‘মুক্তিপণ’ দিয়ে ফিরে এলেন অপহৃত ইমাম, পুলিশের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগ
Published: 26th, March 2025 GMT
কক্সবাজারে ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও-ঈদগড়-বাইশারী সড়ক থেকে অপহরণের শিকার মসজিদের ইমাম মিজানুর রহমান (৩১)। তাঁকে দুই লাখ টাকা ‘মুক্তিপণ’ দিয়ে মুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বজনেরা। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে মিজানুর বাড়ি ফেরেন।
মঙ্গলবার সকাল সোয়া আটটার দিকে যাত্রীবাহী সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে ঈদগড় থেকে ঈদগাঁও সদরে যাওয়ার পথে সড়কের হিমছড়ি ঢালা নামের স্থানে অপহৃত হন ঈদগড় ইউনিয়নের জঙ্গলকাটা মসজিদের ইমাম মিজানুর রহমান। অপহরণকারীরা অটোরিকশা থেকে তুলে নিয়ে জঙ্গলের আস্তানায় আটকে রাখে বলে মিজানুর জানিয়েছেন। তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রথমে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে দুই লাখ টাকা দিয়ে পরিবারের সদস্যরা মিজানুর রহমানকে ছাড়িয়ে আনেন।
মিজানুর রহমানের বাড়ি রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জঙ্গলকাটা গ্রামে। তিনি জঙ্গলকাটা মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্থানীয় বড়বিল ইবতেদায়ি নুরানি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।
মিজানুরকে মুক্ত করতে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও পাননি বলে দাবি করেছেন তাঁর স্বজনেরা। মিজানুরের বড় ভাই আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ভাইকে (মিজানুর) অপহরণের পর পুলিশের কাছে গিয়ে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি তিনি। ঈদগাঁও থানায় অপহরণের ঘটনায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। এমনকি ভাইকে অপহরণের বিষয়ে থানা কর্তৃপক্ষ একটা জিডিও নেয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে তাঁকে ডাকাতদের মুক্তিপণের দাবি মেনে নিতে হয়েছে। রাতে পরিবারের সবাই মিলে দুই লাখ টাকা জোগাড় করে তারপর অপহরণকারীদের কাছে পাঠান।
মিজানুরের স্বজনেরা জানান, টাকা পাওয়ার পর মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে রামুর জোয়ারিয়ানালা এলাকার পাহাড়ি জঙ্গলে অপহরণকারীরা মিজানুরকে ফেলে রেখে চলে যায়। মুক্তিপণ দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় জামায়াত নেতা বনি আমিন ও আবুল কাশেম বলেন, অপহরণকারীরা মুক্তিপণ চেয়ে মিজানুরের বড় ভাই আবু বক্কর সিদ্দিকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে। রাতে দুই লাখ টাকা সংগ্রহ করে আবু বক্কর তাঁর চাচাতো ভাই রমজান আলীকে সঙ্গে নিয়ে বনের ভেতরে গিয়ে নির্দেশিত স্থানে টাকা রেখে আসেন। এর কিছুক্ষণ পর অপহৃত মিজানুর রহমানকে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আজ বুধবার বিকেলে নিজ বাড়িতে অপহরণ ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে ঈদগড় থেকে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাতে করে তিনি ঈদগাঁও বাজারে যাচ্ছিলেন তিনি। গাড়িতে আরও দুজন যাত্রী ছিলেন। সকাল সোয়া আটটার দিকে হিমছড়ি ঢালায় কাঠের গুঁড়ি ফেলে ১০-১৫ জন সশস্ত্র দুর্বৃত্ত অটোরিকশা থামায়। এরপর তারা যাত্রীদের মারধর ও লুটপাট শুরু করে। পরে মুক্তিপণের কথা বলে তাঁকে (মিজানুর) জঙ্গলে নিয়ে যায়।
মিজানুর ও তাঁর স্ত্রী অপহরণকারীদের বলেছিলেন, তাঁরা ঈদগাঁওতে আত্মীয়ের জানাজায় যাচ্ছেন। সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা যা আছে নিয়ে হলেও তাঁদের ছেড়ে দিতে। কিন্তু এরপরও তাঁকে তুলে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। জঙ্গলের একটি বাড়িতে নিয়ে মিজানুরকে মারধর করে তারা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিজানুরের মুঠোফোন থেকে অপহরণকারীরা তাঁর বড় ভাই আবু বক্করকে কল দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিয়ে মিজানুরকে গুলি করে হত্যার পর লাশ গুম করার হুমকি দেয়। প্রশাসনিক সহযোগিতা না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে আনেন।
মিজানুর রহমান বলেন, অপহরণ চক্রের সদস্য ছিল ১২ জন। সবার হাতে অস্ত্র ছিল। বনের ভেতরে ডাকাত দলের একাধিক আস্তানা আছে। সবাই কথা বলেছিল কক্সবাজারের আঞ্চলিক ভাষায়। রাত সাড়ে আটটার দিকে অপহরণকারীরা তাঁকে রামুর জোয়ারিয়ানালা এলাকার জঙ্গলে রেখে চলে যায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধি জানান, ১০ কিলোমিটারের ঈদগাঁও-ঈদগড়-বাইশারী সড়কে তিনটি ডাকাত দলের ৫০-৬০ জন অস্ত্রধারী সদস্য সক্রিয় রয়েছে। সড়কে চলাচলকারী যানবাহনে যাত্রীদের জিম্মি করে নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিস লুটপাট এবং মুক্তিপণ আদায়ের জন্য লোকজনকে অপহরণ করছে তারা। এরপরও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।
মুক্তিপণ দিয়ে অপহৃত মিজানুর রহমানকে ছাড়িয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.
