এনসিটিবির কারিকুলাম কমিটি থেকে রাখাল রাহাকে অপসরণের দাবি
Published: 18th, March 2025 GMT
ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত, কারিকুলামকে বিতর্কিত করা এবং সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের নাম ব্যবহার করার অভিযোগ তুলে রাখাল রাহা ওরফে সাজ্জাদুর রহমানকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) কারিকুলাম কমিটি থেকে অপসারণের দাবি জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) সকাল ১১টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানান সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর।
লিখিত বক্তব্যে জাহাঙ্গীর কবীর বলেন, সম্প্রতি এনসিটিবির চেয়ারম্যান বিতর্কিত রাখাল রাহাকে নিয়ে দায়সারা বক্তব্য দেওয়ায় তার প্রতিবাদে আজকের এই সংবাদ সম্মেলন। গত স্বৈরশাসকের আমলে চালু করা গণবিরোধী নতুন শিক্ষাক্রম বাতিলে আমাদের অংশগ্রহণ ছিল আপসহীন লড়াইয়ের। ২০২৩ সালে শুরু করে দীর্ঘ সংগ্রামের এই পথ পাড়ি দিতে আমাদেরকে অনেক ত্যাগ-তিতিক্ষার সম্মুখীন হতে হয়েছে। ন্যায়ের পক্ষে থেকেও আমরা তৎকালীন সরকারের রোষানলে পড়েছিলাম। রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় আমরা অনেকে জেল খেটেছি। আন্দোলনের শুরুটা দু’-এক জন করলেও পরবর্তী সময়ে তা গণমানুষের আন্দোলনে রূপ নেয়। ধীরে ধীরে আন্দোলন দানা বাঁধতে থাকে। দেশের শিক্ষিত জনসাধারণ সোচ্চার হয় সরকারের গণবিরোধী সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে। আমাদের আন্দোলন কোনো একক ব্যক্তির ফসল নয়। আমরা আন্দোলনে সম্মিলিতভাবে লড়েছি। তারই ধারাবাহিকতায় আন্দোলনের নামকরণও হয়েছিল সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলন।
তিনি বলেন, ২০২৩ সালের ১০ নভেম্বর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সংবাদ সম্মেলনে রাখাল রাহাকে শুধু লিখিত বক্তব্য দিতে দেওয়া হয়। পরে তিনি তাকে নিয়ে কমিটি গঠন করতে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। একপর্যায়ে গুম হওয়া, গ্রেপ্তার হওয়ার ভয় দেখিয়ে তার অফিসে ডেকে আগের কমিটির অনুমোদন ছাড়াই নতুন কমিটি ঘোষণা করতে বলেন। আগের কমিটির ১১ জনের মধ্যে মাত্র দুজনের উপস্থিতিতে নতুন কমিটি ঘোষণা করা হলে মেজোরিটির তোপের মুখে কমিটি স্থগিত করা হয়।
সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক বলেন, ২০২৩ সালের ২৩ নভেম্বর আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জাহাঙ্গীর কবীর ও কাজী সাইফুল হক পনিরকে এনসিটিবির দায়ের করা মতিঝিল থানার মামলায় গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। তাদের সাথে আরো গ্রেপ্তার হন আবুল হাসনাত ও গোলাম রাব্বি। আন্দোলনে সামনের সারিতে নেতৃত্ব দেওয়ায় মডারেটর তাপসী তাজ খানকে গ্রেপ্তার করতে অভিযান চালানো হয় ২৩ নভেম্বর। ২৪ নভেম্বর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের সমাবেশ হয়। ২৯ নভেম্বর আন্দোলনের আরেক নেতা আল আমিন হোসেনকে গ্রেপ্তার করলে আন্দোলন নেতৃত্বশূন্য হয়ে পড়ে এবং সচেতন অভিভাবক সমাজের ব্যানারে অ্যাডভোকেট মুসলিম বিন হাইয়ের নেতৃত্বে আন্দোলন চলতে থাকে। এই সময় রাখাল রাহার কোনো ভূমিকা আমরা দেখতে পাইনি।
তিনি বলেন, পরে সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের নেতারা ফেনীর বন্যাকবলিত এলাকায় ত্রাণ দিতে গেলে রাখাল রাহা সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের অথরিটিকে অবগত না করেই এই সংগঠনের নামে শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদ উদ্দিনের কাছে স্মারকলিপি দেন এবং এই আন্দোলন তার নেতৃত্বে হয়েছিল বলে উপদেষ্টাকে জানান। এই সংগঠনের নাম ব্যবহার করে তিনি এনসিটিবির পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জন কমিটির সদস্য