রাজনৈতিক দলগুলোর কোনো অনুশোচনা নেই
Published: 21st, March 2025 GMT
ফেসবুকে অনেক অপতথ্য দেখি। পোস্টদাতারা অনেকেই আন্ডারগ্রাউন্ড কিংবা ফেক আইডি থেকে গুজব ছড়ায়। তার ওপর আছে আশোভন মন্তব্য, খিস্তিখেউড়, ট্রল। যে যেমন পরিবেশে বড় হয়েছে, শৈশবে বাড়ির লোকেদের যে রকম আচরণ করতে দেখেছে, সেখান থেকেই তারা এসব শিখেছে। এ তো গেল ফেসবুক নিয়ে একটা গড়পড়তা সাধারণ ধারণা। আমি কারও কারও পোস্ট ফলো করি। আবার অনেকেরটা নাম দেখেই বুঝে যাই যে এগুলো আমার হজম হবে না। আমি সেসব উপেক্ষা করি। তার মধ্যেই কিছু কিছু ইতিবাচক ও মনকাড়া লেখা নজর কাড়ে। সম্প্রতি এক ফেসবুক বন্ধুর একটা পোস্টে একটা তিতিরের সঙ্গে মাওলানা রুমির কথোপকথন পড়লাম। পাখিটি রুমিকে তিনটি পরামর্শ দিয়েছিল। শেষ পরামর্শটি ছিল: ‘সবাইকে উপদেশ দিতে যেয়ো না। শুধু তাদের উপদেশ দাও, যারা সেটা শুনবে, মনে রাখবে। মনে রেখো, কিছু কাপড় এত জীর্ণ হয়ে যায়, যা আর কখনো সেলাই করা যায় না।’ বাংলায় একটা প্রবচন আছে—কয়লার ময়লা যায় না ধুলে। স্কুলে আমাদের দিনিয়াত স্যার প্রায়ই এটা সুর করে বলতেন আর আমাদের ভালো হওয়ার উপদেশ দিতেন।
কেন জানি তিতিরের এই কথাগুলো পড়তে না পড়তেই চোখের সামনে আমাদের দেশের কিছু রাজনীতিবিদ ও রাজনৈতিক দলের চেহারা ভেসে উঠল। তাদের অনেককে দেখছি অনেক বছর ধরে। কাউকে কাউকে দেখছি তাদের রাজনৈতিক জীবনের জন্মক্ষণ থেকে। সারা দুনিয়ায় এত ওলট–পালট হলো, এত কিছু বদলে গেল, এমনকি আমাদের দেশের মানুষের মনও আর আগের মতো নেই, কিন্তু এসব রাজনীতিকের মধ্যে পরিবর্তনের কোনো ছোঁয়া লেগেছে বলে মনে হয় না। সেই একই রকম চিন্তা, কথা, আস্ফালন।
মানুষ যে কত সহজেই নিজের কথা থেকে সরে আসে, তা আমাদের বড় বড় নেতাকে দেখলেই বোঝা যায়। এ জন্য গবেষণা করার দরকার নেই। আমি কয়েকটি উদাহরণ দিচ্ছি।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চ বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় নেতা শেখ মুজিবুর রহমান বলেছিলেন, ‘আমি প্রধানমন্ত্রিত্ব চাই না। আমি বাংলার মানুষের অধিকার চাই।’ পরে তিনি প্রধানমন্ত্রী হলেন। রাষ্ট্রপতি হলেন। সব দল নিষিদ্ধ করে বাকশাল নামে একটিমাত্র দল বানালেন, যার সর্বময় ক্ষমতা রাখলেন নিজের হাতে। নির্বাচনের মাধ্যমে নেতা পরিবর্তনের কোনো সুযোগ তিনি রাখলেন না। একটা সহিংস অভ্যুত্থানের শর্ত তিনি নিজেই তৈরি করে দিলেন।
মনে আছে, ১৯৭৬ সালের ১ মে জেনারেল জিয়াউর রহমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মে দিবস উপলক্ষে আয়োজিত এক সমাবেশে কমব্যাট পোশাক পরে ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আমি রাজনীতিবিদ নই। আমি একজন সৈনিক। আমি ব্যারাকে ফিরে যাব।’ তিনি ব্যারাকে ফিরে যাননি। সেনাবাহিনীতে চাকরি করা অবস্থায় তিনি একটা নির্বাচনের মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি হলেন। বিএনপি নামে একটা দল বানালেন। তারপর নিজেই নিজেকে আহ্বায়ক করে ৭৬ সদস্যের একটি কমিটি ঘোষণা করলেন।
