পাবনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় নামের মিলের কারণে ২৬ দিন কারাভোগের পর মুক্তি পেয়েছেন মাগুরার আয়ুব আলী। 

গত সোমবার (২৪ মার্চ) পাবনা জেলা কারাগার থেকে মুক্তি পান আয়ুব আলী। মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) পাবনা থেকে বাড়িতে এসেছেন তিনি।

মো. আয়ুব আলী মাগুরা পৌরসভার নিজনান্দুয়ালীর বাসিন্দা। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি পাবনার সুজানগর থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের একটি মামলায় মূল আসামির সঙ্গে নামের মিল থাকায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। 

স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২৬ ফেব্রুয়ারি দুপুরে নিজ এলাকা থেকে আয়ুব আলীকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। ওই দিন তাকে মাগুরা সদর থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরদিন তাকে মাগুরা জেলা কারাগারে পাঠানো হয়। ১০ দিন পর তাকে পাবনা জেলা কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। পরে পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, আয়ুব আলীকে সুজানগর থানায় ২০১৭ সালের ৪ জুন নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে করা একটি মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 অভিযোগটি ছিল, পঞ্চম শ্রেণির এক শিশুকে অপহরণের পর ধর্ষণ। ওই মামলায় গত বছরের ১৪ জুলাই পাবনা নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আয়ুব আলী নামের এক ব্যক্তিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে রায় দিয়েছেন।

মামলার নথি হাতে পাওয়ার পর পরিবারের সদস্যরা জানতে পারেন, ওই ঘটনার সঙ্গে কারাগারে থাকা আয়ুব আলীর কোনো সম্পৃক্ততা নেই। অন্য একজন আয়ুব আলীর জায়গায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে ২২ মার্চ ‘এক আয়ুবের সাজা ভোগ করছেন আরেক আয়ুব’ শিরোনামে রাইজিংবিডিতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।

আয়ুব আলীর আইনজীবী মো.

সাইদুল ইসলাম মোবাইল ফোনে  বলেন, “এক আসামির জায়গায় অন্যজনকে গ্রেপ্তার করার বিষয়টি আদালতের নজরে আনা হয়।” 

সোমবার আদালত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও বাদীকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন। সেখানে বাদী আদালতকে জানান, যে ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে তিনি আসল আসামি নন। এরপর আদালত আয়ুব আলীকে দ্রুত মুক্তি দেওয়ার নির্দেশ দেন। 

তিনি বলেন, “মামলাটি পুলিশের তিনজন কর্মকর্তা তদন্ত করেন। কেউই মূল আসামির বাবার নাম যে এজাহারে ভুল ছিল, সেটা জাতীয় পরিচয়পত্রের মাধ্যমে যাচাই করে সংশোধন করেননি। আসামির বাবার নামে ভুল হওয়ার কারণেই একজন নির্দোষ ব্যক্তিকে হয়রানির শিকার হতে হয়েছে। ভুলের জন্য মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আদালতের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন।”

বুধবার (২৬ মার্চ) কারামুক্ত আয়ুব আলী বলেন, “আমি গরিব মানুষ। দিন আনি দিন খাই। এই হয়রানির কারণে আমার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। সমাজে মানসম্মান নষ্ট হয়েছে। আর্থিক ক্ষতি হইছে। আর পরিবারের মানসিক অশান্তি তো আছেই। সরকারের কাছে আমার দাবি, আমার সাথে যা হইছে, এমন যেন আর কারও সাথে না হয়। নিরপরাধ কোনো লোক যেন এমন হয়রানির শিকার না হয়।”

মামলার নথি বিশ্লেষণ করে জানা যায়, আসামি আয়ুব আলীর বাবার নাম মো. যদন আলী খান হলেও ভুল করে এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছিল ওমেদ শেখ। এ কারণে ওমেদ শেখের ছেলে আয়ুব আলীকে গ্রেপ্তার করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

স্থানীয় সূত্র জানায়, যদন আলী খানদের মূল বাড়ি জেলার মহম্মদপুর উপজেলার ঘুল্লিয়া গ্রামে। তবে দীর্ঘদিন তার ছেলে আয়ুব আলী পৌরসভার নিজনান্দুয়ালীর কাটাখালী আশ্রয়কেন্দ্রের বাসিন্দা ছিলেন। বছর চারেক আগে আশ্রয়কেন্দ্রের পাশে জায়গা কিনে বাড়ি করেছেন। ওই একই আশ্রয়কেন্দ্রে কয়েকটি ঘর ব্যবধানে থাকতেন সদ্য কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়া আয়ুব আলীর বাবা মো. ওমেদ আলী ওরফে ওমেদ শেখ।

ঢাকা/শাহীন/টিপু 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ র প ত র কর

এছাড়াও পড়ুন:

বগুড়ায় সাজাপ্রাপ্ত আসামিকে ধরতে গিয়ে ছুরিকাহত ২ পুলিশ সদস্য

বগুড়ায় সাজাপ্রাপ্ত এক আসামি গ্রেপ্তার করতে গিয়ে আসামিপক্ষের লোকজনের হামলায় পুলিশের দুই সদস্য ছুরিকাহত হয়েছেন। আজ রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে বগুড়া পৌরসভার বারপুর (বড় কুমিড়া) এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

ছুরিকাহত দুজন হলেন বগুড়ার উপশহর পুলিশ ফাঁড়ির এটিএসআই জাহাঙ্গীর আলম ও কনস্টেবল মানিকুজ্জামান। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

পুলিশ সূত্র জানায়, নিশাত নামে এক বছরের সাজা পাওয়া এক আসামিকে গ্রেপ্তার করতে বেলা ১১টার দিকে বারপুর এলাকায় যান পুলিশ সদস্য জাহাঙ্গীর আলম ও মানিকুজ্জামান। এ সময় আসামিসহ তাঁর লোকজন পুলিশের ওপর হামলা করেন এবং দুই পুলিশ সদস্য ছুরিকাহত হন। স্থানীয় লোকজন তাৎক্ষণিকভাবে দুজনকে উদ্ধার করে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন।

বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাসান বাসির প্রথম আলোকে বলেন, ছুরিকাহত পুলিশের দুই সদস্যকে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। হামলায় জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে।

শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপপরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, আহত পুলিশ সদস্যদের প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়েছে। তাঁদের অবস্থা এখনো শঙ্কামুক্ত নয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