সাতক্ষীরায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালের অবশিষ্ট অংশ বুলডোজার দিয়ে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা। বুধবার (১৯ মার্চ) ভোররাত আনুমানিক ৪টার দিকে এটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়। 

২০২১ সালে সাতক্ষীরা শহরের খুলনা রোড মোড়স্থ সদর হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় জেলা পরিষদের উদ্যোগে শেখ মুজিবর রহমানের ম্যুরাল তৈরি করা হয়। পরে মোড়টির নামকরণ করা হয় বঙ্গবন্ধু স্কয়ার মোড়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর মোড়টির নামকরণ করা হয় শহীদ আসিফ চত্বর। ওই দিন সন্ধ্যায় প্রথমবারের মতো শেখ মুজিবর রহমানের ম্যুরাল ভেঙে ফেলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

পরবর্তীতে চলতি বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি দ্বিতীয়বারের মতো ম্যুরালটি ভাংচুর করা হয়। সর্বশেষ আজ বুধবার (১৯ মার্চ) ভোর রাতে বুলডোজার দিয়ে ম্যুরালের শেষ চিহ্নটুকু ভেঙে ফেলা হয়।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, সাতক্ষীরার আহ্বায়ক আরাফাত হোসাইন, সদস্য সচিব সুহাইল মাহদীন, মুখ্য সংগঠক আল শাহরিয়ার, যুগ্ম আহ্বায়ক ওমর তাসনিম রাহাত এ অভিযানে নেতৃত্ব দেন। এ সময় ‘আওয়ামীলীগের আস্তানা, ভেঙে দাও, গুঁড়িয়ে দাও’ এ ধরনের নানা স্লোগানে শহরের খুলনা রোড মোড় মুখরিত করে তোলে ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীরা।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাতক্ষীরার আহ্বায়ক আরাফাত হোসাইন বলেন, ‘‘ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের শেষ চিহ্নটুকু আমরা সাতক্ষীরার মাটি থেকে মুছে ফেলতে চাই। যতদিন ছাত্র জনতার সৈনিকরা আছে, ততদিন বাংলাদেশের মাটিতে ফ্যাসিস্ট শক্তি আর ফিরে আসতে পারবে না।’’

ঢাকা/শাহীন/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

ভারতীয় সেনাবাহিনীর হিন্দুধর্মের প্রতি আনুগত্য আর গোপন নেই, কেমন এমন সমালোচনা হচ্ছে

ভারতের সেনাবাহিনী থেকে ২০২১ সালে লেফটেন্যান্ট স্যামুয়েল কমলেসানকে বরখাস্ত করা হয়। কারণ, খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী এই সেনা কর্মকর্তা তাঁর রেজিমেন্টের মন্দির ও গুরুদুয়ারার পবিত্র স্থানে প্রবেশ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। বহিষ্কারাদেশের বিরুদ্ধে তিনি আইনের আশ্রয় নেন। সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট তাঁকে পুনর্বহাল করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। এতে ধর্মের দিক থেকে বৈচিত্র্যময় ভারতীয় সেনাবাহিনীর ভেতরকার সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিভাজনরেখাটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর ধর্ম নিয়ে বিভাজন পুরোনো। কিন্তু এত দিন তা কখনো প্রকাশ্যে আসেনি। এতকাল তা নিয়ে কেবল ব্যক্তিগত পর্যায়ে আলোচনা হতো। সংবেদনশীলতা ও প্রাতিষ্ঠানিকতার দোহাই দিয়ে তা চেপে রাখা হতো।

কমলেসানকে বরখাস্তের আদেশের মধ্য দিয়ে ভারতীয় সেনাবাহিনীর এত বছরের স্পর্শকাতর বিষয়টি প্রকাশ্যে চলে এসেছে। এটি কেবল কোনো একজন সেনা কর্মকর্তাকে ধর্মীয় কারণে বরখাস্তের ঘটনা নয়, বরং সেনাবাহিনীর একটি গভীর সমস্যার উন্মোচন। এটা পুরো বাহিনীকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে এবং অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলদের সাবধানী পর্যবেক্ষণ দিতে বাধ্য করেছে।

