কক্সবাজারে ঈদগাঁও উপজেলার ঈদগাঁও-ঈদগড়-বাইশারী সড়ক থেকে অপহরণের শিকার মসজিদের ইমাম মিজানুর রহমান (৩১)। তাঁকে দুই লাখ টাকা ‘মুক্তিপণ’ দিয়ে মুক্ত করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্বজনেরা। গতকাল মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে মিজানুর বাড়ি ফেরেন।

মঙ্গলবার সকাল সোয়া আটটার দিকে যাত্রীবাহী সিএনজিচালিত অটোরিকশায় চড়ে ঈদগড় থেকে ঈদগাঁও সদরে যাওয়ার পথে সড়কের হিমছড়ি ঢালা নামের স্থানে অপহৃত হন ঈদগড় ইউনিয়নের জঙ্গলকাটা মসজিদের ইমাম মিজানুর রহমান। অপহরণকারীরা অটোরিকশা থেকে তুলে নিয়ে জঙ্গলের আস্তানায় আটকে রাখে বলে মিজানুর জানিয়েছেন। তাঁকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য প্রথমে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করা হয়। পরে দুই লাখ টাকা দিয়ে পরিবারের সদস্যরা মিজানুর রহমানকে ছাড়িয়ে আনেন।

মিজানুর রহমানের বাড়ি রামু উপজেলার ঈদগড় ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের জঙ্গলকাটা গ্রামে। তিনি জঙ্গলকাটা মসজিদের ইমামের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি স্থানীয় বড়বিল ইবতেদায়ি নুরানি মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।

মিজানুরকে মুক্ত করতে পুলিশের সহযোগিতা চেয়েও পাননি বলে দাবি করেছেন তাঁর স্বজনেরা। মিজানুরের বড় ভাই আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ভাইকে (মিজানুর) অপহরণের পর পুলিশের কাছে গিয়ে কোনো ধরনের সহযোগিতা পাননি তিনি। ঈদগাঁও থানায় অপহরণের ঘটনায় অভিযোগ দিতে গেলে পুলিশ তা গ্রহণ করেনি। এমনকি ভাইকে অপহরণের বিষয়ে থানা কর্তৃপক্ষ একটা জিডিও নেয়নি। ফলে বাধ্য হয়ে তাঁকে ডাকাতদের মুক্তিপণের দাবি মেনে নিতে হয়েছে। রাতে পরিবারের সবাই মিলে দুই লাখ টাকা জোগাড় করে তারপর অপহরণকারীদের কাছে পাঠান।

মিজানুরের স্বজনেরা জানান, টাকা পাওয়ার পর মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে রামুর জোয়ারিয়ানালা এলাকার পাহাড়ি জঙ্গলে অপহরণকারীরা মিজানুরকে ফেলে রেখে চলে যায়। মুক্তিপণ দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় জামায়াত নেতা বনি আমিন ও আবুল কাশেম বলেন, অপহরণকারীরা মুক্তিপণ চেয়ে মিজানুরের বড় ভাই আবু বক্কর সিদ্দিকের সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে। রাতে দুই লাখ টাকা সংগ্রহ করে আবু বক্কর তাঁর চাচাতো ভাই রমজান আলীকে সঙ্গে নিয়ে বনের ভেতরে গিয়ে নির্দেশিত স্থানে টাকা রেখে আসেন। এর কিছুক্ষণ পর অপহৃত মিজানুর রহমানকে ছেড়ে দেওয়া হয়।

আজ বুধবার বিকেলে নিজ বাড়িতে অপহরণ ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন মুক্তিপণ দিয়ে ফিরে আসা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে ঈদগড় থেকে স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে সিএনজিচালিত একটি অটোরিকশাতে করে তিনি ঈদগাঁও বাজারে যাচ্ছিলেন তিনি। গাড়িতে আরও দুজন যাত্রী ছিলেন। সকাল সোয়া আটটার দিকে হিমছড়ি ঢালায় কাঠের গুঁড়ি ফেলে ১০-১৫ জন সশস্ত্র দুর্বৃত্ত অটোরিকশা থামায়। এরপর তারা যাত্রীদের মারধর ও লুটপাট শুরু করে। পরে মুক্তিপণের কথা বলে তাঁকে (মিজানুর) জঙ্গলে নিয়ে যায়।