সচিব নিযুক্ত হোন এবং এনসিটিবিতে একক আধিপত্য কায়েমের মাধ্যমে পাঠ্যপুস্তকে আদিবাসী গ্রাফিতি, জাতীয় সঙ্গীত ও জাতীয় পতাকা বইয়ের পিছনে ছাপানো, টেন্ডার কেলেঙ্কারি ও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত হানাসহ একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ড করতে থাকেন। রাখাল রাহা আমাদের সঙ্গে শেষদিকে যুক্ত হলেও তিনি উল্লেখযোগ্য কোনো ভূমিকা পালন করেননি। উপরন্তু, তিনি ঐতিহাসিক এই প্ল্যাটফর্মকে ব্যক্তিস্বার্থে ব্যবহার করেছেন। তা শুধু আমাদের সাথেই না, পুরো জাতির সাথে প্রতারণা।
জাহাঙ্গীর কবীর আরো বলেন, সম্প্রতি এনসিটিবির চেয়ারম্যান রিয়াজুল হাসান এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেছেন, রাখাল রাহার নেতৃত্বে অভিভাবকরা আন্দোলন করেছেন এবং সে কারণেই শিক্ষাক্রম পরিবর্তন হয়েছে। তার এই বক্তব্য দুরভিসন্ধিমূলক। এই বক্তব্য প্রত্যাহারের আহ্বান জানাচ্ছি। আমরা মনে করছি, বিতর্কিত রাখাল রাহাকে জাতির নায়ক বানিয়ে এনসিটিবি তাদের ব্যর্থতা, দুর্নীতি এবং অনিয়ম আড়াল করতেই এই অপকৌশলের আশ্রয় নিয়েছে। এনসিটিবির চেয়ারম্যানের এ বক্তব্য প্রত্যাহার করে গণমাধ্যমের মাধ্যমে ক্ষমা চাইতে হবে।
এ সময় তিনি ৯ দফা দাবি তুলে ধরেন সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবীর। দাবিগুলো হচ্ছে:
১.
২. যেহেতু, মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে এবং কোর্ট থেকে আদেশ জারি হয়েছে, সেহেতু শর্ত ও প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী আমাদের জব্দকৃত সকল মালামাল, সবার ফেসবুক আইডি এবং গ্রুপগুলো ফেরত দিতে হবে।
৩. প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবিলম্বে মামলায় ক্ষতিগ্রস্তদেরকে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।
৪. পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনে কোন কোন বিশেষজ্ঞ কোন কোন বিষয় পরিমার্জন করেছে, কত টাকা পারিশ্রমিক নিয়েছে, তার দালিলিক প্রমাণ উপস্থাপন করতে হবে।
৫. পাঠ্যপুস্তক মুদ্রণে ২০২৩ সালে যেখানে প্রাক্কলিত দরের চেয়ে জিরো পারসেন্ট এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে মাইনাস ভেরিয়েশনে কাজ পেলেও এবার কেন ২০ শতাংশ বাড়িয়ে প্রাক্কলিত দর করে আরো ২০-২১ শতাংশ গড়ে অর্থাৎ ৪১ শতাংশ ওভার প্রাইসিং রেটে প্রেসগুলোকে কাজ দেওয়া হয়েছে এবং এনসিটিবির সিন্ডিকেট কোটি টাকার দুর্নীতি করেছে বলে অভিযোগ এসেছে, তার তদন্ত করতে হবে।
৬. এনসিটিবি কর্তৃপক্ষ তাদেরকে কাজ দিয়ে সরকারের বিপুল অর্থের ক্ষতি করেছে, তার সুষ্ঠু তদন্ত করতে হবে।
৭. পত্রিকায় এসেছে, ৪০টি মুদ্রণ প্রতিষ্ঠান সিঙ্গেল বিডার হওয়ার পরও তাদেরকে কাজ দেওয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৮. অবিলম্বে শিক্ষা কমিশন গঠন করে যুগোপযোগী শিক্ষা নীতি এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও দেশীয় মূল্যবোধের আলোকে কারিকুলাম প্রণয়ন করতে হবে।
৯. ইউনেস্কোর পরামর্শ অনুযায়ী দেশের মোট জিডিপির ৬ শতাংশ শিক্ষা খাতে ব্যয় করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলন শেষে জাহাঙ্গীর কবীর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেন, যেসব স্কুলের শিক্ষার্থী এখনো বই পায়নি, আগামী ১০ দিনের মধ্যে তাদেরকে বই দিতে হবে। অন্যথায়, এনসিটিবি ঘেরাও করা হবে।
সঙ্গে সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন সম্মিলিত শিক্ষা আন্দোলনের সভাপতি কাজী সাইফুল হক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আল আমিন, জেসমিন, ডা. রিপা, তানিয়া আক্তার, কামাল হোসেন প্রমুখ।
ঢাকা/রায়হান/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর এনস ট ব র ২০২৩ স ল আম দ র হ র কর
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।