‘ঘুষ’ চাওয়ার অভিযোগে কাস্টমস কর্মকর্তা লাঞ্ছিত
Published: 26th, March 2025 GMT
হবিগঞ্জে প্রকাশ্যে বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ উঠেছে কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা শামীম আল মামুনের বিরুদ্ধে। এর জের ধরে শারীরিক লাঞ্ছনার শিকার হন তিনি।
সোমবার রাত সাড়ে ১২টায় শহরের ঘাটিয়াবাজার এলাকার এসডি প্লাজা নামে এক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে এ ঘটনা ঘটে। পরে তাঁকে সেখান থেকে উদ্ধার করে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানা পুলিশ। অভিযুক্ত শামীম আল মামুন কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগ হবিগঞ্জ আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিদর্শক পদে কর্মরত।
স্থানীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শহরের ঘাটিয়াবাজার এলাকার এসডি প্লাজা নামক ওই ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনে শত শত ব্যবসায়ী, কর্মচারী, ক্রেতা ও সাধারণ জনগণ ওই কর্মকর্তাকে ঘেরাও করে রাখেন। এ সময় উত্তেজিত জনতা তাঁকে লাঞ্ছিত ও মারধরের চেষ্টা করেন। পরে খবর পেয়ে থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে। এক পর্যায়ে ওই কর্মকর্তাকে পুলিশের পিকআপ ভ্যানে তুলে নেওয়ার সময় কয়েকজন তাঁকে মারধর করেন বলেও জানা গেছে। বিষয়টি জানতে পেরে ঘটনাস্থলে যান কাস্টমসের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারাও।
এসডি প্লাজার মালিক শুভ দাশ জানান, শামীম আল মামুন এক সপ্তাহ আগে তাদের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে একা গিয়ে কাগজপত্র খতিয়ে দেখেন। এর পর বিভিন্ন ধারায় মামলা দায়েরের হুমকি দিয়ে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। সেদিন টাকা দেওয়া হয়নি। পরে সোমবার রাতে আরেক দফায় দোকানটিতে গিয়ে ঘুষের টাকার জন্য চাপ দেন ওই কর্মকর্তা। এ সময় দোকানের লোকজন ও কাস্টমস কর্মকর্তার মধ্যে উত্তেজনা দেখা দিলে কয়েকশ লোক এগিয়ে এসে তাঁকে ঘিরে ধরেন। পরে পুলিশ তাঁকে উদ্ধার করে।
কাস্টমস, এক্সাইজ ও ভ্যাট বিভাগের কর্মকর্তা শামীম আল মামুনের দাবি, দায়িত্ব পালনে এসডি প্লাজায় গিয়েছিলেন তিনি। কোনো ঘুষ দাবি করেননি কারো কাছে। তবে মধ্যরাতে ওই কর্মকর্তা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে কাগজপত্র দেখার বিষয়টি সন্দেহের নজরে দেখছেন স্থানীয়রা।
এ বিষয়ে হবিগঞ্জ সদর মডেল থানার ওসি আলমগীর কবির জানান, বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি হয়ে থাকতে পারে। ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে নিয়ে এর মীমাংসা করা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ম ম আল ম ম ন ক স টমস ব যবস
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।