পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। তবে ঢাকা নদীবন্দর সদরঘাট টার্মিনালে চিরচেনা সেই ভিড় নেই। নৌপথে নির্বিঘ্নে যাত্রীদের চলাচল নিশ্চিত করতে টার্মিনাল এলাকায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে পন্টুনে নোঙর করা লঞ্চগুলোর প্রবেশমুখে আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন।

সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল সূত্রে জানা গেছে, আজ বুধবার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ৩৫টি যাত্রীবাহী লঞ্চ সদরঘাট টার্মিনাল ছেড়ে বিভিন্ন গন্তব্যে চলে গেছে। অন্যদিকে টার্মিনালে ভিড়েছে ৪৩টি লঞ্চ।

দুপুর সাড়ে ১২টায় টার্মিনাল এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পন্টুনে নোঙর করা লঞ্চগুলোর সামনে কর্মচারীরা যাত্রীদের ডাকছেন। তবে যাত্রীদের তেমন চাপ নেই। লঞ্চের ডেকে ফাঁকা জায়গা দেখা যায়। সেখানে কিছু যাত্রী শুয়ে আছেন। এমভি প্রিন্স আওলাদ–৫ লঞ্চের সামনে ‘অগ্রিম টিকিট আছে’ উল্লেখ করে একটি কার্ড কাউন্টার দেখা গেল। কিন্তু টিকিট নিতে যাত্রীদের ভিড় দেখা যায়নি।

বরগুনাগামী এমভি সুন্দরবন–৯ লঞ্চে পুরান ঢাকার মীর হাজিরবাগ এলাকার ভাড়াটে নুর ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। লঞ্চের ডেকে লোহার খুঁটিতে ঝুলিয়ে জাল বুনছিলেন তিনি। ঈদের আগে সদরঘাটের ভিড় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তিন–চার বছর আগে এই সময় লঞ্চের ডেকে এমন ঠেলাঠেলি হতো যে বসার জায়গা থাকত না। আজ দেখছি ভিন্ন চিত্র। ডেক অনেকটাই ফাঁকা। অনেক যাত্রী শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছেন। আমিও সুযোগ বুঝে জাল বুনছি। ঈদের ছুটিতে বাড়ির পুকুরে এই জাল দিয়ে মাছ ধরব।’

খেপুপাড়াগামী এমভি জামাল–৮ লঞ্চের যাত্রী সালেহা বেগম বলেন, ‘আমগো লঞ্চ ছাড়ব সন্ধ্যা ছয়টায়। জ্যামে পড়তে অইব দেইখ্যা আগেভাগে লঞ্চের ডেকে আইয়া বইস্যা রইছি। লঞ্চের ডেকে অনেক জায়গা ফাঁকা আছে। এবার আরামে বাড়ি যাইতে পারমু।’

বরগুনাগামী এমভি সুন্দরবন-৯ লঞ্চের ডেক এখনো ফাঁকা। সুযোগ বুঝে ডেকের লোহার খুটিতে জাল বুনছেন এক যাত্রী। বুধবার দুপুরে সদরঘাট টার্মিনালে.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: সদরঘ ট ট র ম ন ল

এছাড়াও পড়ুন:

এক দশকে ১ লাখ হেক্টর বনভূমি কমেছে 

দেশে এক দশকে বনভূমি হ্রাস পেয়েছে ১ লাখ ১ হাজার হেক্টর, যা ঢাকা শহরের আয়তনের প্রায় সাড়ে তিন গুণ। গত এক দশকে দেশ থেকে হারিয়ে গেছে ৬৪ প্রজাতির গাছ।

সারা দেশে বনাঞ্চলে যে পরিমাণ গাছ আছে, গ্রামাঞ্চলে গাছের সংখ্যা তার চেয়ে বেশি। তবে গ্রামে গাছের ঘনত্ব কম। আর বন উজাড় বেশি হয়েছে পার্বত্যাঞ্চলে। সেখানে একমুখী প্রজাতির ফসল চাষের প্রসার ও সড়ক সম্প্রসারণের কারণে বন উজাড় হচ্ছে।

বনের সার্বিক চিত্র জানতে ২০২৪ সালে বন অধিদপ্তরের করা জাতীয় বন জরিপে এসব তথ্য উঠে এসেছে। জরিপটি প্রকাশের অপেক্ষায় রয়েছে।

পার্বত্য অঞ্চলে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সেটাকে মাথায় রেখে আমরা একটা পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছি। বান্দরবানের লামা অঞ্চল দিয়ে ফরেস্ট রিস্টোরেশনের (বন পুনরুদ্ধার) কাজ শুরু করব আমরা।সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, উপদেষ্টা, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় 

২০১৫ সালে জাতীয় বন জরিপে বন আচ্ছাদনের পরিমাণ ছিল ১২ দশমিক ৭৬ শতাংশ, সেটি এখন কিছুটা হ্রাস পেয়ে ১২ দশমিক ১১ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। সাম্প্রতিক বন জরিপে দেশে বনভূমি আছে ১৭ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর। আগের বন জরিপে যেটির পরিমাণ ১৮ লাখ ৮৪ হাজার হেক্টর।

জানতে চাইলে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘পার্বত্য অঞ্চলে অনেক চ্যালেঞ্জ আছে। সেটাকে মাথায় রেখে আমরা একটা পরিকল্পনা হাতে নিচ্ছি। বান্দরবানের লামা অঞ্চল দিয়ে ফরেস্ট রিস্টোরেশনের (বন পুনরুদ্ধার) কাজ শুরু করব আমরা।’

