বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের (এমজেএফ) নতুন চেয়ারপারসন হলেন পারভীন মাহমুদ। তিনি সদ্য প্রয়াত সৈয়দ মঞ্জুর এলাহীর পদে স্থলাভিষিক্ত হলেন।

আজ রোববার আনুষ্ঠানিকভাবে এ দায়িত্ব নেন পারভীন মাহমুদ। এর আগে তিনি এমজেএফের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য ছিলেন।

পারভীন মাহমুদ বাংলাদেশের আর্থিক ও উন্নয়ন খাতের একজন পথিকৃৎ। তিনি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশের (আইসিএবি) প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট। সাউথ এশিয়ান ফেডারেশন অব অ্যাকাউন্ট্যান্টসের প্রথম নারী বোর্ড সদস্য এবং প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।

বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ারে উন্নয়ন ও বেসরকারি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন পারভীন মাহমুদ। ক্যারিয়ারের শুরুতে তিনি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকে কাজ করেন। এরপর তিনি এসিএনএবিআইএন অ্যান্ড কো.

, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টসের পার্টনার, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং গ্রামীণ টেলিকম ট্রাস্টের প্রতিষ্ঠাতা ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি শাশা গার্মেন্টস লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর এবং আরডিআরএস বাংলাদেশের চেয়ারপারসন।

পারভীন মাহমুদ ম্যারিকো বাংলাদেশ, অ্যাপেক্স ফুটওয়্যার লিমিটেড এবং বার্জার পেইন্টস বাংলাদেশ লিমিটেডের স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ পারভীন মাহমুদ বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি লিডারশিপ ইন ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্টিং ক্যাটাগরিতে টপ ৫০ প্রফেশনাল অ্যান্ড ক্যারিয়ার উইমেন অ্যাওয়ার্ড ২০২৩–শ্রীলঙ্কা অর্জন করেন। এর আগে তিনি অনন্যা শীর্ষ ১০ সম্মাননা ২০১৯, বেগম রোকেয়া শাইনিং পারসোনালিটি অ্যাওয়ার্ড (২০০৬), জয়া আলোকিত নারী পুরস্কার (২০১৮) এবং বেসিস ও বোল্ড থেকে নারীর ক্ষমতায়নে অবদানের জন্য পুরস্কার পেয়েছেন।

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