চট্টগ্রামে পানি শোধনাগার চালু করে বিপাকে ওয়াসা
Published: 18th, March 2025 GMT
গ্রামাঞ্চলের মানুষ সাধারণত নলকূপের পানি ব্যবহার করেন। ওয়াসা বা কোনো সংস্থা থেকে পানি কিনে ব্যবহারে তারা অভ্যস্ত নন। এমন পরিস্থিতিতে চট্টগ্রামে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ভান্ডালজুড়ি শোধনাগার থেকে পানি সরবরাহ শুরু হয়েছে। কিন্তু বিপুল ব্যয়ের এ প্রকল্পে আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। তাই ছয় কোটি লিটার পরিশোধন ক্ষমতাসম্পন্ন পানি শোধনাগার প্রকল্প বাস্তবায়ন করে বিপাকে পড়েছে চট্টগ্রাম ওয়াসা।
রোববার থেকে বাণিজ্যিকভাবে পানি সরবরাহ শুরু করেছে ওয়াসা। দেড় কোটি লিটার পানি সরবরাহের মধ্য দিয়ে এ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দক্ষিণ চট্টগ্রামের চার উপজেলায় মাত্র দুটি শিল্পকারখানা এবং হাজার খানেক আবাসিক গ্রাহককে সংযোগ দিতে পেরেছে ওয়াসা।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের বোয়ালখালী, পটিয়া, কর্ণফুলী ও আনোয়ারায় গড়ে ওঠা বিভিন্ন আবাসিক এলাকা, সরকারি ও বেসরকারি শিল্পপ্রতিষ্ঠান, কোরিয়ান ইপিজেডসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় সরবরাহের জন্য ভান্ডালজুড়ি পানি সরবরাহ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়। এর অংশ হিসেবে বোয়ালখালীর শ্রীপুর-খরণদ্বীপ ইউনিয়নের জ্যৈষ্ঠপুরা গ্রামে কর্ণফুলী নদীর পারে শোধনাগার নির্মাণ করা হয়। উদ্দেশ্য, কর্ণফুলী নদীর পানি পরিশোধন করে গ্রাহকদের সরবরাহ করা।
সংশ্লিষ্টরা জানান, ওয়াসা এখন গ্রাহক খুঁজছে। কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলার বিভিন্ন শিল্পকারখানায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান চালিয়ে নলকূপ থেকে পানি উত্তোলন বন্ধ করে ওয়াসা থেকে পানি নিতে বলছে শিল্পকারখানাকে।
বোয়ালখালী পৌর এলাকার বাসিন্দা আহমদ হোসেন সমকালকে বলেন, বাড়িতে নিজস্ব নলকূপ আছে। সেখান থেকে সুপেয় পানি আমরা ব্যবহার করি। এ জন্য বাড়তি কোনো খরচ করতে হয় না। কিন্তু ওয়াসার সংযোগ নিলে মাসে মাসে বিল গুনতে হবে।
পার্শ্ববর্তী উপজেলা পটিয়ার পৌর এলাকার বাসিন্দা আব্দুস সাত্তার বলেন, একদিকে বাসায় নলকূপ আছে। অন্যদিকে ওয়াসার পানি নিয়মিত পাওয়া যাবে কিনা সংশয় আছে। তা ছাড়া মাঝেমধ্যে লবণাক্ত পানি পাওয়া যাচ্ছে বলে জেনেছি। এসব কারণে ওয়াসার পানিতে আমাদের আগ্রহ তেমন নেই।
চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুহাম্মদ আনোয়ার পাশা সমকালকে বলেন, গ্রামের অনেক মানুষ জানেন না, তারা যে নলকূপ ব্যবহার করে পানি উত্তোলন করছেন, সে জন্য ওয়াসাকে নির্দিষ্ট হারে ফি দিতে হয়। এ ছাড়া আবাসিক কিংবা বাণিজ্যিকভাবে যারা নলকূপ থেকে পানি উত্তেলন করছেন, তাতে বিদ্যুৎ খরচ হচ্ছে। হিসাব করলে দেখা যাবে, ওয়াসার পানির মূল্য তুলনামুলক অনেক সাশ্রয়ী। এক হাজার লিটার পানির দাম ২০ টাকা।
ভান্ডালজুড়ি পানি শোধনাগার প্রকল্প পরিচালক ও ওয়াসার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী মো.
