রাজনীতিবিদেরা বয়ান তৈরি করেন নিজেদের স্বার্থে
Published: 22nd, March 2025 GMT
এ দেশে গবেষকদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে রাজনীতি। রাজনীতিবিদেরা নিজেরা নিজেদের স্বার্থে বয়ান তৈরি করেন। ফলে মুক্তিযুদ্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রশ্নাতীত প্রসঙ্গগুলো জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে ওঠে গবেষকদের জন্য। লেখা হয় না ইতিহাসের গুরুত্বপূর্ণ অনেক তথ্য।
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ২৯তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বাধীনতা উৎসব উপলক্ষে আয়োজিত স্মারক বক্তৃতায় উঠে আসে এ কথাগুলো।
শনিবার সকালে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে অনুষ্ঠিত হয় এ আয়োজন। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্মারক বক্তৃতা করেন সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ-সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক রওনক জাহান। ‘আমাদের স্বাধিকার আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধ: রাজনীতি ও গবেষণার চ্যালেঞ্জ’ শিরোনামে বক্তৃতা করেন তিনি।
রওনক জাহান বলেন, ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক তথ্য সংগ্রহে অনেক রকম ভয়। এ জন্যই রাজনৈতিক কোন্দল। এটা যেমন নিজের গবেষণাকাজের সময় দেখেছি। আজও তাই দেখছি।’ মূল প্রবন্ধে তিনি বলেন, রাজনীতি এ দেশের গবেষণায় তিনভাবে প্রভাবিত করেছে। প্রথমত, রাজনীতির জন্য অনেক সময় গবেষণার কারণে তথ্য–উপাত্ত সংগ্রহ জটিল হচ্ছে। ফলে রাজনীতি তথ্যের সংকট তৈরি করেছে। দ্বিতীয়ত, রাজনীতি গবেষকদের জন্য চ্যালেঞ্জ তৈরি করে। যেকোনো গবেষকেরই নিজের দৃষ্টিভঙ্গি থাকে। ফলে মুক্তিযুদ্ধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের প্রশ্নাতীত তথ্য বা প্রসঙ্গগুলোও (আনকনটেস্টেড ফ্যাক্টস) জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে ওঠে গবেষকদের জন্য। তৃতীয়ত, রাজনীতিবিদেরা নিজেরা বয়ান তৈরি করছেন নিজেদের স্বার্থে। যারা মুক্তিযুদ্ধ দেখেনি, তারা বিভিন্ন বয়ান পড়ে বিভ্রান্ত হচ্ছে।
আজ অনুষ্ঠানে রওনক জাহানের সংক্ষিপ্ত জীবনী পাঠ করে শোনান নাট্যজন ত্রপা মজুমদার। আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের গণহত্যা প্রসঙ্গ তুলে ধরতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা অধ্যাপক রওনক জাহান ১৯৭২ সালে হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতে শুভেচ্ছা বক্তব্যে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি সারওয়ার আলী বলেন, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের যা কিছু অর্জন, এর সবটাই সম্ভব হয়েছে দেশের সাধারণ জনগণের সহযোগিতায়। তিনি বলেন, ‘যে শিশুকে মুক্তিযুদ্ধের সময় পিষে মারা হয়েছিল, তার কাছেও দায় আছে। জাদুঘরের দায় হচ্ছে অতীতকে মানুষের হাতে তুলে দেওয়া। এই কাজটির মধ্য দিয়ে আমরা অতীতকে সক্রিয় করতে চাই।’
ট্রাস্টি ও সদস্যসচিব সারা যাকের বিগত এক বছরের বার্ষিক প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি বলেন, ২৯তম বর্ষে পদার্পণ করল জাদুঘর। তিনি ৫৫ হাজার প্রত্যক্ষদর্শীর বয়ান সংরক্ষণ থেকে শুরু করে বেগম রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের সুলতানার স্বপ্ন ইউনেসকোর বিশ্বজনের স্মৃতি বা মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড অর্জন প্রসঙ্গ তুলে ধরেন। তিনি জানান, চার বছর ধরে বার্ষিক ৬ কোটি টাকা করে অনুদান পাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। তবে পরিচালন ব্যয় অনেক বেশি, তাই তহবিল সংগ্রহে মনোযোগ দিতে হয়।
