বাংলাদেশের কাছে সামরিক সরঞ্জাম বিক্রির আলোচনায় যুক্তরাষ্ট্র
Published: 27th, March 2025 GMT
যুক্তরাষ্ট্র তাদের উৎপাদিত সমরাস্ত্র বাংলাদেশের কাছে বিক্রি করতে আগ্রহী। পারস্পরিক কার্যক্ষমতা ও সামগ্রিক সক্ষমতা বাড়াতে যুক্তরাষ্ট্র সামরিক সরঞ্জামের বিষয়টি সামনে এনেছে। ২৪ মার্চ দুই দিনের বাংলাদেশ সফরের সময় যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর প্যাসিফিক কমান্ডের ডেপুটি কমান্ডিং জেনারেল লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোয়েল পি ভাওয়েল যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করেন, সেগুলোর মধ্যে সমরাস্ত্র বিক্রির প্রসঙ্গটিও ছিল।
ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানিয়েছে। মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, বাংলাদেশ সফরের সময় লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোয়েল ভাওয়েল বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন।
সেখানে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের সেনাবাহিনীর দীর্ঘদিনের দৃঢ় সম্পর্কের প্রতি প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন এবং পারস্পরিক নিরাপত্তা স্বার্থ ও চলমান সহযোগিতার বিষয়গুলো তুলে ধরেছেন। দেশীয় নিরাপত্তা রক্ষায়, বিশেষত দুর্যোগ মোকাবিলা ও অন্যান্য জটিল পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ অবদানের অব্যাহত ভূমিকার স্বীকৃতি তাদের আলোচনায় স্থান পায়। এ ছাড়া বাংলাদেশের প্রধান সামরিক চ্যালেঞ্জগুলো এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য সহায়তার ক্ষেত্রগুলোসহ সামগ্রিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হয়।
চলতি বছরের গ্রীষ্মে দুই দেশ ‘টাইগার লাইটনিং’ সামরিক মহড়ায় অংশ নিতে যাচ্ছে। ওই সামরিক মহড়া নিয়ে তাঁরা আলোচনা করেন।
এ ছাড়া পারস্পরিক কার্যক্ষমতা ও সামগ্রিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদিত সামরিক সরঞ্জাম সংগ্রহের সম্ভাবনার পাশাপাশি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর পেশাদারত্বের প্রশংসা এবং আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে একটি দক্ষ ও পেশাদার সামরিক বাহিনীর অপরিহার্য ভূমিকার কথা বৈঠকে তুলে ধরা হয়।
বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তাদের ফেসবুক পেজে জানিয়েছে, লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোয়েল পি ভাওয়েল ২৫ মার্চ সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এ সময় তাঁরা বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যকার সক্ষমতা বৃদ্ধির বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন। এর পাশাপাশি লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোয়েল পি ভাওয়েল বর্তমানে ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার এ মোতায়েনরত বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্যদের পেশাদারত্ব ও বিভিন্ন কার্যক্রমেরও প্রশংসা করেন।
এদিকে সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের (এএফডি) প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল এস এম কামরুল হাসানের সঙ্গে একই দিনে দেখা করেন লেফটেন্যান্ট জেনারেল জোয়েল ভোয়েল। এএফডির এক্সে জানানো হয়েছে, আলোচনার সময় তাঁরা দ্বিপক্ষীয় প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিভিন্ন দিকসহ বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনী এবং যুক্তরাষ্ট্র সেনাবাহিনীর প্যাসিফিক কমান্ডের মধ্যে প্রশিক্ষণ, মহড়া এবং সামরিক সহযোগিতার ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সশস ত র ব হ ন ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।