সংসারের কাজের ফাঁকে নারীরা বানান টুপি, হয় শতকোটি টাকার বাণিজ্য
Published: 30th, March 2025 GMT
বাড়ির উঠানে পাতা প্লাস্টিকের বস্তা ও পাটি। সংসারের কাজ সামলে সেখানে এসে বসেছেন কয়েকজন নারী। সুখ–দুঃখের গল্প করছিলেন। সঙ্গে সুই–সুতা দিয়ে নকশা তুলছিলেন টুপিতে। প্রত্যন্ত গ্রামের নারীদের বানানো এই টুপি যায় মধ্যপ্রাচ্যে। বিনিময়ে দেশে আসে কোটি কোটি টাকা।
এই দৃশ্য নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার খাজুর ইউনিয়নের মধুবন গ্রামের। উপজেলার খোসালপুর, ডাঙ্গাপাড়া, ঘোষপাড়া, কুঞ্জবন গ্রামেও একই দৃশ্যের দেখা মেলে। ব্যবসায়ীদের তথ্য, জেলার মহাদেবপুর, মান্দা, নিয়ামতপুর, বদলগাছী ও সদর উপজেলার ৮০ থেকে ৯০টি গ্রামের প্রায় ৫০ হাজার নারী টুপি বানানোর কাজের সঙ্গে যুক্ত। সারা বছর টুপি সেলাইয়ের কাজ চললেও পবিত্র রমজান ও দুই ঈদ সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়ে যায়। টুপি বিক্রি করে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। এর মধ্যে শুধু রমজান মাসেই ৫০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়।
নওগাঁর টুপি যায় মধ্যপ্রাচ্যের ওমান, সৌদি আরব, বাহরাইন, কুয়েত ও কাতার এবং আফ্রিকা মহাদেশের তানজানিয়া ও মরক্কোতে। রপ্তানিযোগ্য এসব টুপিতে চেইন, দেওয়ান, বোতাম, গুটিদানা ও মাছকাঁটা নামে পাঁচ ধরনের সেলাই করা হয়।
এক যুগ আগে মোরশেদ নামে ফেনীর এক ব্যবসায়ী মহাদেবপুরের কুঞ্জবনে আসেন। তায়েজ উদ্দিন নামের একজনকে সঙ্গে নিয়ে তিনি কুঞ্জবন ও মধুবন গ্রামে যান। মজুরির বিনিময়ে নারীদের টুপিতে নকশা তোলার কাজে উদ্বুদ্ধ করেন। শুরুতে দুই গ্রামের ২০ থেকে ৩০ নারী টুপিতে সুই-সুতা দিয়ে নকশা তোলার কাজ করতেন। বর্তমানে এই দুই গ্রামের সব বাড়ির নারীরা টুপি তৈরির কাজের সঙ্গে যুক্ত।
আট বছর ধরে টুপি ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত মধুবন গ্রামের আখতারুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘শুরুতে আমার স্ত্রী উদ্যোক্তা তায়েজ উদ্দিনের কর্মী হিসেবে টুপিতে নকশা তোলার কাজ করতেন। ২০১৫ সালের ৫০ হাজার টাকার কাপড় ও সুতা কিনে আশপাশের বিভিন্ন গ্রামের নারীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তাঁদের কাজের ধরনটা বুঝিয়ে দিয়ে নকশার ছাপ দেওয়া টুপির কাপড় ও সুই-সুতা দিয়ে আসি। ১৫ থেকে ২০ দিন পর তাঁদের কাছ থেকে নকশা করা টুপিগুলো নিয়ে আসি। সাইকেল নিয়ে এই গ্রাম, ওই গ্রামে ছোটাছুটি করতাম তখন। ধীরে ধীরে ব্যবসার পরিধি বাড়তে থাকে। এখন আমার অধীনে মহাদেবপুর ও নিয়ামতপুর উপজেলার প্রায় এক হাজার নারী কাজ করেন।
কারিগরদের সঙ্গে জনে জনে যোগাযোগ রাখা কঠিন। তাই একেক অঞ্চলে একেকজন করে প্রতিনিধি নিয়োগ দেওয়া আছে। বিনিময়ে তাঁরা কমিশন হিসেবে প্রতিটি টুপির জন্য ২০ থেকে ৩০ টাকা করে পান।’
টুপি বিক্রি করে বছরে প্রায় ১০০ কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। এর মধ্যে শুধু রমজান মাসেই ৫০ কোটি টাকার বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধের ক্রমবর্ধমান আন্তর্জাতিক নিন্দার মধ্যে, ইসরায়েলের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রি আটকাতে মার্কিন সিনেটে তোলা একটি বিল পাস হতে ব্যর্থ হয়েছে।
ব্যর্থ হলেও, বুধবারের ভোটে দেখা গেছে, মার্কিন ডেমোক্র্যাটিক পার্টির ভেতরে ইসরায়েলের যুদ্ধের বিরোধিতা জোরদার হয়ে উঠেছে।