অনুষ্ঠানে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি মফিদুল হক। তিনি বলেন, ‘এই জাদুঘর প্রতিষ্ঠার ২৯ বছর পর বলতে হয়, আমাদের এই যাবতীয় আয়োজনে আমাদের ভাবনায় গুরুত্ব পায় তরুণ প্রজন্মের সঙ্গে মুক্তিযুদ্ধের সম্পর্ক তৈরি করা।’ এ সময় মফিদুল হক বাংলাদেশের গণহত্যা নিয়ে প্রকাশিত বিভিন্ন বইয়ের উদাহরণ তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানে তৃতীয় গবেষণা পদ্ধতি প্রশিক্ষণ কোর্সের সনদ তুলে দেওয়া হয় শিক্ষার্থীদের হাতে। শিল্পী শারমিন সাথী ইসলামের সংগীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে শেষ হয় আয়োজন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ক ত য দ ধ জ দ ঘর র রওনক জ হ ন অন ষ ঠ ন প রসঙ গ র জন ত
এছাড়াও পড়ুন:
ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা থেকে রক্ষা করতে পররাষ্ট্র উপদেষ্টার আহ্বান
ফিলিস্তিনি জনগণকে গণহত্যা ও নিষ্ঠুরতম বর্বরতা থেকে রক্ষা করতে অবিলম্বে পরিপূর্ণ যুদ্ধবিরতি কার্যকর করার আহ্বান জানিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
আজ বুধবার ফিলিস্তিন সংকটের শান্তিপূর্ণ সমাধানে জাতিসংঘ সদরদপ্তরে আয়োজিত আন্তর্জাতিক সম্মেলনে বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ইসরায়েল এ পর্যন্ত ৫৮ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনিকে হত্যা করে গণহত্যা অব্যাহত রেখেছে। তিনি ফিলিস্তিনি জনগণের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য দায়ী সকলকে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান।
আরো পড়ুন:
ইসরায়েলি মানবাধিকার সংগঠনই বলছে, ‘গাজায় গণহত্যা চলছে’
ফিলিস্তিন সংকট সমাধান: সবার দৃষ্টি জাতিসংঘের বিশ্ব সম্মেলনে
পররাষ্ট্র উপদেষ্টা স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের প্রতি বাংলাদেশের অব্যাহত সমর্থন পুর্নব্যক্ত করে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘস্থায়ী শান্তি স্থাপনের একমাত্র পথ হিসেবে ইসরায়েল ও ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পাশাপাশি শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের লক্ষ্যে দ্বি-রাষ্ট্র সমাধান বাস্তবায়নে কার্যকর ভূমিকা পালনের আহ্বান জানান।
গাজা পুনর্গঠনে আরব পরিকল্পনাকে স্বাগত জানিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, বাংলাদেশ জাতিসংঘের নেতৃত্বে গাজা পুনর্গঠন প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে প্রস্তত রয়েছে। তিনি গাজায় জাতিসংঘের ত্রাণ বিতরণ কার্যক্রম বাধা দেয়ার যেকোনো প্রচেষ্টা সর্বাত্বকভাবে প্রতিরোধ করার আহ্বান জানান।
২০২৩ সালের অক্টোবরের পর হতে গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলি আক্রমণের প্রেক্ষাপটে ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি একাত্মতা প্রকাশ এবং একটি স্থায়ী সমাধানের পথ সুগম করতে জাতিসংঘের সদস্যদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করার জন্য ফ্রান্স ও সৌদি আরবের যৌথ উদ্যোগে তিন দিনব্যাপী ‘জাতিসংঘ হাইলেভেল ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স ফর দ্য পিসফুল সেটেলমেন্ট অব দ্য কোয়েশ্চেন অব প্যালেস্টাইন অ্যান্ড দ্য ইমপ্লিমেন্টেশন অব দ্য টু-স্টেট সল্যুশন’ শীর্ষক মন্ত্রী পর্যায়ের এই সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এতে বাংলাদেশসহ ১১৮টি দেশের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করছে।
ঢাকা/হাসান/ফিরোজ