১৯৮৬ সালের কথা। স্বঘোষিত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করলেন। খালেদা জিয়া আর শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পাঁচ দফা দাবির ভিত্তিতে এরশাদবিরোধী তুমুল আন্দোলন চলছে। উভয়েই ঘোষণা দিলেন, নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীন নির্বাচন হতে হবে। ১৯ মার্চ শেখ হাসিনা চট্টগ্রামের লালদীঘি ময়দানে এক সমাবেশে হুংকার দিলেন, পাঁচ দফা এড়িয়ে এরশাদের পাতানো নির্বাচনে যারা অংশ নেবে, তাদের জাতীয় বেইমান হিসেবে চিহ্নিত করা হবে। ২২ মার্চ তিনি ১৮০ ডিগ্রি ঘুরে গিয়ে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
এরাশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় খালেদা ও হাসিনা দুজনেই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, এরশাদের পতন হলে তাঁরা অনেকগুলো কাজ করবেন। তার মধ্যে কয়েকটি হলো: কালাকানুন বাতিল, সংবাদপত্রের স্বাধীনতা, বেতার-টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসন, নির্বাহী বিভাগ থেকে বিচার বিভাগকে আলাদা করা। ১৯৯১ সাল থেকে তাঁরা পালা করে দেশ শাসন করেছেন। তাঁরা অনেক উন্নয়নমূলক কাজ করেছেন। অনেক রাস্তা, সেতু, ভবন তৈরি করেছেন। কিন্তু প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী এ কাজগুলো করার সময় পাননি। টেলিভিশন নিয়ে তো কত কথা হলো—এরশাদ আমলে এটি ছিল ‘সাহেব-বিবি গোলামের বাক্স’। খালেদা জিয়ার আমলে এটি হলো ‘বিবি-গোলামের বাক্স’। হাসিনার আমলে এটাকে ব্যঙ্গ করে বলা হলো ‘বাজানের বাক্স’। টেলিভিশনের কপালে আর স্বায়ত্তশাসন জুটল না। পাবলিকের টাকায় মুফতে এ রকম একটা প্রচারযন্ত্র হাতের মুঠোয় পেলে কে সেটা ছাড়ে!
শেখ হাসিনা প্রায়ই বলতেন, তিনি সব হারিয়েছেন। তাঁর চাওয়া–পাওয়ার কিছু নেই। দেখা গেল, তিনি ১০ কাঠা জমির লোভও সামলাতে পারলেন না। একটা মানুষের কত প্রয়োজন! অনুগতদের দিয়ে তিন তিনটা তামাশার নির্বাচন করিয়ে তিনি হয়ে গেলেন ‘গণতন্ত্রের মানসকন্যা’। দলদাসেরা তাঁকে ‘দেশরত্ন’ বলতে শুরু করল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠে এক সমাবেশে কবি-কথাসাহিত্যিক সৈয়দ শামসুল হক তো মাইক্রোফোনে জাতির উদ্দেশে ঘোষণাই দিয়ে দিলেন, ‘এখন থেকে আপনারা সবাই তাঁকে দেশরত্ন বলবেন।’ তাঁকে নিয়ে গান বাঁধলেন জনপ্রিয় শিল্পী মমতাজ। এসব দেখে-শুনে আমাদের ‘বুকটা ফাইট্টা যায়’। কী দেশে আমরা করি বাস। কেমন তার নেতা। দলদাসে দেশটা ভরে গেছে। ‘হবুচন্দ্র রাজার গবুচন্দ্র মন্ত্রী’দের একটাই ধ্যান ছিল—দলের জীবিত নেতার বন্দনা, দলের প্রয়াত নেতার ‘পূজা’, নানান অসিলায় তাঁর কবরে গিয়ে হুড়োহুড়ি করা।