মিজানুর ও তাঁর স্ত্রী অপহরণকারীদের বলেছিলেন, তাঁরা ঈদগাঁওতে আত্মীয়ের জানাজায় যাচ্ছেন। সঙ্গে থাকা টাকাপয়সা যা আছে নিয়ে হলেও তাঁদের ছেড়ে দিতে। কিন্তু এরপরও তাঁকে তুলে নিয়ে যায় অপহরণকারীরা। জঙ্গলের একটি বাড়িতে নিয়ে মিজানুরকে মারধর করে তারা। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে মিজানুরের মুঠোফোন থেকে অপহরণকারীরা তাঁর বড় ভাই আবু বক্করকে কল দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা মুক্তিপণ দাবি করে। টাকা না দিয়ে মিজানুরকে গুলি করে হত্যার পর লাশ গুম করার হুমকি দেয়। প্রশাসনিক সহযোগিতা না পেয়ে পরিবারের সদস্যরা দুই লাখ টাকা মুক্তিপণ দিয়ে তাঁকে ছাড়িয়ে আনেন।

মিজানুর রহমান বলেন, অপহরণ চক্রের সদস্য ছিল ১২ জন। সবার হাতে অস্ত্র ছিল। বনের ভেতরে ডাকাত দলের একাধিক আস্তানা আছে। সবাই কথা বলেছিল কক্সবাজারের আঞ্চলিক ভাষায়। রাত সাড়ে আটটার দিকে অপহরণকারীরা তাঁকে রামুর জোয়ারিয়ানালা এলাকার জঙ্গলে রেখে চলে যায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এলাকার কয়েকজন ব্যবসায়ী ও জনপ্রতিনিধি জানান, ১০ কিলোমিটারের ঈদগাঁও-ঈদগড়-বাইশারী সড়কে তিনটি ডাকাত দলের ৫০-৬০ জন অস্ত্রধারী সদস্য সক্রিয় রয়েছে। সড়কে চলাচলকারী যানবাহনে যাত্রীদের জিম্মি করে নগদ টাকাসহ মূল্যবান জিনিস লুটপাট এবং মুক্তিপণ আদায়ের জন্য লোকজনকে অপহরণ করছে তারা। এরপরও পুলিশ কোনো ব্যবস্থা নিতে পারছে না।

মুক্তিপণ দিয়ে অপহৃত মিজানুর রহমানকে ছাড়িয়ে আনার বিষয়ে জানতে চাইলে ঈদগাঁও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.

মসিউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই। মঙ্গলবার সকাল সোয়া আটটার দিকে মিজানুর রহমানকে অপহরণের পর থেকে পুলিশ উদ্ধার তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। রাতে অপহরণকারীরা মিজানুরকে ছেড়ে দিয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। মুক্তিপণ দেওয়ার বিষয়টি কেউ তাঁকে জানাননি।

অপহরণের ঘটনায় থানায় অভিযোগ নিতে পুলিশের অনীহা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি মসিউর রহমান বলেন, মিজানুরের অপহরণের ঘটনায় কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসেননি। জিডি করতেও আসেননি কেউ। অহেতুক গণমাধ্যমে মিথ্যা তথ্য দিয়ে পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করা হচ্ছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম জ ন র রহম ন অপহরণক র র আটট র দ ক অপহরণ র অপহ ত সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

৭ বছরের শিশুর বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা, পাঁচ দিন পর বাবার বুকে ফিরল শিশুটি

চট্টগ্রামে অপহরণ মামলায় আইনের সংস্পর্শে নেওয়া সাত বছরের শিশুটি পাঁচ দিন পর বাবার বুকে ফিরে গেছে। গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের হাটহাজারীর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে তার বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়। শিশুটির মা কারাগারে আর বাবা সাগরে মাছ ধরতে যাওয়ায় মুক্তি পেলেও কোনো অভিভাবক না থাকায় শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে রাখার নির্দেশ দেন আদালত।

