‘বিশ্বকাপে না গেলে পিছিয়ে যাব’, সাক্ষাৎকারে জ্যোতি
Published: 30th, March 2025 GMT
ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে সিরিজ হেরে যাওয়ায় সরাসরি ওয়ানডে বিশ্বকাপে উন্নীত হয়নি বাংলাদেশ। নিগার সুলতানা জ্যোতিদের কোয়ালিফাইং রাউন্ড খেলে যেতে হবে বিশ্বকাপে। তিনি সতীর্থদের আহ্বান জানালেন, পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় বিশ্বকাপ বাছাই টুর্নামেন্টে সেরাটা উজাড় করে খেলতে। জাতীয় দলের উত্থান-পতন, বিসিবির সুযোগ-সুবিধা, ছেলেমেয়ে বৈষম্য নিয়ে মন খুলে বিশ্লেষণ করেছেন নিগার সুলতানা জ্যোতি। তাঁর কথা শুনেছেন সেকান্দার আলী
সমকাল: সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার প্রত্যাশা থাকলেও তা পূরণ হয়নি। কোয়ালিফায়ার খেলে বিশ্বকাপে উন্নীত হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু?
জ্যোতি: খেলোয়াড়, ম্যানেজমেন্ট, বিসিবি সবারই প্রত্যাশা ছিল সরাসরি বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা। ওয়েস্ট ইন্ডিজে একটি ম্যাচ জেতার পর আমাদের ভেতরে আত্মবিশ্বাসও এসেছিল। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সেটা করতে পারিনি। আমাদের কারণেই বড় একটি সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে। এখন কোয়ালিফায়ার খেলে বিশ্বকাপে যেতে হবে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের মধ্য দিয়ে আমরা সে প্রস্তুতি নিয়েছি। বিসিবি কোয়ালিফায়ারের জন্য দলও ঘোষণা করেছে। এতে যেটা ভালো হয়েছে, সবাই নিজের মতো করে প্রস্তুতি নিতে পারবে। এখন দল হিসেবে ভালো ক্রিকেট খেলা গেলে ভালো কিছু করার সম্ভাবনা থাকবে।
সমকাল: বিশ্বকাপের চেয়ে কোয়ালিফায়ার খেলা কি বেশি চাপের?
জ্যোতি: কোয়ালিফাইং রাউন্ড সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং। কারণ, এখানে ভুল করলে বড় সুযোগ হাতছাড়া হওয়ার শঙ্কা থাকে। প্রতিটি দলই চায় বিশ্বকাপ খেলতে। অথচ বিশ্বকাপে উন্নীত হবে মাত্র দুটি দল। সেদিক থেকে বিশ্বকাপ বাছাই টুর্নামেন্ট খুবই চ্যালেঞ্জিং। আমরা কতটা দক্ষতার সঙ্গে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে পারব, সেটা গুরুত্বপূর্ণ।
সমকাল: অস্ট্রেলিয়া সিরিজের পর থেকে লম্বা সময় ভালো খেলছেন না। কারণ কী?
জ্যোতি: ছেলেমেয়ে সব জায়গায় একটা বিষয় থাকে আমাদের। আমরা ওভারকাম করতে পারি না। মেয়েদের ভেতরে জিনিসটা বেশি দেখছি। একটা সিরিজ খারাপ যেতে পারে, পরের সিরিজে তো ফিরে আসবে। অথচ সেখান থেকে আমরা গুছিয়ে ফিরতে পারি না। নারী ক্রিকেটে এটা সবচেয়ে বড় দোষ বলতে পারেন। আমরা ব্যক্তিগতভাবে ভালো করলে দলের কাজে লাগবে। আমাদের পারফরমার বেরিয়ে আসা উচিত। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে পারে এ রকম কিছু খেলোয়াড় তৈরি হয়েছে। সামগ্রিকভাবে যদি পারফর্ম করতে পারি, তাহলে উন্নতি দেখতে পাবেন। তবে এ মুহূর্তে বেশি গুরুত্বপূর্ণ বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা। না পারলে নারী ক্রিকেট নিচে নেমে যাবে। আর বিশ্বকাপ খেলতে পারলে দেশের ক্রিকেট ফোকাসে থাকবে। চাপমুক্ত থেকে আমরা স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারলে ভালো হবে ইনশাআল্লাহ।
সমকাল: ফিটনেস নিয়ে প্রশ্ন ছিল। বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটারদের ফিটনেস এখন কোন পর্যায়ে?
জ্যোতি: আমরা যেটা মনে করি, মেয়েরা আগের চেয়ে অনেক বেশি মনোযোগী। আমি মনে করি, ব্যক্তিগতভাবে ভালো করতে হলে নিজের ফিটনেসে উন্নতি করতে হবে। কারণ, বিশ্ব ক্রিকেট যেভাবে এগোচ্ছে, সেখানে নিজেকে ধরে রাখতে হলে সবদিক থেকে উন্নতি করতে হবে।
সমকাল: টপঅর্ডার ব্যাটিং নিয়ে কি বেশি দুশ্চিন্তা?
