সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম ধর্মীয় তীর্থস্থান হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানাধীন লাঙ্গলবন্দ এলাকা। এখানকার পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদে স্নান করার মাধ্যমে পাপ মোচন হয় বলে বিশ্বাস সনাতন ধর্মাবলম্বীদের। সেই পূণ্যস্থান নিয়ে এবার বিভক্তি ছড়িয়ে পড়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের মাঝে। 

আসন্ন মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ পূণ্য স্নান আয়োজন নিয়ে পাল্টাপাল্টি দুটি কমিটির মাঝে দেখা দিয়েছে উত্তেজনা। এই উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়েছে সনাতন ধর্মালম্বী সকলের মাঝে। যার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে বুধবার ১৯ মার্চ দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত প্রস্তুতি সভায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী লাঙ্গলবন্দ পূণ্য স্নান উৎসব আয়োজনে একটি কমিটি রয়েছে যা দীর্ঘদিন যাবত অত্যন্ত সফলভাবে এই আয়োজনটি করে আসছে। এই কমিটির সভাপতি সরোজ কুমার সাহা এবং সাধারণ সম্পাদক অশোক কর্মকার।

এই কমিটি আর সাথে পূজা উদযাপন পরিষদ এবং হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ মিলেমিশে এই স্নান উৎসব আয়োজন করে আসছে অনেক বছর যাবত। কিন্তু হঠাৎ করে কিছুদিন আগে আরেকটি পক্ষ এই পূণ্য স্নান আয়োজনে স্বঘোষিত একটি কমিটি ঘোষণা করে আর এরপর থেকেই শুরু হয় বিভক্তি আর উত্তেজনা।

সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, নারায়ণগঞ্জের সনাতন সম্প্রদায়ের মাঝে দীর্ঘদিন যাবত যে ঐক্য বিরাজ করছিলো তা ভেঙ্গে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা হচ্ছে । ৫ আগষ্টের রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর একটি মহল এই বিভক্তির বিষবাস্প ছড়িয়ে ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে যা নারায়ণগঞ্জের সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন ভালো চোখে দেখছে না।

ঘটনা সূত্রে প্রকাশ, নারায়ণগঞ্জের মানুষ  সব সময়ই শান্তিপ্রিয়। সকল ধর্মের মানুষ এখানে মিলেমিশে বসবাস করে আসছে। সেইসাথে সকল ধর্মের উৎসব পার্বনও এখানে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রেখে পালন করা হয়ে থাকে।

এখানে পবিত্র রমজান মাসে শারদীয় দূর্গাপূজা পালিত হয়েছে, কোথাও কোনো ধরনের অপ্রিতিকর ঘটনা ঘটেনি। সাম্প্রদায়ীক সম্প্রীতির এই অনন্য নজির নারায়ণগঞ্জে চলে আসছে সুদীর্ঘকাল যাবত।

নারায়ণগঞ্জের সনাতন সম্প্রদায়ের সমস্যা সমাধানে দুটি সংগঠন সবসময় সক্রিয় ভূমিকা পালন করে এসেছে। এর একটি হলো পূজা উদযাপন পরিষদ আরেকটি হলো হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদ।

বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন থেকে শুরু করে হিন্দু সম্প্রদায়ের নানা সমস্যা সমাধানে প্রশাসন ও সরকারের সাথে সমন্বয় সাধনের কাজটি সব সময়ই অত্যন্ত দক্ষতার সাথে করে এসেছে এই সংগঠন দুটি।

এছাড়া নারায়ণগঞ্জের বন্দর থানয় অবস্থিত হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্যতম প্রধান তীর্থস্থান লাঙ্গলবন্দের অষ্টমী স্নান উদযাপনের জন্যেও একটি কমিটি রয়েছে যা দীর্ঘকাল যাবত এই স্নান কাজ পরিচালিত করে আসছে। সকল সরকারের আমলেই তারা মিলে মিশে তাদের দায়িত্ব পালন করে আসছে।

নারায়ণগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায়ের সাথে কথা বলে জানা গেছে, গত ৫ আগষ্টের পরপর পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে নারায়ণগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায়ের মাঝে যে আতঙ্ক বিরাজ করছিলো তা দুর করতে পূজা উদযাপন পরিষদ ও হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ নিরলসভাবে কাজ করেছেন।

নারায়ণগঞ্জ বিএনপি, জমায়াত, হেফাজতে ইসলাম, ইসলামী আন্দোলনসহ সমমনা রাজনৈতিক দলগুলো নেতৃবৃন্দের সাথে সমন্বয় করে হিন্দু ধর্মের উপাসনালয় ও তাদের বাড়িঘর পাহারা দেওয়ার বন্দোবস্ত করেছেন যাতে করে তাদের মন থেকে সেই আতঙ্ক দুর হয়েছে এবং তারা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পেরেছেন।

তাদের মতে, ৫ আগষ্টের পর একটি নতুন চক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে নারায়ণগঞ্জের হিন্দু সম্প্রদায়ের এই ঐক্য বিনষ্ট করার জন্যে। তাদেরকে ইতিপূর্বে কখনো মাঠে দেখা যায়নি। হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রান্তিক জনগোষ্ঠি তাদের দু:সময়ে এদেরকে কখনো পাশে পাননি। এসব ভূইফোড় নেতাদের ৫ আগষ্টের পর উদ্ভব হয়েছে।

তারা নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্যে আমাদের মাঝে বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছে। যার প্রমাণ পাওয়া গেছে ইতিমধ্যে। গত কিছুদিন পূর্বে লাঙ্গলবন্দের স্নান উৎসব উদযাপনের জন্যে নতুন একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে অথচ আমাদের আগেরই একটি কমিটি রয়েছে যারা বিগত সময়গুলোতে অত্যন্ত সফলভাবে স্নান উৎসব আয়োজন করে আসছে।

বিভক্তি কখনো কল্যাণ বয়ে আনেনা। আর যারা বিভক্তি সৃষ্টি করছে তাদেরকে বিগত সময়ে কখনো আমাদের সুখ দু:খে পাওয়া যায়নি। আমরা এ বিভক্তি চাই না, আমরা চাই ঐক্য। আমরা চাই সকলে মিলেমিশে নারায়ণগঞ্জে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে।
 

.

উৎস: Narayanganj Times

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ র স ন ন উৎসব ল ঙ গলবন দ ৫ আগষ ট র র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা

চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।

কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।

এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।

অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।

একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।

এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।

যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সুন্দরবনে দুবলার চরে রাস উৎসব শুরু আজ, এবারও নেই মেলার আয়োজন
  • শেফালি আর দীপ্তিতে নতুন মুম্বাইয়ে নতুন বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ভারত
  • ‘মবের’ পিটুনিতে নিহত রূপলাল দাসের মেয়ের বিয়ে আজ
  • এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
  • ডাইনির সাজে শাবনূর!
  • প্রার্থনার সুরে শেষ হলো ‘ফাতেমা রানীর’ তীর্থোৎসব 
  • ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
  • টগি ফান ওয়ার্ল্ডে উদযাপিত হলো হ্যালোইন উৎসব
  • উদ্ভাবন–আনন্দে বিজ্ঞান উৎসব
  • নবীনদের নতুন চিন্তার ঝলক