‘চট্টগ্রামে ৭ বছরের শিশুর নামে মামলা নিল পুলিশ, তিন দিনেও মেলেনি মুক্তি’ শিরোনামে গত রোববার প্রথম আলো অনলাইনে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এরপর আদালতপাড়া ও নগর পুলিশে আলোচিত হয় বিষয়টি। এর আগে গত শুক্রবার (৫ ডিসেম্বর) শিশুটিকে অপহরণ মামলায় গাজীপুরের টঙ্গী শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠানো হয়। পরে সেখান থেকে সোমবার হাটহাজারী শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে নিয়ে আসা হয়।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের প্রবেশন কর্মকর্তা মনজুর মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, আদালতের নির্দেশে শিশুটিকে হাটহাজারীর সমন্বিত শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্র থেকে তার বাবার জিম্মায় দেওয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে শিশুটির বাবা প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার জাহাজে ছিলাম। সেখান থেকে আসার পর ছেলেকে জিম্মায় নিয়েছি।’

এদিকে আইনে না থাকলেও মামলাটি গ্রহণকারীদের বিরুদ্ধে নগর পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কি না, জানতে চাইলে নগর পুলিশের উপকমিশনার (সদর) ফয়সাল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, ‘বিষয়টি আমার জানা নেই।’

বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশন বিএইচআরএফের মহাসচিব আইনজীবী জিয়া হাবীব আহসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ইতিপূর্বেও সাত বছরের এক শিশুর বিরুদ্ধে ধর্ষণের মামলা হয়। এখনকার ঘটনায় সংশ্লিষ্ট যাঁদের গাফিলতি রয়েছে, সবার বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি ও ভুক্তভোগীকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার ব্যবস্থা করা উচিত। এটি ভুলে নয়, কাজে অবহেলার কারণে হয়েছে।’

আরও পড়ুনচট্টগ্রামে ৭ বছরের শিশুর নামে অপহরণের মামলা নিল পুলিশ, তিন দিনেও মেলেনি মুক্তি০৭ ডিসেম্বর ২০২৫

যেভাবে শিশুর বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা

ঘটনার শুরু চলতি বছরের ১৩ এপ্রিল। চট্টগ্রাম নগরের ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় বসবাসরত আনোয়ারা বেগমের দুই সন্তানের মধ্যে বড় সন্তান অসুস্থ হলে সেদিন চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। সঙ্গে নিয়ে যান চার বছরের ছোট সন্তান মো. রামিমকেও। কিন্তু রামিম সেখান থেকে হারিয়ে যায়। এ ঘটনায় পাঁচলাইশ থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পরও রামিমকে না পেয়ে ঘটনার সাত মাস পর গত শুক্রবার পাঁচলাইশ থানায় অপহরণ মামলা করেন তার মা আনোয়ারা বেগম।

এ ঘটনায় সাত বছরের শিশু ও তার মায়ের বিরুদ্ধে মামলা হয়। মামলার এজাহারে বলা হয়, বাদী জানতে পারেন, তাঁর ছেলেকে হাসপাতালের বারান্দা থেকে সাত বছরের ওই শিশু ও তার মা খেলার কথা বলে অপহরণ করে নিয়ে যান। মামলা হওয়ার পর ওই দিনই পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক (এসআই) এনামুল হক ষোলশহর এলাকা থেকে সাত বছরের শিশুর মাকে গ্রেপ্তার করেন। আইনের সংস্পর্শে নেওয়া হয় শিশুটিকেও। মা যান কারাগারে, শিশুটি টঙ্গীতে শিশু উন্নয়ন কেন্দ্রে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। জামিনে মুক্তির পর সোমবার সেখান থেকে হাটহাজারী শিশু পুনর্বাসন কেন্দ্রে এনে রাখা হয়।

জানতে চাইলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ চট্টগ্রামের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) শফিউল মোরশেদ প্রথম আলোকে বলেন, শিশু আইন ও দণ্ডবিধিতে ৯ বছরের কম বয়সী কোনো শিশুর বিরুদ্ধে মামলা নেওয়া কিংবা আইনের সংস্পর্শে নেওয়ার সুযোগ নেই।

আরও পড়ুনমা কারাগারে, বাবা সাগরে, মুক্তি পেয়েও ঠাঁই হলো না পরিবারে০৮ ডিসেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • স্কুলছাত্রীকে অপহরণের অভিযোগে ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্য বরখাস্ত
  • লিবিয়ায় তিন বাংলাদেশিকে নির্যাতনের ভিডিও পাঠিয়ে স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ দাবি
  • ৭ বছরের শিশুর বিরুদ্ধে অপহরণ মামলা, পাঁচ দিন পর বাবার বুকে ফিরল শিশুটি