আমাদের এ অঞ্চলে ইফতার মানেই খেজুর, মুড়ি, ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনি...। মোটামুটি মানের একটা ‘ইফতারি প্যাকেজ’ সাজাতে গেলেও ৫০ থেকে ৬০ টাকা লেগেই যায়। সেখানে ১০ টাকায় ইফতারি, তা শুনতে একটু অবাকই লাগে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী কাজী মিরাজ কিন্তু এই অবাক করা কাজটাই করছেন। মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে শিক্ষার্থীদের হাতে পৌঁছে দিচ্ছেন পূর্ণাঙ্গ ইফতারির প্যাকেট।

কিন্তু কেন এই উদ্যোগ? পেছনের ভাবনাটাই–বা কী ছিল? মিরাজ বলেন, ‘১০ টাকায় ইফতারি বিক্রির উদ্যোগটা আমার মাথায় আসে ক্যাম্পাসের নিম্নমধ্যবিত্ত শিক্ষার্থীদের কথা ভেবে। তাদের পক্ষে প্রতিদিন বাইরে থেকে ৫০ থেকে ৬০ টাকার ইফতারি কিনে খাওয়া কঠিন। আমি নিজেও ভুক্তভোগী। বাইরের দোকানগুলোয় ১০ থেকে ২০ টাকার ইফতারি কিনতে অনেক সময় সংকোচ হয়। আবার বিনা মূল্যে দিলেও কেউ সংকোচ বোধ করতে পারে। তাই আমি ফ্রিতে না দিয়ে ১০ টাকা করে রাখি। অর্থাৎ ৫০ থেকে ৬০ টাকার ইফতারির প্যাকেটই ১০ টাকায় বিক্রি করি।’

কাজী মিরাজের বাড়ি গাইবান্ধা। ছোটবেলা থেকেই সেবামূলক কাজে তাঁর ঝোঁক। মানুষের উপকার করতে পারলে তৃপ্তি পান। তাই নিজের সাধ্যমতো কিছু করার চেষ্টা করেছেন সব সময়। সেই চেষ্টা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেও থামেনি। গত পবিত্র রমজান মাসে প্রথমবারের মতো এই কার্যক্রম শুরু করেন মিরাজ। তবে প্রথম দিকে একরকম দ্বিধায় ছিলেন, আদৌ এটি কাজে আসবে কি না। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই শিক্ষার্থীদের অভাবনীয় সাড়া দেখে কাজে আরও বেশি আগ্রহ পান মিরাজ।

শিক্ষার্থীদের অভাবনীয় সাড়া দেখে কাজে আরও বেশি আগ্রহ পান মিরাজ।.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ট ক র ইফত র ১০ ট ক

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