ওয়াসা বলছে, ভান্ডালজুড়ি প্রকল্প থেকে পর্যায়ক্রমে ১৫ হাজার আবাসিক গ্রাহককে পানির সংযোগ দেওয়ার প্রস্তুতি ও পরিকল্পনা রয়েছে ওয়াসার। প্রকল্প থেকে ৪ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হবে দক্ষিণ চট্টগ্রামের ১৩টি বাণিজ্যিক সংযোগে এবং ২ কোটি লিটার পানি সরবরাহ করা হবে চার উপজেলার আবাসিক গ্রাহকদের মধ্যে। ইতোমধ্যে ভান্ডালজুড়ি প্রকল্প থেকে পানি সরবরাহ শুরু করা হলেও সিইউএফএল শাটডাউন করায় প্রায় তিন মাস পানি সরবরাহ বন্ধ রাখা হয়। এখন এটি চালু করা হলো।
২০১৬ সালের জানুয়ারিতে একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন করা হয়। এর মেয়াদ ধরা হয়েছিল ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। তবে নির্মাণের বিভিন্ন পর্যায়ে জটিলতার কারণে কয়েক দফা মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৫ সালের জুন পর্যন্ত করা হয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা। পরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৯৯৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে ১ হাজার ১৫০ কোটি ৬৫ লাখ টাকা অর্থায়ন করেছে বাংলাদেশ সরকার, ৮২৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা দিয়েছে কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংক এবং ২০ কোটি টাকা চট্টগ্রাম ওয়াসার নিজস্ব তহবিল থেকে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর প রকল প উপজ ল সরক র নলক প
এছাড়াও পড়ুন:
বাজারে সবজির সরবরাহ বেড়েছে, নিম্নমুখী চালের দাম
ঈদের বন্ধের আমেজ কাটতেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে চট্টগ্রামের পাইকারি ও খুচরা বাজারগুলো। ক্রেতা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারগুলোতে বেড়েছে সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের সরবরাহ। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কয়েক দিনের ব্যবধানে কিছুটা কমেছে সবজির দাম। পেঁয়াজ, রসুন ও চালের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দামও নিম্নমুখী।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ঈদের ছুটি শুরু হওয়ার পর নগরের কাঁচাবাজারে সবজির সরবরাহ কমে যায়। ফলে দাম ছিল কিছুটা বাড়তি। গত রোববার ও সোমবারের দিকে নগরের আড়তগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা দরে। অধিকাংশ সবজির দামও ৪০ টাকার আশপাশে ছিল। তবে গত মঙ্গলবার থেকে আবারও বাজারে পুরোদমে সবজির সরবরাহ শুরু হয়েছে। যার কারণে দাম কমতে শুরু করেছে।
আজ শুক্রবার নগরের রিয়াজউদ্দিন বাজারের পাইকারি আড়তে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ২০ থেকে ৪০ টাকা দরে। বেশির ভাগ সবজির দাম প্রতি কেজি ১০ থেকে ৩৫ টাকা। তবে খুচরা বাজারগুলোতে প্রায় দ্বিগুণ দামে সবজি বিক্রি হতে দেখা যায়। নগরের বহদ্দারহাট, চকবাজার, সাব এরিয়া ও কাজির দেউড়ি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব বাজারে অধিকাংশ সবজির দাম ৬০ টাকার বেশি। লাউ, মিষ্টিকুমড়া ও ফুলকপির দাম কিছুটা কম। এসব সবজির দাম ৫০ টাকার আশপাশে। খুচরা বাজারগুলোতে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে ৮০ টাকা কেজি দরে। পরিবহন খরচ ও আগে কেনার অজুহাতে বাড়তি দাম নিচ্ছেন বিক্রেতারা। রিয়াজউদ্দিন বাজারের আড়তদার নুরুল ইসলাম বলেন, বাজারে সব সবজির দাম কম। কিন্তু খুচরা ব্যবসায়ীদের কারণে ভোক্তাদের ভোগান্তি হচ্ছে। আড়তের দামের দ্বিগুণ দামে তাঁরা সবজি বিক্রি করছেন।
সবজির বাজারের পাশাপাশি পেঁয়াজ, রসুন ও চালের দামও নিম্নমুখী। খাতুনগঞ্জের পাইকারি আড়তে আজ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৪৫ থেকে ৫২ টাকা দরে। খুচরা পর্যায়ে দাম ছিল ৬৫ থেকে ৭০ টাকা কেজি। অন্যদিকে রসুনের কেজি আড়তে ছিল ৮৫ থেকে ১১০ টাকা। খুচরায় সেটি ১০০ থেকে ১৩০ টাকা।
পাহাড়তলী চালের আড়তে মোটা চাল (গুটি, স্বর্ণা) কেজিপ্রতি ৪৮ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে জিরাশাইল ৭২ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত তিন দিন আগ থেকে চালের বাজার কিছুটা নিম্নমুখী বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। বস্তাপ্রতি (৫০ কেজি) চালের দাম কমেছে ৩০০ টাকা পর্যন্ত। পাহাড়তলী বণিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক নিজাম উদ্দিন বলেন, চালের সরবরাহ যথেষ্ট আছে। চালের দাম বাড়ার আশঙ্কা নেই এখন।