বিষয়টি নিয়ে অবসরপ্রাপ্ত জেনারেলরা সম্প্রতি সংবাদপত্রে মতামত লিখেছেন। এসব লেখালেখিতে তাঁরা বলতে চেষ্টা করেছেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে ধীরে ধীরে ‘নতুন স্বাভাবিকতা’ গড়ে উঠছে। বাহিনীতে দেশপ্রেম, বিশ্বাসযোগ্যতা ও জাতীয় সংহতিকে দেশের প্রধান ধর্মের দৃশ্যমান অনুসরণের সঙ্গে যুক্ত করা হচ্ছে। এ পরিবর্তন ভারতীয় সেনাবাহিনীর রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ থাকার প্রধান যে নীতি, সেটার একেবারে উল্টো।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর নিয়োগব্যবস্থা কয়েক শতাব্দীর ঐতিহ্য থেকে গড়ে উঠেছে। সেনাবাহিনীকে দেশটির সবচেয়ে বড়, সবচেয়ে দৃশ্যমান ও সমাজের সঙ্গে সবচেয়ে গভীরভাবে যুক্ত বাহিনী হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু সেই সেনাবাহিনীই গত এক দশকে বিমানবাহিনী বা নৌবাহিনীর তুলনায় রাজনৈতিক প্রভাবের বিষয়ে অনেক বেশি স্পর্শকাতর হয়ে উঠেছে।

বিস্তৃত সামাজিক ভিত্তিতে ফাটল

ভারতের বিমান ও নৌবাহিনীর নিয়োগব্যবস্থা মূলত প্রযুক্তি ও দক্ষতাভিত্তিক। এই দুই বাহিনীতে প্রযুক্তিতে দক্ষ লোকদের অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু সেনাবাহিনীতে নিয়োগের সামাজিক ভিত্তি অনেক বেশি বিস্তৃত। অঞ্চল, জাতি ও সম্প্রদায়গত সম্পর্ক এই বাহিনীর গভীরে প্রোথিত। এ প্রথা উনিশ শতকের মাঝামাঝি ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে। এই বিস্তৃতি সেনাবাহিনীকে সমাজ বা রাজনৈতিক প্রভাবের প্রতি অধিকতর সংবেদনশীল করে তুলেছে।

এর সঙ্গে যোগ হয়েছে আরেকটি বিষয়, তা হলো জনসম্পৃক্ততা। সরকারের সরাসরি তত্ত্বাবধানে সেনাবাহিনী অন্য দুই বাহিনীর তুলনায় বেশি কাজ করে। এটা দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। বিদ্রোহ দমন, দুর্যোগে ত্রাণ ও উদ্ধার কার্যক্রম পরিচালনা এবং অশান্ত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীকে প্রতিনিয়ত সাধারণ মানুষের সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে হয়।

এসব কিছুর কারণে সেনাবাহিনী রাজনৈতিক যোগাযোগ ও সামাজিক চাপের প্রতি বিশেষভাবে সংবেদনশীল হয়ে উঠেছে। কিন্তু তুলনামূলকভাবে বিচ্ছিন্ন ও প্রযুক্তিনির্ভর বিমান ও নৌবাহিনীর ওপর এমন কোনো চাপ নেই।

ভারতের সেনাবাহিনীতে নিয়োগের সামাজিক ভিত্তি অনেক বেশি বিস্তৃত। অঞ্চল, জাতি ও সম্প্রদায়গত সম্পর্ক এই বাহিনীর গভীরে প্রোথিত। এ প্রথা উনিশ শতকের মাঝামাঝি ব্রিটিশ আমল থেকে চলে আসছে।

জনসম্মুখে ব্যাপক উপস্থিতি সেনাবাহিনীকে আরও বেশি রাজনৈতিক প্রভাব–বলয়ের কাছাকাছি নিয়ে এসেছে। বিজেপির নেতৃত্বাধীন তিনটি সরকারের টানা শাসন এ বাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে আরও বেশি নাজুক করে তুলেছে। ফলে ভারতীয় সেনাবাহিনীর যুদ্ধক্ষেত্রের বিন্যাস (ফরমেশন), সামরিক অভিযান, মহড়া ও অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক উদ্যোগের নামকরণে ধর্মীয় প্রতীক ও হিন্দুপুরাণ যুক্ত হতে শুরু করেছে।

দেব–দেবী, পৌরাণিক মহাকাব্য ও প্রতীকী যোদ্ধাদের আলোচনা একসময় রেজিমেন্টের অনানুষ্ঠানিক কাহিনি ও ইউনিটের লঙ্গরখানার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু এখন এসব বিষয়কে সেনাবাহিনীর দাপ্তরিক নামকরণ ও নীতিমালায় আনুষ্ঠানিকভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে, যা ইতিহাসে আর কখনো দেখা যায়নি।

ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রতীক ও আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম দীর্ঘদিন ধরে ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের ভিত্তিতে পরিচালিত হয়ে এলেও এখন তা বদলে যেতে শুরু করেছে। ক্রমশ তা সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ধর্মের প্রতীককে আলিঙ্গন করতে শুরু করেছে, যা একসময় কল্পনাও করা যেত না।

ভারতের সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ভারতীয় সেনাবাহিনীর হিন্দুধর্মের প্রতি আনুগত্য আর গোপন নেই, কেমন এমন সমালোচনা হচ্ছে