সোনারগাঁয়ে ডিবি পরিচয়ে চাঁদাবাজি, সাংবাদিককে হত্যা চেষ্টা
Published: 27th, March 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁয়ে একদল প্রতারক কখনো ডিবি পরিচয়ে আবার কখনো কথিত পত্রিকার সাংবাদিক দাবী করে চাঁদাবাজিতে বেপরোয়া পড়েছে।
এবিষয়ে স্থানীয় এক গণমাধ্যম কর্মী প্রতিবাদ করায় হত্যা উদ্দেশ্যে হামলা করার অভিযোগ উঠেছে। এতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঐ প্রতাচক্রকে গ্রেপ্তারের দাবী জানিয়েছেন নেটিজেনরা।
ভুক্তভোগী সাংবাদিক মাজেদ ভূইয়া (৩৫) জানান, দীর্ঘ দিন ধরেই এ প্রতারক চক্রের প্রধান জান্নাত জাহা ও জীবনসহ ৫/৭ জনের একটি সক্রিয় দল উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তে ডিবি পুলিশের পরিচয়ে চাঁদাবাজি ও কথিত পত্রিকার সাংবাদিক দাবী করে নানা ধরনের অপকর্ম করে আসছে৷ ইতোমধ্যেই তাদের অপকর্মের অভিযোগ এনে বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ হয়েছে।
তবে গত ৫ আগষ্টের পর থেকে এ প্রতারক চক্রটি পুরো উপজেলায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রশাসনকে বৃদ্ধা আঙ্গুল দেখিয়ে তাদের অপরাধ জগতের মূল হোতা ভান্ডারী টিন দেলোয়ার ও কথিত আইনজীবী ও সাংবাদিক দাবী করা ব্যাটারি মুক্তাদির ছত্রছায়ায় এ ধরনের ঘৃণিত কাজ করে থাকে৷
তারই ধারাবাহিকতায় গত ২৬ শে মার্চ, বুধবার পেশাদারিত্ব কাজ শেষে বাড়ি ফেরার সময় সন্ধ্যায় মোগরাপাড়া চৌরাস্তায় হাবিবপুর ঈদগাঁয়ের সামনে তারা দেশীয় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে আমার উপর অতর্কিত হামলা চালায়।
আমাকে রড ও হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে৷ পরে আমার চিৎকারের শব্দ শুনে স্থানীয়রা আমাকে সোনারগাঁ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। আমি এ ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই ও ঘটনার সাথে জড়িতদের গ্রেপ্তারের দাবী জানাই৷
এ বিষয়ে সোনারগাঁয়ের স্থানীয় সুনামধন্য পত্রিকার সিনিয়র সাংবাদিক নেতৃবৃন্দরা তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এই প্রতারকের কেউ স্থানীয় না তারা এখানে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকে৷ তাদের অত্যাচারে অতিষ্ট পুরো সোনারগাঁবাসী৷ একাধিকবার তাদের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার হলেও অদৃশ্য শক্তির বলে থাকে ধরা-ছোয়ার বাহিরে৷ কেনো প্রশাসন তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসে না এমন প্রশ্ন ছূড়ে সাংবাদিক নেতৃবৃন্দরা বলেন, অতিদ্রুত এ উচ্ছৃঙ্খল ও প্রতারক চক্রকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে৷অন্যথায় আমরা স্থানীয় সাংবাদিকরা কঠিন আন্দোলনে যাবো৷
এ বিষয়ে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মফিজুর রহমান বলেন, সাংবাদিককে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করার একটি অভিযোগ পেয়েছি৷ তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
.উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স ন রগ ও ন র য়ণগঞ জ স ন রগ
এছাড়াও পড়ুন:
‘মাফিয়া’ বসুন্ধরার বিরুদ্ধে যৌক্তিক বক্তব্যকে ‘গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা হচ্ছে: হাসনাত আবদুল্লাহ
