চট্টগ্রামের কর্ণফুলী ও আনোয়ারা উপজেলা থেকে হাতি সরানোর দাবিতে কেইপিজেডের বিভিন্ন ফটকে আবারও সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় ‘আনোয়ারা ও কর্ণফুলী উপজেলার সাধারণ জনগণ’-এর ব্যানারে পিএবি সড়কের কেইপিজেড ফটক, কেইপিজেডের আনোয়ারার জাইল্লা ঘাটাসহ বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হয়।

এ কারণে ভোগান্তিতে পড়েছেন সড়কগুলো দিয়ে চলাচলকারী শ্রমিক ও সাধারণ যাত্রীরা। পুলিশের দাবি, আওয়ামী লীগসহ স্থানীয় কিছু নেতার মদদে এ আন্দোলন আরও খারাপ পরিস্থিতির দিকে যাচ্ছে।

আরও পড়ুনচট্টগ্রামের কেইপিজেড এলাকায় আবার হাতির আক্রমণ কেন, যা জানা গেল২২ মার্চ ২০২৫

এর আগে গত শনিবার হাতির আক্রমণে কর্ণফুলী উপজেলায় শাহমীরপুরে তিন মাস বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়। এর প্রতিবাদে একই দিন ভোর থেকে প্রায় ছয় ঘণ্টা সড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ জনতা। সমস্যা সমাধানে ওই দিন উপজেলা প্রশাসনের উপস্থিতিতে চার দিনের সময় বেঁধে দিয়ে আন্দোলন স্থগিত করেন তাঁরা।

স্থানীয় সূত্র জানায়, আজ সকাল ৬টার সময় কেইপিজেডের বিভিন্ন ফটকে অবরোধ শুরু হয়। এ সময় শ্রমিকেরা আটকে পড়েন। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েন পিএবি সড়ক দিয়ে চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াতকারী যাত্রীরা। ওই সড়ক দিয়ে আনোয়ারা, কর্ণফুলী, চন্দনাইশ, বাঁশখালী ও কক্সবাজারের পেকুয়া উপজেলার লোকজন চট্টগ্রাম শহরে যাতায়াত করেন। এ ছাড়া আজ কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য বের হওয়া লোকজন ভোগান্তির শিকার হন।

বিক্ষোভকারীদের দাবি, গত শনিবার হাতির আক্রমণে শিশুটি মারা যাওয়ার পর আন্দোলন করা হয়েছিল। প্রশাসন চার দিন সময় নিয়েও কার্যকরী কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। তাই বন বিভাগ, কেইপিজেড ও প্রশাসন যেন হাতি সরানোর জন্য পদক্ষেপ নেয়, এ জন্য আবার আন্দোলন শুরু হয়েছে।

আজ সকাল সাড়ে ৬টার সময় কেইপিজেডের দৌলতপুর, সিইউএফএল সড়কের বিভিন্ন পয়েন্টে আন্দোলনকারীদের অবস্থান নিতে দেখা যায়। ওই সময় কেইপিজেডের শ্রমিক ও সাধারণ যাত্রীরা আটকা পড়েন। এর বাইরে পিএবি সড়কের প্রধান সড়ক আটকে দেওয়ায় যাত্রীরা আটকে পড়েন। সকাল সাড়ে ৮টা পর্যন্ত কেইপিজেডের নিরাপত্তাকর্মীরা বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নিয়েছেন। আর পিএবি সড়কের চার কিলোমিটার জায়গাজুড়ে গাছের গুঁড়ি দিয়ে অবরোধ করা হয়েছে।

আরও পড়ুনদেয়াঙ পাহাড়ের তিনটি হাতির কী হবে২৫ মার্চ ২০২৫

এ ব্যাপারে কোরীয় রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চলের (কেইপিজেড) সহকারী মহাব্যবস্থাপক মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘আমরা বুঝতেছি না কেন কেইপিজেডকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করা হচ্ছে। আমরাও চাই হাতি সরিয়ে নেওয়া হোক। হাতির আক্রমণে কেইপিজেডের বিভিন্ন স্থাপনা প্রতিনিয়ত ক্ষতি হচ্ছে।’

এ বিষয়ে জানতে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ শরীফ বলেন, ‘গতকাল বুধবার রাতে বিক্ষোভের ডাক দেওয়া নেতৃস্থানীয় লোকজনকে বুঝিয়েও আন্দোলন থেকে সরাতে পারিনি। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগের কিছু মেম্বার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের কয়েকজন নেতা পরিস্থিতি খারাপের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। আমরা চাই, যাতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে। এ জন্য পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: উপজ ল সড়ক র অবর ধ

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