কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তির চ্যাটবটগুলোর নিরাপত্তা দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে ব্যবহারকারীদের ব্যক্তিগত তথ্য চুরির নতুন এক পদ্ধতির সন্ধান পেয়েছে সাইবার নিরাপত্তাবিষয়ক প্রতিষ্ঠান কাটো নেটওয়ার্কস। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, এ পদ্ধতি কাজে লাগিয়ে সহজেই ক্রোম ব্রাউজারে সংরক্ষণ করা পাসওয়ার্ড ও আর্থিক তথ্য চুরি করা সম্ভব।

কাটো নেটওয়ার্কস তাদের কাটো সিটিআরএল থ্রেট প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এআই মডেলের নিরাপত্তাব্যবস্থা ফাঁকি দিতে সক্ষম একটি কার্যকর ইনফোস্টিলার ম্যালওয়্যার তৈরি করেছেন এক গবেষক। এ পদ্ধতিতে নতুন ম্যালওয়্যার তৈরি করে সহজেই ক্রোম ব্রাউজারে সংরক্ষণ করা পাসওয়ার্ড, আর্থিক লেনদেনসংক্রান্ত তথ্য ও অন্যান্য সংবেদনশীল তথ্য চুরি করা সম্ভব। গবেষণায় দেখা গেছে, ডিপসিক আরওয়ান ও ভি থ্রি, মাইক্রোসফট কোপাইলট এবং ওপেনএআই এর জিপিটি-৪ও মডেলকে নির্দিষ্টভাবে পরিচালিত করলে হ্যাকারের নির্দেশনা অনুসারে কাজ সম্পাদন করতে পারে। গবেষকের কোনো পূর্ব অভিজ্ঞতা না থাকা সত্ত্বেও তিনি সফলভাবে এআইনির্ভর কোড ব্যবহার করে ম্যালওয়্যার তৈরি করতে পেরেছেন।

কাটো নেটওয়ার্কস জানিয়েছে, গবেষণায় ইমার্সিভ ওয়ার্ল্ড নামে একটি নতুন জেলব্রেক কৌশল ব্যবহার করা হয়েছে। এআই চ্যাটবটের প্রচলিত হ্যাকিং পদ্ধতিগুলো অকার্যকর হলেও পরোক্ষ উপায়ে কৌশলগত দুর্বলতাগুলো কাজে লাগানো সম্ভব। ডিপসিক মডেলের নিরাপত্তাত্রুটি আগে থেকেই আলোচনায় ছিল, তবে মাইক্রোসফট কোপাইলট ও ওপেনএআই এর জিপিটি-৪ও–এর মতো উন্নত নিরাপত্তাবেষ্টিত চ্যাটবটও এই কৌশলের মাধ্যমে নিরাপত্তা এড়ানো সম্ভব হয়েছে।

কাটো নেটওয়ার্কসের প্রধান নিরাপত্তা কৌশলবিদ এতাই মাওর বলেন, ‘আমাদের নতুন এলএলএম জেলব্রেক কৌশলটি এআই নিরাপত্তাব্যবস্থায় শনাক্ত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বাস্তবে তা সম্ভব হয়নি।’ প্রতিষ্ঠানটি জানিয়েছে, গবেষণার ফলাফল ওপেনএআই, মাইক্রোসফট ও গুগলের মতো প্রযুক্তিপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে পাঠানো হয়েছে। ডিপসিক এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি। তবে ওপেনএআই ও মাইক্রোসফট বিষয়টি স্বীকার করেছে। গুগল বিষয়টি স্বীকার করলেও গবেষকের দেওয়া কোড পর্যালোচনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে।

সূত্র: জেডডিনেট

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন টওয

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