ধী বাবা নির্বাক।   
পরিবারের অন্য সদস্যরাও বিলাপ করছেন। 

ঘটনার শুরু থেকেই আয়েশার পাশে ছিলেন তাঁর বড় ভাই ইউসুফ বিশ্বাস। 
তিনি সমকালকে জানান, হিটু শেখ ও তার ছেলে সজীব হোসেন একসময় রাজমিস্ত্রির কাজ করত। পরে শুনেছি এই পরিবার মাদকের সঙ্গে জড়িত। আমার বড় ভাগনি হামিদা অত্যন্ত সহজ-সরল। বয়স মাত্র ১৫ বছর। অভাবের কারণে অল্প বয়সে বিয়ে দিতে হয়েছে। আছিয়ার বাবার চিকিৎসার জন্য ওদের দুটি গাভি বিক্রি করতে হয়েছে। আগে ওর বাবা অটোরিকশা চালাত। ৮-৯ মাস আগে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে পরিবারে অন্ধকার নেমে আসে। এখন আবার মেয়েকে হারাল। হামিদার ভাগ্যটাই খারাপ। ভালো একটা মেয়ে এত খারাপ পরিবারে গিয়ে পড়ল!  
আছিয়ার মা আয়েশা বলেন, কয়েক মাস আগে আকস্মিকভাবে আমার স্বামী মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তাঁর অসুস্থতার কারণেই পরিবারে বিপর্যয় নেমে এসেছে। তাঁর সুচিকিৎসার জন্য সহযোগিতা চান তিনি।

গতকাল বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠনের নেতাকর্মী আছিয়ার পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন। এ সময় জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস বলেন, বিগত সরকারের আমলে একটিও ধর্ষণের ঘটনার বিচার হয়নি। আশা করি বিচারহীনতার এই সংস্কৃতি থেকে বেরিয়ে এসে ড.

ইউনূসের সরকার দ্রুত বিচারের মাধ্যমে এ ঘটনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে। এর মধ্য দিয়ে বিচারহীনতার সংস্কৃতি বন্ধ হবে। 
এ সময় তাঁর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন মহিলা দলের কেন্দ্রীয় নেত্রী সাবেক সংরক্ষিত সংসদ সদস্য নেওয়াজ হালিমা আরলি, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব মনোয়ার হোসেন খানসহ অন্যরা।
স্থানীয়রা জানান, পেশায় রাজমিস্ত্রি হিটু শেখের চরিত্র আগে থেকেই খারাপ। এর আগেও সে শ্লীলতাহানির ঘটনা ঘটায়। গত বছর রমজানে গোসল করার সময় হিটু শেখ প্রতিবেশী এক গৃহবধূকে জড়িয়ে ধরে। এ ঘটনায় নিজনান্দুয়ালী এলাকার পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার স্থানীয় ব্যক্তিদের নিয়ে সালিশ করেন। 
মাগুরা সদর থানার ওসি আয়ুব আলী বলেন, হিটু শেখকে রিমান্ডে এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাকে সাত দিন ও অন্যদের পাঁচ দিনের রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। তাদের জ্ঞিাসাবাদ চলছে।
                 
ঘর গুঁড়িয়ে দিল জনতা
মাগুরা শহরতলির নিজনান্দুয়ালী এলাকায় আছিয়ার ধর্ষক হিটু শেখের বাড়িতে বৃহস্পতিবার রাতে আগুন ও ভাঙচুর করেছে এলাকাবাসী। খবর পেয়ে মাগুরা সদর পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা সেখানে যাওয়ার চেষ্টা করলে তাদের শহরের নতুন বাজার ব্রিজের মুখে আটকে দেয় জনতা। গতকাল আবারও ভাঙচুর চালানো হয়।
প্রতিবেশী  রাবেয়া খাতুন বলেন, বৃহস্পতিবার ইফতারের পরপরই বিক্ষুব্ধ জনতার একটি অংশ সেখানে এসে বাড়িটিতে আগুন দেওয়ার পাশপাশি ভাঙচুর চালাতে থাকে। তারা টিনের চালা খুলে নিয়ে যায়। ঘরের দেয়াল হাতুড়ি দিয়ে ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে ধর্ষকদের ফাঁসি দাবি করে।
গত ৫ মার্চ রাতে বোনের শ্বশুরবাড়ি বেড়াতে গিয়ে ধর্ষণের শিকার হয় আছিয়া। ৬ মার্চ তাকে মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে ও পর ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে সিএমএইচে নেওয়া হয়। বৃহস্পতিবার দুপুরে মারা যায় সে। পরে সন্ধ্যা ৭টায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টারে করে শিশুটিকে মাগুরা নেওয়া হয়। ওই দিন সন্ধ্যায় আরেকটি হেলিকপ্টারে মাগুরায় যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠন হাসনাত আব্দুল্লাহ, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের আমির মাওলানা মামুনুল হক প্রমুখ। এর পর শহরের নোমানী ময়দানে আছিয়ার প্রথম জানাজা ও পরে শ্রীপুর উপজেলার শব্দালপুর ইউনিয়নের জারিয়া গ্রামে দ্বিতীয় জানাজা শেষে স্থানীয় সোনাইকুণ্ডি কবরস্থানে তার লাশ দাফন করা হয়।

