এক সড়ক দুর্ঘটনায় শেষ হয়ে গেল পুরো পরিবার। মা-বাবা ও দুই বোনের পর মৃত্যুর কাছে হার মানলেন পরিবারে বেঁচে থাকা একমাত্র সদস্য কলেজছাত্রী তাসনিয়া ইসলাম প্রেমাও। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়ায় বাস ও মাইক্রোবাসের ভয়াবহ সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রফিকুল ইসলাম শামীম, তাঁর স্ত্রী লুৎফুন নাহার সুমি এবং তাদের দুই মেয়ে আনীসা আক্তার (১৪) ও লিয়ানার (৮)।
তবে সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান পরিবারের একমাত্র সদস্য প্রেমা। তার পর থেকেই তিনি ছিলেন সংজ্ঞাহীন। তিন দিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তাঁর আর ঘুম ভাঙেনি। চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।
গত বুধবারের সড়ক দুর্ঘটনায় প্রেমা (১৮) বেঁচে গেলেও গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাঁর মস্তিষ্ক। তার পরও জ্ঞান ফেরাতে সব ধরনের চেষ্টা চালান চিকিৎসকরা। প্রথমে চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে এবং শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই দিনই প্রথম রোগী হিসেবে তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে প্রায় তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকলেও ফেরেনি জ্ঞান; মেলেনি কোনো সাড়াও। চিকিৎসকদের সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে না-ফেরার দেশেই চলে যান তিনি। মা-বাবা ও দুই বোনের পর তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই পরিবারটির আর কেউ বেঁচে রইল না। এ নিয়ে লোহাগাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১।
পরিবারের সবার মৃত্যুর কারণে হাসপাতালে প্রেমাকে ভর্তির পর থেকেই পাশে ছিলেন তাঁর ছোট মামি জেসমিন রহমান। গতকাল প্রেমার মৃত্যুর সংবাদ আসার পর থেকেই তাঁর বিলাপ ও কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতালের চারপাশ। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জেসমিন বলেন, আল্লাহ পরিবারের শেষ অবলম্বনটুকুও রাখল না। কী অপরাধ ছিল তাদের?
চমেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা.
হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল বলেন, হাসপাতালে আনার পর থেকেই তাঁর মস্তিষ্কের মাত্রার অবস্থা ছিল খুব খারাপ। প্রাণে বাঁচলেও বাসের ধাক্কায় তাঁর মাথা গুরুতরভাবে আঘাতগ্রস্ত।
প্রেমার স্বজন জানান, ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার যাওয়া নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই দুই পরিবারের সদস্যরা নানা পরিকল্পনা সাজাতে শুরু করেন। অবশেষে ছুটিতে রফিকুল ও লুৎফুন দম্পতি তাদের তিন মেয়ে এবং রফিকুলের সহকর্মী ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দিলীপ বিশ্বাস, তাঁর স্ত্রী সাধনা মণ্ডল ও ছয় বছরের শিশুসন্তান আরাধ্যা বিশ্বাসসহ পর্যটননগরী কক্সবাজারে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে গত বুধবার সকাল ৭টার দিকে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আটজনের।
রফিকুল ইসলাম ঢাকার মিরপুরে পরিবার নিয়ে থাকতেন। তাদের বাড়ি পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা এলাকায়। ভাতিজা পারভেজ ফকির বলেন, কয়েক বছর ধরে তিনি পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসার কথা বলে আসছিলেন। এবার পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার কথা বড় ভাইকে জানিয়েছিলেন। পরে বাড়িতে যাওয়া বাতিল করে অফিসের সহকর্মীর সঙ্গে কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মঙ্গলবার রাতে চাচা মোবাইল ফোনে ভিডিও কল দিয়ে বাড়ির সবার সঙ্গে কথাও বলেন। কে জানত এই কথা শেষ কথা হবে! সেখান থেকে আর বাড়িতে ফিরতে পারলেন না তিনি।
ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হলো শিশু আরাধ্যাকে
দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছয় বছর বয়সী শিশু আরাধ্যা বিশ্বাসের শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। এ কারণে গতকাল দুপুরের দিকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতাল থেকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বুধবারের দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তার বাবা ও মা। দুর্ঘটনায় আরাধ্যার দুই পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। আঘাত পেয়েছে মাথা, হাত, বুকসহ বিভিন্ন অংশে। রক্ত জমাট বেঁধেছে শরীরের নানা অঙ্গে।
গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় আরাধ্যার সঙ্গে স্কয়ার হাসপাতালে থাকা আত্মীয় অসিত কুমার বাড়ৈ মোবাইল ফোনে সমকালকে বলেন, আরাধ্যাকে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। ভর্তির পর থেকে তার বিভিন্ন পরীক্ষা করার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র পর থ ক ই ত দ র ঘটন য় পর ব র র আর ধ য ন র পর ত র পর অবস থ গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবকে এখনও দেশের সবচেয়ে বড় তারকা মানেন তামিম
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে মুখ খুলেছেন তামিম ইকবাল। সমকালকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, তারকা খ্যাতি বা ব্যক্তিগত সাফল্য নয়, এই দুই তারকার দূরত্বের পেছনে অন্য কারণ কাজ করেছে। তবে সেই দূরত্ব ঘোচানোর জন্য বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) কোনও উদ্যোগ নেয়নি বলেও আক্ষেপ করেছেন তিনি।
তামিম বলেন, ‘অনেকে বলে, কে কার চেয়ে সেরা। কার এনডোর্সমেন্ট বেশি। এগুলো কিছুই আমাদের সম্পর্ককে প্রভাবিত করেনি। আমি সব সময় বলেছি, বাংলাদেশের স্পোর্টসে সবচেয়ে বড় তারকা সাকিব। আমি নিজেই যখন এটা বলি, তখন তারকা খ্যাতি সম্পর্কের অবনতির কারণ হতে পারে না।’
তিনি জানান, বিসিবির পক্ষ থেকে চেষ্টা করা হলে সাকিব ও তার মধ্যকার দূরত্ব কমত। ‘তারা আলাদাভাবে কথা বলেছেন, কিন্তু দু’জনকে একসঙ্গে বসিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেননি’, বলেন তামিম।
তামিম আরও বলেন, অধিনায়ক থাকার সময় সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে তিনি নিজেই চেষ্টা করেছেন। যদিও সে চেষ্টা তখন সফল হয়নি, ভবিষ্যতে সম্পর্ক উন্নয়নের সম্ভাবনা এখনও তিনি দেখেন।
এমনকি নিজের অসুস্থতার সময় সাকিবের সহানুভূতিশীল আচরণের কথাও কৃতজ্ঞচিত্তে স্বীকার করেন তামিম। বলেন, ‘আমার অসুস্থতার সময়ে সাকিব তার ফেসবুকে দোয়ার অনুরোধ করেছিল। তার বাবা-মা হাসপাতালে আমাকে দেখতে গিয়েছেন। আমরা দু’জনই পরিণত। সামনাসামনি হলে এবং নিজেদের মধ্যে কথা হলে সম্পর্ক উন্নত হতে পারে।’
তামিমের এই মন্তব্যেই বোঝা যায়, ব্যক্তিগত বিরোধ থাকলেও তামিম এখনও চান সাকিবের সঙ্গে তার সম্পর্কটা সুস্থতায় ফিরুক।