রমজানের অর্ধেকটা পেরিয়ে আসায় ভিড় বেড়েছে রাজধানীর বড় মার্কেট ও শপিংমলে। ঈদের কেনাকাটায় এসব জায়গায় যাচ্ছে মানুষ। তবে মানুষের ভিড়ে এসব এলাকায় তীব্র হয়েছে যানজট। দুপুরের পর যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। এ যানজট চরম মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।

সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার সকাল থেকেই সড়কে ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটকে ছিল গণপরিবহন। বিশেষ করে নিউমার্কেট, সায়েন্সল্যাব, গুলশান ১-২, শাহবাগসহ আশপাশের এলাকা ছিল অনেকটা স্থবির। এর প্রভাব পড়েছে রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়ও। মার্কেট ঘিরে আশপাশের এলাকার তীব্র যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

রোববার দুপুরের পর রাজধানীর পল্টন, কারওয়ান বাজার, ফার্মগেট, ধানমন্ডি-৩২ নম্বর সড়ক, চানখাঁরপুল, গুলিস্তান, বঙ্গবাজারসহ আশপাশের সব এলাকায় দেখা গেছে ভয়াবহ যানজট। ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ জানিয়েছে, রাজধানীর বড় মার্কেট ও শপিংমল সংলগ্ন এলাকায় এখন তীব্র যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। সরেজমিন ঘুরে এর সত্যতা মিলেছে। নিউমার্কেট, কারওয়ান বাজার, উত্তরা জসিম উদ্দিন ও গুলশানের বিভিন্ন এলাকায় মার্কেটকেন্দ্রিক অসহনীয় যানজট দেখা গেছে।

নিউমার্কেট এলাকায় রিকশাযাত্রী ব্যবসায়ী আব্দুর রউফ বলেন, স্ত্রী-সন্তানদের আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিব বলে মার্কেট করতে এসেছি। দুপুর আড়াইটার মধ্যে কেনাকাটা শেষ করে কমলাপুরের উদ্দেশে রিকশায় উঠেছি কিন্তু এক ঘণ্টায়ও নিউমার্কেট সিগন্যাল পার হতে পারিনি। আজ বাসায় গিয়ে ইফতার করতে পারব না বলেই মনে হচ্ছে।

মিরপুর ১ নম্বর থেকে সকাল ১০টায় মতিঝিলের উদ্দেশে বের হন মাহফুজ ইমন। তিনি সমকালকে বলেন, ‘অন্যদিন মতিঝিলে আসতে আমার ১ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে না। কিন্তু আজ শাহবাগ, পল্টন হয়ে মতিঝিলে আসতে আড়াই ঘণ্টার বেশি লেগেছে।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, সাধারণ মানুষ ট্রাফিক সিগন্যাল মানছে না। আগে যাওয়ার প্রতিযোগিতা থেকেই শহরে যানজট বাড়ছে। এতে অকার্যকর হয়ে পড়ছে ট্রাফিক ব্যবস্থাও।

ডিএমপির রমনা বিভাগের ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার (ট্রাফিক) রাজিব গাইন সমকালকে বলেন, সায়েন্সল্যাবের পাশেই নিউমার্কেট এলাকায় নতুন একটি বড় শপিংমল তৈরি হওয়ায় এ এলাকার যানজট আরও তীব্র হয়েছে।

এদিকে রোববার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে রমজান মাসে সড়কে অবরোধ করে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি না করার আহ্বান জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। এতে বলা হয়, রমজান মাসে নগরীর সড়কগুলোতে যানবাহনের আধিক্য বেশি থাকে। এ অবস্থায় নগরবাসীর সুবিধার্থে রমজানের বাকি সময়গুলোতে রাস্তাঘাট অবরোধ করে অহেতুক জনভোগান্তি তৈরি না করার জন্য সবাইকে অনুরোধ করা হলো।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: য নজট ঈদ র ক ন ক ট র য নজট এল ক য় রমজ ন আশপ শ

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