 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গতক ল সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

সীতাকুণ্ডে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ মনোনয়নবঞ্চিত বিএনপি নেতার সমর্থকদের

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে দলীয় মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর বিক্ষুব্ধ কর্মী-সমর্থকেরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন। সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সীতাকুণ্ড উপজেলার ভাটিয়ারী শহীদ মিনার এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেন তাঁরা।

এ সময় বিক্ষোভকারীরা টায়ার জ্বালিয়ে স্লোগান দেন। এ ছাড়া মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করার খবর পাওয়া গেছে। রাত সাড়ে আটটার দিকে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে মিছিল করছিলেন বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা।

এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিনের নাম ঘোষণা করা হয়। বাদ পড়েন কেন্দ্রীয় বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরী।

এয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার জন্য সোমবার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে ২৩৭ আসনে দলীয় প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। 

এ খবর ছড়িয়ে পড়লে আসলাম চৌধুরীর কর্মী-সমর্থকেরা বিক্ষুব্ধ হয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে দেন। এ সময় তাঁরা ‘দুর্দিনের আসলাম ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’ ‘আসলাম ভাইয়ের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’ এমন স্লোগান দেওয়া হয়।

বিক্ষুব্ধ বিএনপি নেতা-কর্মীরা বলছেন, আসলাম চৌধুরী দলের জন্য সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছেন। তিনি দলের জন্য কাজ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের রোষানলে পড়ে কারাবন্দী হন। দীর্ঘ সময় তিনি জেল-জুলুম অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করেছেন। অথচ এখন সুসময়ে দল তাঁকে বঞ্চিত করছে। তাঁরা দলের এ সিদ্ধান্ত মানেন না। তাই প্রতিবাদে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেছেন তাঁরা।

চট্টগ্রাম উত্তর জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি মো. মোরসালীন প্রথম আলোকে বলেন, আসন্ন নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রার্থী ঘোষণার পর বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা আবেগ ধরে রাখতে পারেননি। তাঁরা যে যাঁর জায়গা থেকে মহাসড়কে উঠে প্রতিবাদ শুরু করেন। তাঁরা অন্তত সীতাকুণ্ডের ৩০টি স্থানে মহাসড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।

ঘোষিত প্রার্থী কাজী মুহাম্মদ সালাউদ্দিন উপজেলা বিএনপির সদস্যসচিব কাজী মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের ছোট ভাই। একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় কাজী মোহাম্মদ সালাউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, দলের নীতিনির্ধারণী ফোরাম তাঁকে যোগ্য মনে করেছেন বিধায় তাঁকে মনোনয়ন দিয়েছে। তিনি দলের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে নিয়ে নির্বাচন করতে চান। এর আগে ২০১৪ সালে তিনি উপজেলা চেয়ারম্যান পদে নির্বাচন করেছিলেন।

ফৌজদারহাট পুলিশ পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, ফৌজদারহাট-বন্দর সংযোগ সড়কের মাথা, ফৌজদারহাট, জলিল গেইট, ভাটিয়ারী, মাদামবিবিরহাট, কদমরসুল এলাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করেছেন বিএনপির নেতা–কর্মীরা। এখন পর্যন্ত প্রায় দেড় ঘণ্টা মহাসড়ক অবরোধ রয়েছে। ফলে উভয় দিকে যান চলাচল বন্ধ। পুলিশ বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের সরাতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