দক্ষিণ কোরিয়ার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে ভয়াবহ দাবানল ছড়িয়ে পড়ায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮ জনে এবং আহত হয়েছে অন্তত ১৯ জন। দেশটির স্বরাষ্ট্র ও নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় এই তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট হান ডাক-সু এই পরিস্থিতিকে "ভয়ংকর" আখ্যা দিয়ে বলেছেন, এটি আমাদের দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ দাবানল।

এখন পর্যন্ত ২৩,০০০ এরও বেশি মানুষকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। দাবানলে বেশ কয়েকটি সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ১,৩০০ বছরের পুরনো গউনসা বৌদ্ধ মন্দির সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস হয়ে গেছে।

বুধবার দুপুরের দিকে উইসিয়ং কাউন্টির পাহাড়ে একটি অগ্নিনির্বাপক হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়েছে। দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ।

প্রায় ৫,০০০ সামরিক সদস্যসহ হাজার হাজার দমকলকর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে। দক্ষিণ কোরিয়ায় অবস্থানরত মার্কিন সামরিক বাহিনীর হেলিকপ্টারও আগুন নেভাতে সহায়তা করছে।

মঙ্গলবার জাতীয় অগ্নি সংস্থা চলতি বছরের প্রথম সর্বোচ্চ অগ্নি সঙ্কট সতর্কতা জারি করেছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় সাধারণত দাবানল বিরল এবং এ ধরনের প্রাণহানি খুব কম দেখা যায়। তবে চলমান আগুন ইতোমধ্যে দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী দাবানল হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে।

এ পর্যন্ত প্রায় ১৭,০০০ হেক্টর বনভূমি ধ্বংস হয়েছে, যা আয়তনের দিক থেকে দক্ষিণ কোরিয়ার তৃতীয় বৃহত্তম দাবানল।

উইসিয়ং শহরের আগুনে ৬১৮ খ্রিস্টাব্দে নির্মিত গউনসা মন্দির সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়েছে। এছাড়া জোসন রাজবংশের (১৩৯২-১৯১০) সময়ের একটি জাতীয় সম্পদ হিসেবে ঘোষিত স্থাপত্যও দাবানলে পুড়ে গেছে।

প্রেসিডেন্ট হান জানিয়েছেন, সব ধরনের মানবসম্পদ ও যন্ত্রপাতি মোতায়েন করা হয়েছে, তবে প্রবল বাতাস দমকলকর্মীদের প্রচেষ্টায় বাধা সৃষ্টি করছে।

তিনি আরও জানান, আমরা মরিয়া হয়ে বৃষ্টির অপেক্ষা করছি, যা আগুন নেভাতে সহায়ক হতে পারে।

কিন্তু কোরিয়া আবহাওয়া প্রশাসন জানিয়েছে, বুধবার কোনো বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই এবং বৃহস্পতিবার মাত্র ৫ থেকে ১০ মিলিমিটার বৃষ্টি হতে পারে।

সংকট কাটিয়ে উঠার পর, দাবানল মোকাবেলায় যে সকল ঘাটতি দেখা দিয়েছে, সেগুলো পুনর্মূল্যায়ন করার ঘোষণা দিয়েছেন হান। 
তিনি বলেন, একবার দাবানল শুরু হলে তা নিয়ন্ত্রণ করতে বিপুল সম্পদ ও মানবশক্তি লাগে এবং এতে মূল্যবান প্রাণহানি ঘটে।

দক্ষিণ কোরিয়া বর্তমানে স্বাভাবিকের চেয়ে শুষ্ক আবহাওয়ার মধ্যে রয়েছে, যেখানে বৃষ্টিপাতও গড়ের তুলনায় কম হয়েছে। চলতি বছরে ইতোমধ্যে ২৪৪টি দাবানল রেকর্ড করা হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ২.

৪ গুণ বেশি।

শুক্রবার দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের সানচিয়ং কাউন্টিতে প্রথম দাবানল ছড়িয়ে পড়ে, যা দ্রুতই পার্শ্ববর্তী শহর উইসিয়ং, আন্দং, চেওংসং, ইয়ংইয়াং এবং ইয়ংডক পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

খুলনায় ৮ ঘণ্টার ব্যবধানে ২ জনকে কুপিয়ে হত্যা

খুলনায় মাত্র আট ঘণ্টার ব্যবধানে দুজনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

শুক্রবার (১ আগস্ট) রাতে খুলনা মহানগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকায় মনোয়ার হোসেন টগর নামে এক যুবক এবং শনিবার (২ আগস্ট) ভোরে দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুরে আল-আমিন সিকদার নামে এক ভ্যানচালক খুন হন। 

দিঘলিয়ায় ভ্যানচালককে কুপিয়ে হত্যা
পুলিশ জানায়, শনিবার ভোর আনুমানিক সাড়ে ৫টার দিকে দিঘলিয়া উপজেলার বারাকপুর নন্দনপ্রতাপ গ্রামে আল-আমিন সিকদার (৩৩) নামে এক ভ্যানচালককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত আল-আমিন ওই গ্রামের কাওসার শিকদারের ছেলে।

দিঘলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এইচ এম শাহীন বলেন, “আল-আমিনের স্ত্রীর সাবেক স্বামী মো. আসাদুল ঝিনাইদহ থেকে এসে অতর্কিতে তার ওপর হামলা চালায়। ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যার পর আসাদুল পালিয়ে যায়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, তার সাবেক স্ত্রীকে বিয়ে করার কারণে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে থাকতে পারে।”

ঘটনার পর পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং আসামিকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানান তিনি।

নগরীতে ছুরিকাঘাতে যুবক খুন
অপরদিকে, শুক্রবার রাত সোয়া ৯টার দিকে খুলনা নগরীর সোনাডাঙ্গা থানাধীন সবুজবাগ এলাকায় নিজ বাড়িতে ছুরিকাঘাতে খুন হন মনোয়ার হোসেন টগর (২৫) নামে এক যুবক। তিনি ওই এলাকার বাসিন্দা জামাল হাওলাদারের ছেলে। 

স্থানীয়রা জানান, রাত সোয়া ৯টার দিকে কয়েকজন যুবক টগরের বাড়িতে প্রবেশ করে। কিছু বুঝে ওঠার আগেই তারা তাকে ছুরিকাঘাত করে। তার চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে এলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

সোনাডাঙ্গা মডেল থানার এসআই আবদুল হাই বলেন, “প্রাথমিকভাবে জানা গেছে, হত্যাকারীরা টগরের পূর্ব পরিচিত।  তাদের সবাইকে শনাক্ত করা হয়েছে এবং গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।” 

ঢাকা/নুরুজ্জামান/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