তিতিরের পরামর্শের কথায় ফিরে আসি। এটি রূপক অর্থে আমাদের রাজনীতিতে এখনো প্রযোজ্য। রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের নেতার পরিবার ও একটি চক্রের বাইরে কারও কথা শুনতে চায় না। দলগুলো একেকটা সিন্ডিকেট হয়ে উঠেছে। এটাকেই ভবিতব্য ধরে দলে দলে লোক ভেড়ার পালের মতো তাদের আশপাশে জুটেছে। তারা জনগণের সেবার জন্য পাগল। ৫৩ বছর ধরে তারা শুধু প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি বইয়ে দিয়েছে। আজ পর্যন্ত তারা কেউ বলেনি, তাদের কোনো ভুল হয়েছে। সুতরাং অনুতাপের তো প্রশ্নই ওঠে না।
সবাই বলছেন, সমাজের সব স্তরে ভয়াবহ রকমের দলীয়করণ হয়েছে। আমরা এটা থেকে মুক্তি চাই। আমরা দক্ষ প্রশাসন চাই। দলগুলো এ ব্যাপারে যেসব প্রতিশ্রুতি দেয়, তা সবই কাগুজে। তা না হলে তারা কেন সরকারি চাকরিতে থাকা চিকিৎসক, প্রকৌশলী, কৃষিবিদদের নিয়ে দলীয় ফোরাম করে? আর ওই কর্মকর্তারাই–বা কেন দলবাজি করেন? ধান্দা একটাই—‘আত্ম-উন্নয়ন’!
পুলিশের বিরুদ্ধে কত অভিযোগ। অথচ পুলিশ বিভাগ থেকেই একটা পুলিশ কমিশন করার দাবি উঠেছিল। রাজনৈতিক সরকারগুলো তাতে কান দেয়নি। তারা পুলিশ বাহিনীকে দলের লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করেছে। যে পুলিশ নাসিম আর মতিয়াকে পিটিয়েছে, সেই পুলিশই পিটিয়েছে খোকা আর জয়নালকে। এ থেকেও তারা শিক্ষা নেয় না।
দেশে এখন একটা বিশেষ পরিস্থিতি। নির্বাচন নিয়ে কথা হচ্ছে। কোনো কোনো দল তো নির্বাচনের জন্য অস্থির হয়ে উঠেছে। রাষ্ট্র সংস্কার নিয়ে কথা হচ্ছে। কেউ কেউ বলছেন, সংস্কার করবে নির্বাচিত সরকার। তাদের কি বিশ্বাস করা যায়?
দেশটা সত্যিই একটা ডিজিটাল যুগে ঢুকে গেছে। যতই লুকোছাপার চেষ্টা হোক না কেন, অনেক পুরোনো তথ্যই এখন হাতের নাগালে। কে কবে কখন কোথায় কী বলেছিলেন, তার অনেক কিছুই এখন জানা যায়। ফেসবুকে প্রায়ই এ রকম অডিও কিংবা ভিডিও দেখি।
প্রধান উপদেষ্টার কথাবার্তা নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন। প্রশ্ন উঠেছে উপদেষ্টাদের যোগ্যতা নিয়ে। অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মতলব’ নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে কারও কারও মনে। অন্তর্বর্তী সরকার কী চায়, ঐকমত্য কমিশনের ‘ধান্দা’ কী, এসব নিয়ে টক শো তোলপাড় হচ্ছে। আমার এসবে মাথাব্যথা নেই। আমার চাওয়া একটাই, আমি রামরাজত্ব চাই না, খিলাফতও চাই না। ভারত, পাকিস্তান, ইরান আমার মডেল নয়। আমি চাই একটা আধুনিক বিজ্ঞানমনস্ক সমাজ, যে সমাজ হবে সৃজনশীল। আমাদের পাল্লা দিতে হবে ইউরোপের সঙ্গে, উত্তর আমেরিকার সঙ্গে, পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে। আমাদের এমন সমাজ গড়তে হবে, যে সমাজ দক্ষ কর্মজীবী ও সৃজনশীল নাগরিক তৈরি করবে; দলদাস, বাটপার, লুটেরা কিংবা গোঁয়ার-গোবিন্দ মব তৈরি করবে না।
মহিউদ্দিন আহমদ লেখক ও গবেষক
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র জন ত ক মন ত র ফ সব ক আম দ র দলগ ল এরশ দ সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।