পতিত ফ্যাসিস্টদের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক মেশিনারির চাকা সচল হতে শুরু করেছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপকে ‘মিডিয়া মাফিয়া’ আখ্যা দিয়ে তিনি বলেছেন, একটি মাফিয়া গ্রুপের বিরুদ্ধে তাঁর যৌক্তিক বক্তব্য ও অবস্থানকে কিছু সাংবাদিক ‘গণমাধ্যমের প্রতি হুমকি’ হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করছেন। বসুন্ধরার পক্ষে বিবৃতি দেওয়ায় জাতীয় প্রেসক্লাবের নেতাদেরও কড়া সমালোচনা করেছেন হাসনাত।
আজ মঙ্গলবার বিকেলে ফেসবুকে নিজের ভেরিফায়েড অ্যাকাউন্টে এক পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ এ কথাগুলো বলেছেন। বসুন্ধরা গ্রুপকে ‘ভূমিখেকো, বহু বছর আগে থেকে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত ও মিডিয়া মাফিয়া’ উল্লেখ করে হাসনাত বলেছেন, ‘আমি আমার বক্তব্যে যা বলার স্পষ্টভাবেই বলেছি এবং এখনো আবার স্পষ্টভাবেই বলছি, আমি ভূমিখেকো, বহু বছর আগে থেকে হত্যা মামলায় অভিযুক্ত, মিডিয়া মাফিয়া বসুন্ধরা গ্রুপের কর্তৃপক্ষকে হুঁশিয়ার করেছি, যাতে তারা অভ্যুত্থানের নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে ডিজইনফরমেশন এবং হেট (অপতথ্য ও ঘৃণা) ছড়ানো বন্ধ করে এবং পেশাদার সাংবাদিকতায় মনোযোগ দেয়।’ হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের স্বাধীন মিডিয়াকে কোনো হুমকি কখনো দেইনি, বরং আমি স্বাধীন মিডিয়ার পক্ষে একজন অ্যাডভোকেট (সোচ্চার ব্যক্তি)। কিন্তু স্বাধীনতার নামে ফ্যাসিবাদের দোসরদের প্ল্যাটফর্ম দেওয়া এবং যে কারও বিরুদ্ধে ডিজইনফরমেশন ছড়ানো হলে তা মেনে নেওয়া হবে না।’
ফেসবুক পোস্টে হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন, পতিত ফ্যাসিস্টদের সাংস্কৃতিক ও বুদ্ধিবৃত্তিক ‘মেশিনারির’ চাকা সচল হতে শুরু করেছে এবং দুঃখজনকভাবে এই সচল হওয়ার প্রক্রিয়াটা শুরু করেছেন চব্বিশের জুলাই–আগস্টে পতিত ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া সাংবাদিকদের কেউ কেউ। ‘ভূমিখেকো’ ও ‘মিডিয়া মাফিয়া’ বলে পরিচিত বসুন্ধরা গ্রুপ ৫ আগস্টের আগে কীভাবে পতিত ফ্যাসিস্টদের শক্তিশালী করতে ভূমিকা রেখেছে এবং ৫ আগস্টের পর তারা অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের বিরুদ্ধে যেভাবে সিরিজ ডিজইনফরমেশন ও হেট ক্যাম্পেইন (ধারাবাহিক অপতথ্য ও ঘৃণামূলক প্রচারণা) চালিয়ে যাচ্ছে, তার নিন্দা করে গত পরশু একটি বক্তব্য দিয়েছেন। ওই বক্তব্যে এই মিডিয়া মাফিয়া গ্রুপটি যেভাবে পতিত ফ্যাসিস্টদের ফুটসোলজারদের তাদের পত্রিকাগুলোতে প্ল্যাটফর্ম (জায়গা) দিচ্ছে, তার নিন্দা করেছেন এবং তাদের ভবিষ্যতের জন্য হুঁশিয়ার করেছেন, যেন এমন অপকর্ম থেকে সরে আসে।
বিবৃতির নিন্দা
