এ দেশে গবেষকদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে রাজনীতি। রাজনীতিবিদেরা নিজেরা নিজেদের স্বার্থে বয়ান তৈরি করেন। ফলে মুক্তিযুদ্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রশ্নাতীত প্রসঙ্গগুলো জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে ওঠে গবেষকদের জন্য। লেখা হয় না ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য।

মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বাধীনতা উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত স্মারক বক্তৃতায় উঠে আসে এ কথাগুলো।

শনিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে অনুষ্ঠিত হয় এ আয়োজন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্মারক বক্তৃতা করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান। ‘আমাদের স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ: রাজনীতি ও গবেষণার চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামে বক্তৃতা করেন তিনি।

রওনক জাহান বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক তথ্য সংগ্রহে অনেক রকম ভয়। এ জন্যই রাজনৈতিক কোন্দল। এটা যেমন নিজের গবেষণাকাজের সময় দেখেছি। আজও তাই দেখছি।’ মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, রাজনীতি এ দেশের গবেষণায় তিনভাবে প্রভাবিত করেছে। প্রথমত, রাজনীতির জন্য অনেক সময় গবেষণার কারণে তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ জটিল হচ্ছে। ফলে রাজনীতি তথ্যের সংকট তৈরি করেছে। দ্বিতীয়ত, রাজনীতি গবেষকদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। যেকোনো গবেষকেরই নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রশ্নাতীত তথ্য বা প্রসঙ্গগুলোও (আনকনটেস্টেড ফ্যাক্টস) জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে ওঠে গবেষকদের জন্য। তৃতীয়ত, রাজনীতিবিদেরা নিজেরা বয়ান তৈরি করছেন নিজেদের স্বার্থে। যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, তারা বিভিন্ন বয়ান পড়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে।

আজ অনুষ্ঠানে রওনক জাহানের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করে শোনান নাট্যজন ত্রপা মজুমদার। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের গণহত্যা প্রসঙ্গ তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা অধ্যাপক রওনক জাহান ১৯৭২ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি সারওয়ার আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের যা কিছু অর্জন, এর সবটাই সম্ভব হয়েছে দেশের সাধারণ জনগণের সহযোগিতায়। তিনি বলেন, ‘যে শিশুকে মুক্তিযুদ্ধের সময় পিষে মারা হয়েছিল, তার কাছেও দায় আছে। জাদুঘরের দায় হচ্ছে অতীতকে মানুষের হাতে তুলে দেওয়া। এই কাজটির মধ্য দিয়ে আমরা অতীতকে সক্রিয় করতে চাই।’
ট্রাস্টি ও সদস্যসচিব সারা যাকের বিগত এক বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ২৯তম বর্ষে পদার্পণ করল জাদুঘর। তিনি ৫৫ হাজার প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান সংরক্ষণ থেকে শুরু করে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সুলতানার স্বপ্ন ইউনেসকোর বিশ্বজনের স্মৃতি বা মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড অর্জন প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি জানান, চার বছর ধরে বার্ষিক ৬ কোটি টাকা করে অনুদান পাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। তবে পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি, তাই তহবিল সংগ্রহে মনোযোগ দিতে হয়।

অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক। তিনি বলেন, ‘এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার ২৯ বছর পর বলতে হয়, আমাদের এই যাবতীয় আয়োজনে আমাদের ভাবনায় গুরুত্ব পায় তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সম্পর্ক তৈরি করা।’ এ সময় মফিদুল হক বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন বইয়ের উদাহরণ তুলে ধরেন।

অনুষ্ঠানে তৃতীয় গবেষণা পদ্ধতি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ তুলে দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের হাতে। শিল্পী শারমিন সাথী ইসলামের সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় আয়োজন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম ক ত য দ ধ জ দ ঘর র রওনক জ হ ন অন ষ ঠ ন প রসঙ গ র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

ইসরায়েলের অংশগ্রহণের প্রতিবাদে ইউরোভিশনের ট্রফি ফেরত দিচ্ছেন সুইস সংগীতশিল্পী নেমো