‘জীববৈচিত্র্য রক্ষা, অবক্ষয়িত বাস্তুতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও টেকসই ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা’র আহ্বান জানিয়ে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব প্রকৃতি সংরক্ষণ দিবস। জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ ১৯৭২ সালে এই দিনটিকে আন্তর্জাতিক দিবসের মর্যাদা দেয়।

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ফাওয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৈশ্বিকভাবে বন উজাড়ীকরণের হার ১ দশমিক ১ শতাংশ হলেও বাংলাদেশে সেটি ২ দশমিক ৬ শতাংশ।

বন অধিদপ্তরের ২০টি দল মাঠপর্যায়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করে ২০২৪ সালের মার্চে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে তাদের তথ্য সংগ্রহ শেষ হয়। উপকূলীয় বন, শালবন, সুন্দরবন, পার্বত্যাঞ্চল ও গ্রামীণ এলাকায় মোট ১ হাজার ৮৫৮টি নমুনা প্লটের ভিত্তিতে এ জরিপের ফলাফল নির্ধারণ করা হয়েছে।

জরিপে দেশে প্রতি হেক্টরে গাছের ঘনত্ব পাওয়া গেছে ১১৭টি। সবচেয়ে বেশি গাছের ঘনত্ব আছে সুন্দরবনে। এখানে গাছের ঘনত্ব প্রতি হেক্টরে ৭০২টি। বনাঞ্চলের চেয়ে গ্রামীণ এলাকায় গাছের ঘনত্ব কম হলেও মোট গাছের পরিমাণ বেশি। গ্রামীণ এলাকায় মোট গাছের সংখ্যা প্রায় ৯০ কোটি।

২০১৫ সালের বন জরিপে গাছের সংখ্যা ছিল ১৬৯ কোটি। সাম্প্রতিক জরিপে সেটা কিছুটা কমে হয়েছে ১৫৭ কোটি। গত এক দশকে হ্রাস পাওয়া গাছের সংখ্যা প্রায় ১২ কোটি। জরিপে সারা দেশে ৩২৬টি গাছের প্রজাতি শনাক্ত করা হয়েছে। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৪২টি প্রজাতি পাওয়া গেছে পার্বত্যাঞ্চলে। সুন্দরবনে পাওয়া গেছে ২২ প্রজাতির গাছ। এর আগে বন জরিপে (২০১৫) ৩৯০ প্রজাতির গাছ শনাক্ত করেছিল বন অধিদপ্তর। গত এক দশকে হারিয়ে গেছে ৬৪ প্রজাতির বৃক্ষ।

কেন কমছে পার্বত্যাঞ্চলের বন

২০১৬ সালে অস্ট্রেলিয়ার চার্লস ডারউইন ইউনিভার্সিটি পরিচালিত এক গবেষণায় পার্বত্যাঞ্চল বাংলাদেশের মোট বন আচ্ছাদনের ৪০ শতাংশ হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে। এখানে দ্রুত প্রসার ঘটছে অর্থকরি ফলের চাষ (হর্টিকালচার) ও একমুখী প্রজাতির বনায়ন (মনোকালচার), যেমন রাবারবাগান।

জানতে চাইলে জাতীয় বন জরিপের সঙ্গে যুক্ত থাকা বন অধিদপ্তরের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (সদ্য অবসরপ্রাপ্ত) জহির ইকবাল প্রথম আলোকে বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে বৈধ ও অবৈধভাবে বন উজাড় হয়ে আসছে। এখানে একদিকে বন উজাড় হচ্ছে, অন্যদিকে বিভিন্ন চ্যালেঞ্জের কারণে বনায়ন করা যায় না। যার কারণে এখানে বনভূমি হ্রাস পাওয়ার পরিমাণ বেশি।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ফরেস্ট্রি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের অধ্যাপক কামাল হোসাইন প্রথম আলোকে বলেন, পার্বত্যাঞ্চলে বন বিভাগ কিছু করতে পারে না। পাহাড়িরা কিছু গামার আর সেগুনগাছের বাগান করেন। পুরো পার্বত্য অঞ্চলে সড়ক সম্প্রসারণ হয়েছে গত কয়েক দশকে। যেমন সীমান্ত রোড হয়েছে।

কামাল হোসাইন বলেন, এ ছাড়া এখানে বিনোদনকেন্দ্র ও রিসোর্টের সংখ্যা বাড়ছে। এটা একটা দিক। অন্যদিকে অনেক প্রভাবশালী এখন ড্রাগন, কাজু ও আমের চাষ করছেন প্রাকৃতিক বন ধ্বংস করে। এ অঞ্চলের বনের ওপর বহুমুখী চাপের কারণে এখানে বনাঞ্চল হ্রাস পাওয়ার হার অন্যান্য অঞ্চল থেকে বেশি।

কামাল হোসাইন আক্ষেপ করে বলেন, ‘কেউ বনকে ভালোবাসে না। মানুষের লোভের শিকার হয়েছে এখানকার প্রাকৃতিক বন। এটাই আমাদের সর্বনাশ করেছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বাঘ রক্ষায় সুন্দরবনের চারপাশে হবে সুরক্ষাবলয়: পরিবেশ উপদেষ্টা
  • চোরা শিকারিদের বিরুদ্ধে সর্বশক্তি প্রয়োগের আহ্বান উপদেষ্টার 
  • বাঙালির বাঘ সংস্কৃতি: ‘যে বনে বাঘ নেই সে বনে শিয়ালই রাজা!’
  • বাঘ বাঁচলে সুন্দরবন বাঁচবে
  • পাচারকারীসহ আরও কিছু কারণে হুমকির মুখে সুন্দরবনের বাঘ
  • এক দশকে ১ লাখ হেক্টর বনভূমি কমেছে