গণমাধ্যমকে জুলাই অভ্যুত্থানের এক নেতার হুমকির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে গতকাল সোমবার একটি বিবৃতি দিয়েছেন জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি হাসান হাফিজ ও সাধারণ সম্পাদক আইয়ূব ভূঁইয়া। এ প্রসঙ্গে এনসিপি নেতা হাসনাত আবদুল্লাহ ফেসবুক পোস্টে লিখেছেন, ‘একটি মাফিয়া গ্রুপের বিরুদ্ধে আমার এই যৌক্তিক বক্তব্য ও অবস্থানকে “মিডিয়ার প্রতি হুমকি” হিসেবে দেখাতে উঠেপড়ে লেগেছেন ৫ আগস্টের পর ওই মিডিয়া গ্রুপে চাকরি পাওয়া এমন কিছু সাংবাদিক, যাদের চব্বিশের অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি হিসেবেই আমরা জানতাম। ৫ আগস্টের পর মিডিয়া মাফিয়া গ্রুপটির অবৈধ টাকার কাছে আত্মা বিক্রি করে দেওয়া ওই সাংবাদিকেরা জাতীয় প্রেসক্লাবে থাকা তাঁদের পদবি ব্যবহার করে বসুন্ধরার পক্ষে এমন বিবৃতি দিচ্ছেন, যেখানে আমার বক্তব্যকে বিকৃতভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।’
জুলাই–আগস্টে যখন দেড় হাজারের বেশি ছাত্র–জনতাকে গুলি করে পুলিশ হত্যা করছিল, তখন জাতীয় প্রেসক্লাবের নেতারা সেই গণহত্যার নিন্দা করে কোনো বিবৃতি দিয়েছিলেন কি না, সেই প্রশ্ন করেছেন হাসনাত আবদুল্লাহ। তিনি বলেন, ‘জাতীয় প্রেসক্লাবের যে নেতারা আমার বক্তব্যকে বিকৃত করে বিবৃতি দিলেন, তাঁরা কি কখনো বসুন্ধরা গ্রুপের মাফিয়া মিডিয়া আউটলেটগুলোর ছড়ানো ভুয়া খবরের নিন্দা করে বিবৃতি দিয়েছিলেন? চব্বিশের গণহত্যায় উসকানিদাতা এই মিডিয়া গ্রুপের অপকর্মের নিন্দা করেছিলেন কখনো? বর্তমান যে নেতারা বিবৃতি দিচ্ছেন, তাঁরা দায়িত্ব নেওয়ার (অনির্বাচিতভাবে) পর বাংলাদেশের গণমাধ্যমকে ফ্যাসিবাদের দোসরদের কবল থেকে মুক্ত করতে কোনো পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, নাকি শুধু নিজেরা কিছু পদ দখল করে আগের ফ্যাসিস্ট এনাবলার ও মাফিয়াদের সঙ্গে যোগসাজশ করে নিজেদের পকেট ভারী করতে ব্যস্ত হয়েছেন?’
৫ আগস্টের আগে ফ্যাসিস্টদের দ্বারা নিপীড়িত কিছু সাংবাদিক মিডিয়া মাফিয়া গ্রুপের পত্রিকায় চাকরি টিকিয়ে রাখতে তাঁর বিরুদ্ধে বিকৃত তথ্য দিয়ে বিবৃতি দেওয়ার পর তাদেরই দেখানো পথে ‘আওয়ামী পলাতক ফ্যাসিস্টদের সহযোগী ও চব্বিশের হত্যা মামলার আসামি সাংবাদিকদের’ একটি গ্রুপ অভ্যুত্থানের শক্তিগুলোর বিপক্ষে বিবৃতি দেওয়ার সাহস পেয়েছে বলেও অভিযোগ করেন হাসনাত। তিনি বলেন, ‘এটি অত্যন্ত লজ্জার বিষয়। সেই বিবৃতি ওই মাফিয়া গ্রুপের পত্রিকাসহ কয়েকটি পত্রিকায় ছাপা হয়েছে। “গণমাধ্যমকে হুমকির প্রতিবাদে অর্ধশতাধিক সাংবাদিকের বিবৃতি” শিরোনামের ওই খবরটিতে দেখা যাচ্ছে, স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে রয়েছে সৈয়দ বোরহান কবির, আবু জাফর সূর্য, নজরুল কবীরদের মতো আওয়ামী তথ্যসন্ত্রাসীদের নাম। এরা চব্বিশে ছাত্র–জনতা হত্যার পক্ষে বৈধতা উৎপাদনে রাত–দিন কাজ করে গেছে এবং এরপর তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হলে এখন পলাতক আছে।’
পোস্টের শেষে হাসনাত আবদুল্লাহ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের জন্য অত্যন্ত লজ্জা ও দুঃখের বিষয় হচ্ছে, বসুন্ধরার মাফিয়া মিডিয়ার অপকর্মের পক্ষে দাঁড়াতে অভ্যুত্থানের নেতাদের বিরুদ্ধে বিবৃতি দিয়ে কিছু সাংবাদিক ও গণমাধ্যমকর্মী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী খুনিদেরও বুদ্ধিবৃত্তিক ও সাংস্কৃতিকভাবে শক্তিশালী করছেন, যাঁরা একসময় আওয়ামী ফ্যাসিবাদের ভুক্তভোগী ছিলেন। আমি এ বিষয়টিতে আমার উদ্বেগ জানিয়ে রাখলাম। একই সঙ্গে ফ্যাসিস্টদের সাংস্কৃতিক ফ্রন্টকে শক্তিশালী করে তুলতে তথাকথিত সাংবাদিক নেতাদের ভূমিকার নিন্দা জানিয়ে রাখলাম।’