আন্তর্জাতিক গানের প্রতিযোগিতা ইউরোভিশনে ইসরায়েলের অংশগ্রহণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়ে সুইজারল্যান্ডের সংগীতশিল্পী নেমো নিজের পুরস্কার ফেরত দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গাজা উপত্যকায় ইসরায়েল অনবরত যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পরও দেশটিকে প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়ায় ক্ষোভ জানিয়েছেন তিনি। গত বৃহস্পতিবার নেমো পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দেন।

নেমো তাঁর গাওয়া ‘দ্য কোড’ গানটির জন্য ২০২৪ সালে ইউরোভিশন পুরস্কার জিতেছেন। তাঁর মতে, ইউরোভিশন প্রতিযোগিতায় ইসরায়েলের অংশগ্রহণের বিষয়টি প্রতিযোগিতার আদর্শিক জায়গার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। আর সে আদর্শিক জায়গাটি হলো সব মানুষের অন্তর্ভুক্তি ও সবার মর্যাদা বজায় রাখা।

ইউরোভিশনের আয়োজক সংস্থা ইউরোপিয়ান ব্রডকাস্টিং ইউনিয়ন (ইবিইউ)–এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদী পদক্ষেপের সর্বশেষ সংযোজন এটি। গত সপ্তাহে ইবিইউ ইসরায়েলকে আগামী বছর অস্ট্রিয়ায় অনুষ্ঠেয় প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়ার পর পাঁচটি দেশ প্রতিযোগিতা থেকে সরে গেছে।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রামে দেওয়া এক পোস্টে নেমো বলেন, ‘ইউরোভিশন বলে যে তারা ঐক্য, অন্তর্ভুক্তি ও সব মানুষের মর্যাদার পক্ষে দাঁড়ায়। এই মূল্যবোধগুলোর কারণেই এ প্রতিযোগিতাটি আমার কাছে এত অর্থবহ। কিন্তু যখন কিনা জাতিসংঘের স্বাধীন আন্তর্জাতিক তদন্ত কমিশন ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে (অধিকৃত ফিলিস্তিন অঞ্চল, পূর্ব জেরুজালেম ও ইসরায়েল বিষয়ক তদন্ত) গণহত্যা হিসেবে চিহ্নিত করেছে, তখন বোঝা যায়, ওই আদর্শগুলোর সঙ্গে ইবিইউর নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো স্পষ্টত সাংঘর্ষিক।’

আরও পড়ুনগাজায় ইসরায়েলের জাতিহত্যামূলক যুদ্ধের প্রতিবাদে ইউরোপজুড়ে লাখো মানুষের বিক্ষোভ৩০ নভেম্বর ২০২৫

ইসরায়েল বারবার গণহত্যার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে। ইসরায়েলের দাবি, তারা আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজা থেকে সীমান্ত পেরিয়ে হামাসের নেতৃত্বে হামলার পর নিজেদের আত্মরক্ষার অধিকার তাদের রয়েছে। ওই হামলার কারণেই এই যুদ্ধের সূচনা হয়েছে।

গত বুধবার আইসল্যান্ডের সরকারি সম্প্রচারমাধ্যম আরইউভির খবরে বলা হয়েছে, দেশটি ২০২৬ সালে অনুষ্ঠেয় ইউরোভিশন গানের প্রতিযোগিতায় অংশ নেবে না। গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলি হামলার প্রতিবাদে এমন পদক্ষেপ নিয়েছে দেশটি। এর আগে স্পেন, নেদারল্যান্ডস, আয়ারল্যান্ড ও স্লোভেনিয়াও একই ধরনের ঘোষণা দেয়।

আরও পড়ুনইসরায়েলিদের বাধায় নিজেদের জমিতে যেতে পারেন না ফিলিস্তিনিরা, বিপর্যয়ে জলপাইশিল্প০৪ ডিসেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গণহত্যার সত্য উন্মোচনে ফরেনসিক বিজ্ঞানের প্রয়োগ নিয়ে গবেষণা করছেন নিগার
  • ইসরায়েলের অংশগ্রহণের প্রতিবাদে ইউরোভিশনের ট্রফি ফেরত দিচ্ছেন সুইস সংগীতশিল্পী নেমো