আজ বৃহস্পতিবার কাতারভিত্তিক আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়, ইসরায়েলের কাছে অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর প্রচেষ্টায় এবারের ভোটে উল্লেখযোগ্য সংখ্যাক ডেমোক্র্যাট যোগ দিয়েছেন।
আরো পড়ুন:
ভারতের ৬ প্রতিষ্ঠানের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
পাকিস্তানের সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি সম্পন্নের ঘোষণা ট্রাম্পের
ইসরায়েলের কাছে ২০ হাজার স্বয়ংক্রিয় অ্যাসল্ট রাইফেল বিক্রি বন্ধ করার প্রস্তাবের পক্ষে ২৭ জন ডেমোক্র্যাট ভোট দিয়েছেন, আর ৬৭৫ মিলিয়ন ডলারের বোমার চালান বন্ধ করার পক্ষে ২৪ জন ভোট দিয়েছেন।
অন্যদিকে, ভোটদারকারী সব রিপাবলিকান সিনেটররা প্রস্তাবের বিপক্ষে ভোট দিয়েছেন।
ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের চলমান হামলার মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র বিক্রির দুটি চুক্তি আটকে দিতে প্রস্তাবগুলো সিনেটে আনেন ভার্মন্টের সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্স। তিনি প্রগতিশীল ঘরানার স্বতন্ত্র সিনেটর।
ভোটের আগে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স-এ একটি পোস্টে স্যান্ডার্স বলেন, “ওয়াশিংটন ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী সরকার’কে এমন অস্ত্র সরবরাহ করা চালিয়ে যেতে পারে না, যা নিরীহ মানুষদের হত্যা করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে।”
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুকে একজন ‘জঘন্য মিথ্যাবাদী’ হিসেবে উল্লেখ করে স্যান্ডার্স ‘এক্স’ পোস্টে আরো বলেন, “গাজায় শিশুরা না খেয়ে মারা যাচ্ছে।”
প্রথমবারের মতো স্যান্ডার্সের প্রস্তাবকে সমর্থনকারী আইন প্রণেতাদের মধ্যে, ওয়াশিংটন রাজ্যের সিনেটর প্যাটি মারে বলেছেন, প্রস্তাবগুলো ‘নিখুঁত’ না হলেও, তিনি গাজার নিষ্পাপ শিশুদের অব্যাহত দুর্ভোগকে সমর্থন করতে পারেন না।
মারে এক বিবৃতিতে বলেন, “ইসরায়েলের দীর্ঘদিনের বন্ধু ও সমর্থক হওয়া সত্ত্বেও আমি প্রস্তাবের পক্ষে ‘হ্যাঁ’ ভোট দিচ্ছি এই বার্তা দিতে: নেতানিয়াহু সরকার এই কৌশল চালিয়ে যেতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “নেতানিয়াহু ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রতিটি পদক্ষেপে এই যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করেছেন। আমরা গাজায় মানবসৃষ্ট দুর্ভিক্ষ প্রত্যক্ষ করছি- সীমান্তের ওপারে যখন প্রচুর পরিমাণে সাহায্য ও সরবরাহ পড়ে আছে, তখন শিশু এবং পরিবারগুলোর অনাহার বা রোগে মারা যাওয়া উচিত নয়।”
মার্কিন জনগণের মধ্যে গাজা যুদ্ধের বিরোধিতা ক্রমবর্ধমান হওয়ার পাশাপাশি ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন নিয়ে ব্যাপক আকারে বিভক্তি দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার প্রকাশিত গ্যালাপের একটি জরিপে দেখা গেছে, ৩২ শতাংশ আমেরিকান বলেছেন, তারা গাজায় ইসরায়েলের সামরিক অভিযান সমর্থন করেন। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ৪২ শতাংশ আমেরিকান ইসরায়েলি অভিযান সমর্থন করেছিলেন।
গ্যালাপের মতে, মাত্র ৮ শতাংশ ডেমোক্র্যাট বলেছেন যে তারা ইসরায়েলের অভিযানের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন, যেখানে ৭১ শতাংশ রিপাবলিকান জানিয়েছেন যে, তারা ইসরায়েলি পদক্ষেপকে সমর্থন দিয়েছেন।
ঢাকা/ফিরোজ