সুন্দরবনে ২৩ বছরে ২৭ বার আগুন, কীভাবে লাগে, তদন্ত প্রতিবেদন কী বলে
Published: 23rd, March 2025 GMT
পরপর দুই দিন সুন্দরবনের আলাদা দুটি এলাকায় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগর স্টেশনের কলমতেজী টহল ফাঁড়ির টেপার বিলে গতকাল শনিবার সকালে আগুন লাগে। ওই আগুন নিয়ন্ত্রণে আসতে না আসতে আজ রোববার সকালে পাশের তেইশের ছিলা এলাকায় আগুন লেগেছে। গতকালের তুলনায় এই আগুনের তীব্রতা বেশি এবং দ্রুত ছড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে বন বিভাগ।
এ নিয়ে গত ২৩ বছরে সুন্দরবনে আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে ২৭ বার। যার সব কটিই পূর্ব সুন্দরবন এলাকায় এবং লোকালয়-সংলগ্ন ভোলা নদীর পাশের চাঁদপাই ও শরণখোলা রেঞ্জের বনাঞ্চলে।
এসব আগুনের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন বলছে, বেশির ভাগ আগুন লেগেছে জেলে-মৌয়ালদের অসাবধানতায়। যদিও এ নিয়ে বনজীবীদের দ্বিমত আছে।
আরও পড়ুনসুন্দরবনে আগুন, পানির উৎস পেতে বেগ২২ মার্চ ২০২৫এর আগে গত বছরের ৪ মে ভোলা নদী থেকে সোয়া দুই কিলোমিটার দূরে আমোরবুনিয়া টহল ফাঁড়ির লতিফের ছিলা এলাকায় আগুন লাগে। ওই আগুনে প্রায় পাঁচ একর বনভূমির গাছপালা পুড়ে যায়। সব মিলিয়ে ২০০২ সাল থেকে গতকালের আগপর্যন্ত ২৫টি অগ্নিকাণ্ডের তদন্ত করেছে পূর্ব বন বিভাগ।
তদন্ত প্রতিবেদনগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২৫টি আগুনের ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ ২৫ লাখ টাকার বেশি। অগ্নিকাণ্ডে জীববৈচিত্র্য ও পরিবেশের ক্ষতি ধরা হয়েছে আনুমানিক হিসাবে। ফলে হিসাবে যে ক্ষয়ক্ষতির প্রকৃত চিত্র আসেনি, তা বলার অপেক্ষা রাখে না।
অধিকাংশ আগুনের সূত্রপাতের কারণ হিসেবে জেলে-মৌয়ালদের অসাবধানতার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ জেলে-মৌয়ালদের বিড়ি-সিগারেট বা মৌমাছি তাড়াতে জ্বালানো মশাল থেকেই সবচেয়ে বেশি আগুনের সূত্রপাত হয়।
সুন্দরবনে লাগা আগুন নেভানোর কাজ করছেন ফায়ার সার্ভিসের একজন কর্মী.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ন দরবন এল ক য় র ঘটন তদন ত
এছাড়াও পড়ুন:
কড়া নজরদারি সুন্দরবন সীমান্তে
দক্ষিণ ২৪ পরগনার সুন্দরবন জলসীমানা প্রায় দেড়শো কিলোমিটার। ভারতীয় প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, এ সীমানা দিয়ে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে বাড়তি তৎপরতা নেওয়া হচ্ছে। খবর আনন্দবাজারের।
খবরে বলা হয়েছে, নদী ও বনভূমি এলাকায় সীমান্ত বরাবর বিএসএফ মোতায়েন আছে। ভাসমান বর্ডার আউটপোস্ট, বঙ্গোপসাগর অংশে কোস্ট গার্ডের নজরদারি চলছে। ড্রোন, সেন্সর ও ক্যামেরা, কিছু জায়গায় নাইট ভিশন ক্যামেরা ব্যবহার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, পুলিশের তরফেও উপকূল এলাকায় দিনরাত নজরদারি চলছে।
উপকূল থানাগুলোর পক্ষ থেকে নদীপথে নিয়মিত টহল দেওয়া হচ্ছে। রাতেও উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে নজর রাখা হচ্ছে। নদীপথে কোনো জলযান দেখলেই তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। মৎস্যজীবীদের পরিচয়পত্রও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। নদী বা সমুদ্রে এখন মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা চলছে। মৎস্যজীবীদের জলযান চলাচল করার কথা নয়। তাই জলযান দেখলেই তল্লাশি চলছে। বাংলাদেশি জাহাজগুলোতেও পুলিশ তল্লাশি চালাচ্ছে।
সুন্দরবন পুলিশ জেলার সুপার কোটেশ্বর রাও নালাভাট বলেন, আগেও উপকূলবর্তী এলাকায় পুলিশের নজরদারি চলত। এখন বাড়তি জোর দেওয়া হচ্ছে। দু’বেলা নদী ও স্থলপথে পুলিশের টহল বৃদ্ধি পেয়েছে। নাকা চেকিং হচ্ছে। চলছে তল্লাশিও।
উত্তর ২৪ পরগনাতেও উপকূল এলাকায় নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে। নিরাপত্তা বেড়েছে জল ও স্থলসীমান্তে। জল, ভূমি ও আকাশে অত্যাধুনিক ইজ়রাইল রাডারের মাধ্যমে নজরদারি চালাচ্ছে সীমান্তরক্ষী বাহিনী।
ইতোমধ্যে ভারতীয় কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা দফতর জানিয়েছে, বাংলাদেশের আকাশ ব্যবহার করে ভারতকে আক্রমণ করতে পারে সশস্ত্র সংগঠনগুলো। ফলে সুরক্ষা বাড়াতে বিএসএফের তৎপরতা শুরু হয়েছে। বসিরহাট মহকুমার স্বরূপনগর থেকে হিঙ্গলগঞ্জের হেমনগর কোস্টাল থানা পর্যন্ত ৯৪ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। তার মধ্যে ৫০ কিলোমিটার জলসীমান্ত। স্থলসীমান্ত ৪৪ কিলোমিটার। সীমান্ত সুরক্ষায় অতিরিক্ত বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।