জ্যোতি: বিগত দিনে যে টিম ম্যানেজমেন্ট ছিল, তারা খেলোয়াড়দের ফ্রিডম দেওয়ার চেষ্টা করেছে। বিশেষ করে ব্যাটাররা অনেক স্বাধীনতা ভোগ করেছে। টপঅর্ডার ব্যাটাররা অনেক স্বাধীনতা পেয়েছে। কোনো কোচিং স্টাফকে এতটা স্বাধীনতা দিতে দেখিনি। তাদের রোল দেওয়া হয়েছে এবং বলা হয়েছে, রান না করতে পারলেও বাদ পড়বে না। এই স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে, যাতে ধারাবাহিক ভালো খেলতে পারে। যাতে ভয় না করে খারাপ খেললে পরের ম্যাচে থাকবে কিনা। এর পরও ভালো করতে না পারার অর্থ হলো, খেলোয়াড়দের মানসিকতায় ঘাটতি। দু-একজন খেলোয়াড় আবার সব ম্যাচ ভালো খেলে। স্বর্ণা খুব দ্রুত রান তোলে। এ রকম কয়েকজন ক্রিকেটার আরও দরকার। সমস্যা হচ্ছে, টপঅর্ডার ফেল করলে মিডল অর্ডারে চাপ পড়ে। সুপ্তা আপা যোগ হওয়ায় ওপরে কিছুটা ভারসাম্য এসেছে। ইসমাকে নতুনভাবে নেওয়া হয়েছে। সে খুব ভালো স্ট্রাইক রোটেট করতে পারে। টপঅর্ডার ব্যাটারদের স্ট্রাইক রেট ভালো থাকলে আমরা যারা মিডল অর্ডারে খেলি, দেখা যাবে কাজটা সহজ হয়ে যাবে। ২৫০ রান করতে পারলে আমাদের যে বোলিং অ্যাটাক, তাতে যে কোনো দলকে ধরে রাখা সম্ভব।
সমকাল: এখন তো সুযোগ-সুবিধা ভালো, মেয়েরা কি নিজেদের উন্নতির জন্য চেষ্টা করে?
জ্যোতি: আমার কাছে মনে হয়, আগের চেয়ে অনেক বেশি করে। আগে একটা বিষয় ছিল, আমার পরে কেউ নেই। ভালো খেললেও সমস্যা নেই, খারাপ খেললেও সমস্যা না। কারণ, আমার পেছনে কেউ নেই। এখন কিন্তু সে রকম না। বিকল্প খেলোয়াড় ঘাড়ের ওপর কড়া নাড়ছে। এই চিন্তার কারণে স্বাস্থ্যকর প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়। এতে করে উন্নতি করার একটা চ্যালেঞ্জ কাজ করে খেলোয়াড়দের মধ্যে। ওই দিক থেকে বলব, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মানসিকতা আগের চেয়ে বেড়েছে। সিনিয়র ক্রিকেটার বাদ পড়েছে, লিগে ভালো করে আবার দলে ফিরেছে। এই প্রতিদ্বন্দ্বিতা যতদিন থাকবে, ততদিন উন্নতির ধারাবাহিকতা থাকবে।
সমকাল: ছেলে ও মেয়েদের ক্রিকেটে আর্থিক দিক দিয়ে বড় পার্থক্য.
..
জ্যোতি: এই তুলনায় গেলে মেয়েদের ক্রিকেট খেলা হবে না। আকাশ-পাতাল পার্থক্য। ক্রিকেট বোর্ড চেষ্টা করছে ব্যবধান কমিয়ে আনার। শুধু বোর্ড একা এই বৈষম্য কমাতে পারবে না। ছেলেদের ক্রিকেটে যেভাবে স্পন্সর আসে, মেয়েদের ক্রিকেটে আসে না। কিন্তু জাতীয় দলের সুযোগ-সুবিধাগুলো ছেলেদের মতোই পাচ্ছি। আর্থিক সুবিধা বেড়েছে, টুর্নামেন্টের সংখ্যা বেড়েছে, জাতীয় দলের সিরিজ বেড়েছে। এটা ভালো দিক। ২০২২ সালে ওয়ানডে বিশ্বকাপের পরে এফটিপিতে ঢোকার পর অনেক সিরিজ খেলার সুযোগ হয়েছে। যেটা দেশে এবং বিশ্বের কাছে মেয়েদের ক্রিকেটকে পরিচিতি দিয়েছে। বিপিএলটা আয়োজন করা গেলে হয়তো আরও লাভবান হতো খেলোয়াড়রা।
সমকাল: জীবনের দ্বিতীয় ইনিংস শুরু– বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। এবারের ঈদের খুশি নিশ্চয়ই বেশি হবে?
জ্যোতি: হাসি ...। এখনও বিয়ের অনুষ্ঠান হয়নি। আকদ হয়েছে। খেলা নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। আর এবার পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার সুযোগ থাকছে না। কারণ, ৩ এপ্রিল পাকিস্তান যেতে হবে বিশ্বকাপ কোয়ালিফাইং টুর্নামেন্ট খেলতে। এই ঈদ ঢাকায় টিমমেটদের সঙ্গে করব।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: টপঅর ড র ব শ বক প স ব ধ নত আম দ র সমক ল
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।