অপহরণের ঘটনায় থানায় অভিযোগ নিতে পুলিশের অনীহা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি মসিউর রহমান বলেন, মিজানুরের অপহরণের ঘটনায় কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসেননি। জিডি করতেও আসেননি কেউ। অহেতুক গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম জ ন র রহম ন অপহরণক র র আটট র দ ক অপহরণ র অপহ ত সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সহিংসতার ঘটনায় গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন নামঞ্জুর
গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) পথসভাকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের মধ্যে ১৮ জন শিশু রয়েছে। এর মধ্যে গত চার দিনে ১২ শিশুর জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।
গতকাল বৃহস্পতিবার সাত শিশুর জামিন আবেদনের শুনানি হয়। গোপালগঞ্জ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) সৈয়দ আরাফাত হোসেন তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে সোম ও মঙ্গলবার পাঁচ শিশুর জামিন আবেদন করা হয়। তাদের জামিন নামঞ্জুর করা হয়। ওই পাঁচজনের জামিন আবেদন করা হয়েছিল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে।
কারাগার সূত্র জানায়, গত ১৬ জুলাই সংঘর্ষের পর ১৭ ও ১৮ জুলাই জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ১৮ শিশুকে আটক করে পুলিশ। ১৮ জুলাই তাদের আদালতে হাজির করে গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। পরে ২১ জুলাই তাদের যশোরের পুলেরহাট শিশু-কিশোর উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়।
আদালতের নথি অনুযায়ী, গ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বয়স, ঠিকানা পরিষ্কারভাবে উল্লেখ নেই। তবে গতকাল পর্যন্ত ১২ শিশুর নাম ও পরিচয় শনাক্ত হয়েছে। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে চার পরিবারের সঙ্গে কথা বলা হয়েছে। অভিভাবকদের অভিযোগ, তাদের সন্তানদের কোনো ধরনের তদন্ত ছাড়াই আটক করা হয়েছে।
আরও পড়ুনগ্রেপ্তার হওয়া শিশুদের বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ২৭ জুলাই ২০২৫একজন শিশুর বাবা বলেন, ‘সংসারে অভাব–অনটন, নিজেরাই সংসার চালাইতে পারি না। আমার কষ্ট দেখে ছেলে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। সে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার রমজান শেখ নামের একটা রাজমিস্ত্রির সহকারী হিসেবে কাজ করে। কাজের সময় পুলিশ তাদের ধরে নিয়ে যায়।’
আরেক শিশুর ভ্যানচালক বাবা বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ, কোথাও কোনো কাইজের মধ্যে নেই। তিনডা ছেলে, বড়টা একটা মাদ্রাসার শিক্ষক। ছোট দুইডা এখনো পড়ে। যারে ধরছে, সে সবার ছোট। ওই দিন সকালে আমার মাদ্রাসায় গেছে, পরীক্ষা ছিল। পরে দুপুরের আগে আমি নিজে যাইয়ে নিয়ে আসছি। সেদিন বাড়িতেই ছিল। পরের দিনও সারা দিন বাড়ি ছিল, সেদিন তো কারফিউ ছিল। আসরের নামাজের পর আমার কাছ থেকে ২০ টাকা নিয়ে গেছে চটপটি খাইতে। পাশে মাদ্রাসার সামনেই চটপটির দোকান বসে। সেই হান দে ওরে ধইরে নিছে।’
ওই ব্যক্তি আরও বলেন, ‘ধরার ঘণ্টাখানেক পর থানা থেইকা ফোন দিছে, কয় ছেলে ধরা হইছে। আমরা থানায় গিয়া অনেক কইছি, ও তো কোথাও যায় না, কোনো গ্যাঞ্জামের ছেলে না। মাদ্রাসায় পড়ে। কিন্তু কেউ কিছুই শুনল না। ছেলেরে ছাড়ায় আনতে অনেক জায়গায় দৌড়াইছি।’ তিনি জানান, এ ঘটনার পর থেকে তাঁদের প্রায় ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে।
এ ছাড়া জামিনের আশ্বাস দিয়ে কয়েকজন লোক তাদের কাছ থেকে টাকা নিয়েছে বলেও অভিযোগ করেন একজন অভিভাবক।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে হামলার ঘটনায় আরও একটি মামলা, আসামি ৪৭৭ জন৩১ জুলাই ২০২৫গ্রেপ্তার এক শিশুর আইনজীবী ফিরোজা বেগম বলেন, ১৬ জুলাই সহিংসতার ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনের মামলায় এই শিশুকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। ফৌজদারি কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় দ্রুত তদন্ত করে নির্দোষ প্রমাণিত হলে তাকে মামলা থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে সরকারি কৌঁসুলি তৌফিকুল ইসলাম বলেন, শিশুরা অল্প সময় আগে গ্রেপ্তার হয়েছে, এখনো তদন্ত চলছে। তাই হয়তো বিচারক জামিন নামঞ্জুর করেছেন। এ মামলায় এখনো কারও জামিন হয়নি।
আরও পড়ুনগোপালগঞ্জে সংঘাতের ইঙ্গিত ছিল স্পষ্ট, নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়ে প্রশ্ন ১৮ জুলাই ২০২৫