নোকিয়া স্মার্টফোন কিনতে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা (এমএফএস) প্রতিষ্ঠান বিকাশের গ্রাহকদের ঋণ দেবে বেসরকারি খাতের সিটি ব্যাংক। বিকাশ অ্যাপের পে লেটার সেবা ব্যবহার করে গ্রাহকেরা এই নোকিয়া ফোন কিনতে পারবেন। বিকাশের যেসব গ্রাহক ঋণ পাওয়ার যোগ্য হয়েছেন, তারা এ সুবিধা পাবেন। এমএফএস প্রতিষ্ঠানটির এ ধরনের গ্রাহক আছে প্রায় ৪০ লাখ। এর বাইরে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যদেরও এই ঋণের আওতায় আনা হয়েছে।

এ ব্যাপারে সিটি ব্যাংক ও সেলেক্সট্রা লিমিটেডের মধ্যে সম্প্রতি একটি অংশীদারত্ব চুক্তি সই হয়েছে। দেশজুড়ে গ্রাহকদের জন্য স্মার্টফোন আরও সহজলভ্য করার লক্ষ্যে চুক্তিটি করা হয়। বাংলাদেশে নোকিয়া ও এইচএমডি মোবাইলের উৎপাদক ও পরিবেশক হলো সেলেক্সট্রা লিমিটেড। এই চুক্তির ফলে বিজিবি সদস্যরাও এখন ‘বিকাশ পে লেটার’ সেবা ব্যবহার করে সহজ কিস্তিতে নিজেদের পছন্দের নোকিয়া স্মার্টফোন কিনতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে অর্থায়ন করবে সিটি ব্যাংক।

যেভাবে মিলবে ঋণ

বিকাশের লেনদেনের ওপর ভিত্তি করে ৪০ লাখ গ্রাহককে ঋণ দেওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে সিটি ব্যাংক। ঋণের পরিমাণ হবে ৩ হাজার থেকে ৩০ হাজার টাকা। আর ঋণের মেয়াদ সর্বোচ্চ ৩ মাস।

বিকাশ অ্যাপের পে লেটারের মাধ্যমে ঋণ নেওয়ার সময় বিজিবি সদস্যদের পরিচয়পত্রের নম্বর যুক্ত করতে হবে। তাৎক্ষণিক যাচাই সম্পন্ন হওয়ার পর ঋণের মাধ্যমে মোবাইল কেনা যাবে। এতে ঋণের পরিমাণ হবে সর্বোচ্চ ১২ হাজার টাকা। ঋণের মেয়াদ হবে তিন মাস।

সিটি ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, বিজিবি সদস্যদের ঋণের ঝুঁকি নিচ্ছে সেলেক্সট্রা লিমিটেড। এ জন্য সিটি ব্যাংকের টাকা জমা রাখবে সেলেক্সট্রা লিমিটেড। কোনো গ্রাহক ঋণের তিন কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে সিটি ব্যাংক সেই হিসাব থেকে টাকা কেটে রাখতে পারবে।

এ নিয়ে সিটি ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক (ডিএমডি) ও হেড অব রিটেইল ব্যাংকিং অরূপ হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিকাশের প্রায় ৪০ লাখ গ্রাহকের পাশাপাশি এখন বিজিবি সদস্যরাও এই ঋণ পাবেন। সামনে আমাদের আরও নতুন নতুন খাতে ক্ষুদ্রঋণ ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে, যা দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন ক নত গ র হক

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