বাবাকে কুপিয়ে হত্যার অভিযোগ, পালাতে গিয়ে ছেলের মৃত্যু
Published: 23rd, March 2025 GMT
শরীয়তপুরের নড়িয়ায় গাছকাটা নিয়ে বাবাকে কুপিয়ে হত্যা করেছে তারই ছেলে রুবেল মোল্লা। হত্যাকাণ্ডের পর পালানোর চেষ্টা করলে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে রুবেল নিজেও মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। এই মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে রোববার রাতে উপজেলার মোক্তারের চর ইউনিয়নের চেরাগ আলী বেপারী কান্দি এলাকায়।
নিহত মকবুল হোসেন মোল্লা (৬৫) ওই এলাকার হামিজ্জদ্দিন মোল্লার ছেলে। আর তার ছেলে রুবেল মোল্লার বয়স ছিল ৩৩ বছর।
স্থানীয়রা জানান, মকবুল হোসেন মোল্লা দুটি বিয়ে করেছিলেন। প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর তিনি দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন এবং তার দ্বিতীয় সংসার নিয়ে প্রথম স্ত্রীর সন্তানদের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন তৈরি হয়, বিশেষ করে বড় ছেলে রুবেল মোল্লার সঙ্গে তার প্রায়ই বিরোধ হতো।
রোববার সন্ধ্যায় একটি আম গাছ কাটা নিয়ে বাবা-ছেলের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে ক্ষিপ্ত হয়ে রুবেল ধারাল অস্ত্র দিয়ে মকবুল হোসেনকে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে জাজিরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
বাবাকে হত্যার পর রুবেল পালানোর চেষ্টা করেন। তবে দৌড়ানোর সময় হঠাৎ বাড়ির পাশের মাঠে লুটিয়ে পড়েন তিনি। পরে স্থানীয়রা তার নিথর দেহ দেখতে পেয়ে পুলিশে খবর দেয়। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে।
মোক্তারের চর ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ড সদস্য নিউ মাইকেল জানান, নিহত মকবুল মোল্লা তার নতুন বাড়িতে কিছু লাগিয়েছিলেন। সেখান থেকে একটি চারা আম গাছ রুবেল কেটে ফেলেছিল, যা বাবার সঙ্গে তার বিরোধের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছিল।
নড়িয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আসলাম উদ্দিন মোল্লা বলেন, পারিবারিক কলহের কারণে ছেলে তার বাবাকে হত্যা করেছে। এরপর ছেলের মরদেহও বাড়ির পাশের মাঠে পাওয়া গেছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে তার মৃত্যু হয়েছে। পুরো ঘটনা তদন্ত করে পরবর্তী আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব ব ক ক প য় হত য ক প য় হত য মকব ল
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।