ইউক্রেনের পারমাণবিক কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিতে চায় যুক্তরাষ্ট্র
Published: 21st, March 2025 GMT
রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করতে ইউক্রেনের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে এ প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি।
এমন সময় এই প্রস্তাবের বিষয়টি সামনে এসেছে, যখন ৩০টি দেশের সামরিক প্রধানেরা গতকাল বৃহস্পতিবার যুক্তরাজ্যে মিলিত হন। রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে সম্ভাব্য যুদ্ধবিরতির সুরক্ষা দিতে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের পরিকল্পনা নিয়ে তাঁদের আলোচনা করার কথা।
আগের দিন ট্রাম্প ও জেলেনস্কি ফোনে কথা বলেন। এরপর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, রাশিয়ার জ্বালানি ব্যবস্থা ও অবকাঠামোয় হামলা বন্ধে প্রস্তুত কিয়েভ। আগের দিন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও ইউক্রেনে একই ধরনের হামলা না চালানোর বিষয়ে সম্মতির কথা জানান।
পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ট্রাম্পের সঙ্গে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলেনস্কি। জাপোরিঝঝিয়া বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘আমরা শুধু একটি পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে কথা বলেছি। আর সেটা এখন রাশিয়ার দখলে রয়েছে।’ ফিনল্যান্ড সফররত জেলেনস্কি ভার্চ্যুয়াল এক ব্রিফিংয়ে এ কথা বলেন।
ফোনালাপের বিষয়ে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, রাশিয়াকে ছাড় দিতে ট্রাম্পের কাছ থেকে কোনো ধরনের চাপ আছে বলে তিনি মনে করেননি।
তবে বিস্তৃত পরিসরে যুদ্ধবিরতি এখনো অধরা বলেই মনে হচ্ছে। কারণ, ট্রাম্পের সঙ্গে ফোনালাপে ইউক্রেনে পশ্চিমা সামরিক সহযোগিতা বন্ধের ওপর জোর দিয়েছেন পুতিন।
যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার ও ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, ইউক্রেনে সেনা পাঠাতে আগ্রহী যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দেশও সেনা পাঠাতে প্রস্তুত। তবে ঠিক কতগুলো দেশ আগ্রহী, তা স্পষ্ট নয়।
যুক্তরাজ্যের সম্মেলনে বক্তব্য দেওয়ার কথা স্টারমার ও মাখোঁর। ইউক্রেনে শান্তিরক্ষী মোতায়েনের অংশ হিসেবে একটি জোট গড়ার চেষ্টা করছেন দুই নেতা। ট্রাম্প রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ শুরুর পর তৎপর হন স্টারমার ও মাখোঁ।
এমন সময় এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেনে পশ্চিমা সহায়তা বন্ধের শর্ত দিয়েছেন পুতিন। এ ছাড়া যুদ্ধবিরতি চুক্তির অংশ হিসেবে ইউক্রেনের মাটিতে বিদেশি সেনার উপস্থিতিও প্রত্যাখ্যান করেছেন তিনি।
‘যুদ্ধের অবসান’
জেলেনস্কির সঙ্গে আলাপের পর বুধবার ট্রাম্পের মনোভাব অনেকটা ইতিবাচক মনে হয়েছে। হোয়াইট হাউস বলেছে, দুজনের মধ্যে ‘চমৎকার’ আলাপ হয়েছে। যদিও সম্প্রতি হোয়াইট হাউসের ওভাল অফিসে সরাসরি সম্প্রচার চলাকালে দুজনের উত্তপ্ত বাক্যবিনিময় হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মাইক ওয়ালৎজ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও এক যৌথ বিবৃতিতে বলেছেন, ইউক্রেনের বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা ও পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো নিয়ে কথা বলেছেন ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, এগুলো পরিচালনায় ওয়াশিংটন ‘খুবই সহায়ক’ ভূমিকা রাখতে পারে। বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এসব বিদ্যুৎকেন্দ্রে আমেরিকার মালিকানা, সেসব স্থাপনাকে সর্বোচ্চ সুরক্ষা দিতে পারে।
যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়, ইউরোপ থেকে কিয়েভ যাতে আরও আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পায়, সে সহযোগিতা দেওয়ার বিষয়ে অঙ্গীকার করেছেন ট্রাম্প। এর আগে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেওয়া পোস্টে তিনি বলেছেন, পূর্ণ একটি যুদ্ধবিরতিতে পৌঁছানোর প্রচেষ্টা ‘একেবারে ঠিক পথেই এগোচ্ছে’।
জেলেনস্কি আরও জানিয়েছেন, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে নতুন করে আলোচনার জন্য সৌদি আরবে বৈঠকে বসতে পারেন ইউক্রেন ও যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা। আগামী সপ্তাহের শুরুতে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার কর্মকর্তাদেরও বৈঠক করার কথা রয়েছে।
এদিকে রাশিয়া ও ইউক্রেন ৩৭২ জন বন্দিবিনিময় করেছে। গত বুধবার মস্কো এ কথা জানিয়েছে। ট্রাম্প ও পুতিনের ফোনালাপের পর সদিচ্ছার প্রকাশ হিসেবে এই বন্দিবিনিময় হয়।
এ ছাড়া যুদ্ধ বন্ধের এই প্রচেষ্টার মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলার অভিযোগ করেছে কিয়েভ ও মস্কো।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইউক র ন র প র বল ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।