এবারের ঈদযাত্রায় ঘরমুখী মানুষের নিরাপত্তা ও যানজটের ভোগান্তি থেকে রক্ষা করতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নে নিয়োজিত থাকবেন আট শতাধিক পুলিশ সদস্য। এ ছাড়া যান চলাচল নিরবচ্ছিন্ন রাখতে যানজটপ্রবণ পয়েন্টে হাইওয়ে পুলিশের সহায়তায় কাজ করবে তিন শতাধিক রোভার স্কাউট সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক।
গতকাল রোববার শহরতলির একটি রেস্তোরাঁয় স্বেচ্ছাসেবক ও রোভার স্কাউটের প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য জানান হাইওয়ে পুলিশের কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার খায়রুল আলম।
হাইওয়ে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, এবারের ঈদযাত্রায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ২৬টি পয়েন্টে যানজটের আশঙ্কা মাথায় রেখেই কাজ করছে হাইওয়ে পুলিশ। এরই মধ্যে দাউদকান্দি, সদর দক্ষিণ ও চৌদ্দগ্রাম এলাকায় সড়ক ঘেঁষে তৈরি করা বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়েছে। 
পরিবহন-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের সময় যানবাহনের চাপ, যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা ও গাড়ি পার্কিংয়ের ফলে ভোগান্তি বাড়ে। 
পুলিশ জানায়, যানজটপ্রবণ ২৬টি পয়েন্টের মধ্যে অর্ধেকই কুমিল্লা জেলায়। এগুলো হচ্ছে দাউদকান্দি টোল প্লাজা, গৌরীপুর বাজার, চান্দিনা বাসস্ট্যান্ড, মাধাইয়া বাজার, বুড়িচংয়ের নিমসার বাজার, ক্যান্টনমেন্ট এলাকা, আলেখাচর বিশ্বরোড, পদুয়ার বাজার ইউটার্ন, সুয়াগাজি বাজার, মিয়াবাজার ও চৌদ্দগ্রাম বাজার। এ ছাড়া কুমিল্লার বাইরে মহাসড়কের লালপোল, ভাটিয়ারী পয়েন্ট, ফৌজদারহাট ইউটার্ন, বারবকুণ্ড বাজার, ছোট কুমিরা, কেডিএস মোড় ও সীতাকুণ্ড বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যানজটের আশঙ্কা রয়েছে। যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে এসব স্থানে অতিরিক্ত টহল ও বাড়তি নজরদারি রাখা হবে। অতিরিক্ত পুলিশের পাশাপাশি স্বেচ্ছাসেবকরা দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।
হাইওয়ে পুলিশের কর্মকর্তারা বলেন, মহাসড়কে দুর্ঘটনা ঘটলে দ্রুত যান চলাচল স্বাভাবিক করতে অ্যাম্বুলেন্সের পাশাপাশি বিশেষ কুইক রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সড়কে কাজ করবে কমিউনিটি পুলিশও। কুমিল্লা রিজিয়নে হাইওয়ে সেক্টরে থাকবে ২২টি চেকপোস্ট, দিন-রাত ৭২টি টহল টিম, যানবাহন চেকিং টিম ২২টি, ট্রাফিক জ্যাম নিয়ন্ত্রণ টিম ৩৮টি, বাসস্ট্যান্ডগুলোয় চেকিং টিম ১৩টি, সার্বক্ষণিক রেকার টিম ২২টি, অ্যাম্বুলেন্স ২৩টি, কুইক রেসপন্স টিম ২২টি, একটি কন্ট্রোলরুম ও অস্থায়ী কন্ট্রোলরুম ৬টি এবং একটি স্ট্রাইকিং রিজার্ভ ফোর্স।
রোভার স্কাউট কুমিল্লা জেলার সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন লিটন জানান, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে চিহ্নিত ১২টি হটস্পটে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি কাজ করবেন দুই শতাধিক রোভার স্কাউট সদস্য। এরই মধ্যে হাইওয়েতে দায়িত্ব পাওয়া স্কাউট সদস্যদের প্রশিক্ষণ দিয়েছে হাইওয়ে পুলিশ, সড়ক ও জনপদ বিভাগ ও বিআরটিএ। স্কাউটিংয়ে প্রশিক্ষিত এসব সদস্য ২৫ মার্চ থেকে ঈদের আগের দিন পর্যন্ত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করবেন।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী খন্দকার গোলাম মোস্তফার ভাষ্য, ঈদ সামনে রেখে মহাসড়কের পাশে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে অভিযান চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া যানজটমুক্ত রাখতে হাইওয়ে পুলিশসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে একাধিক সভা হয়েছে।
রোভার স্কাউটদের প্রশিক্ষণ কর্মশালায় জেলা প্রশাসক আমিরুল কায়সার বলেন, যানজট হতে পারে– এমন পয়েন্টে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে থাকবে বিশেষ টিম। এবার মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করবেন রোভার স্কাউটরাও।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ নাজির আহমেদ খান জানান, ঈদযাত্রা নিরাপদ করতে হাইওয়ে পুলিশের পাশাপাশি জেলা পুলিশ ২৪ ঘণ্টা সহায়তা করবে।
কুমিল্লা রিজিয়ন হাইওয়ে পুলিশ সুপার খাইরুল আলম সমকালকে বলেন, ঈদে যাত্রীদের বিড়ম্বনা কমাতে এবার হাইওয়ে পুলিশ নানা উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে পরিবহন মালিক ও শ্রমিকদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক করা হয়েছে। যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামার বিষয়ে কঠোর হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া মহাসড়কের পাশে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ শুরু হয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি তিন শতাধিক স্বেচ্ছাসেবক ও রোভার স্কাউট সদস্য মহাসড়কের দায়িত্ব পালন করবেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক স ব চ ছ স বক ঈদয ত র শত ধ ক য নজট হ ইওয়

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