Samakal:
2025-11-03@13:49:54 GMT

কেউ বেঁচে রইল না পরিবারটির

Published: 5th, April 2025 GMT

কেউ বেঁচে রইল না পরিবারটির

এক সড়ক দুর্ঘটনায় শেষ হয়ে গেল পুরো পরিবার। মা-বাবা ও দুই বোনের পর মৃত্যুর কাছে হার মানলেন পরিবারে বেঁচে থাকা একমাত্র সদস্য কলেজছাত্রী তাসনিয়া ইসলাম প্রেমাও। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়ায় বাস ও মাইক্রোবাসের ভয়াবহ সংঘর্ষে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় রফিকুল ইসলাম শামীম, তাঁর স্ত্রী লুৎফুন নাহার সুমি এবং তাদের দুই মেয়ে আনীসা আক্তার (১৪) ও লিয়ানার (৮)।

তবে সেদিন ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান পরিবারের একমাত্র সদস্য প্রেমা। তার পর থেকেই তিনি ছিলেন সংজ্ঞাহীন। তিন দিন ধরে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) তাঁর আর ঘুম ভাঙেনি। চিকিৎসকদের সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ করে গতকাল শুক্রবার দুপুর ১২টার দিকে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। 

গত বুধবারের সড়ক দুর্ঘটনায় প্রেমা (১৮) বেঁচে গেলেও গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তাঁর মস্তিষ্ক। তার পরও জ্ঞান ফেরাতে সব ধরনের চেষ্টা চালান চিকিৎসকরা। প্রথমে চমেক হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগে এবং শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় ওই দিনই প্রথম রোগী হিসেবে তাঁকে আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। সেখানে প্রায় তিন দিন চিকিৎসাধীন থাকলেও ফেরেনি জ্ঞান; মেলেনি কোনো সাড়াও। চিকিৎসকদের সব চেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়ে না-ফেরার দেশেই চলে যান তিনি। মা-বাবা ও দুই বোনের পর তাঁর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে এই পরিবারটির আর কেউ বেঁচে রইল না। এ নিয়ে লোহাগাড়া সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াল ১১। 

পরিবারের সবার মৃত্যুর কারণে হাসপাতালে প্রেমাকে ভর্তির পর থেকেই পাশে ছিলেন তাঁর ছোট মামি জেসমিন রহমান। গতকাল প্রেমার মৃত্যুর সংবাদ আসার পর থেকেই তাঁর বিলাপ ও কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে হাসপাতালের চারপাশ। কান্নাজড়িত কণ্ঠে জেসমিন বলেন, আল্লাহ পরিবারের শেষ অবলম্বনটুকুও রাখল না। কী অপরাধ ছিল তাদের? 

চমেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা.

হারুন-অর-রশিদ বলেন, প্রেমাকে বাঁচাতে সব ধরনের চেষ্টাই করেছি আমরা। দুর্ঘটনায় তাঁর মস্তিষ্ক গুরুতরভাবে আঘাতপ্রাপ্ত হয়। যে কারণে ঘটনার পর থেকেই তিনি সংজ্ঞাহীন ছিলেন। 

হাসপাতালের নিউরোসার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. মো. সাইফুল বলেন, হাসপাতালে আনার পর থেকেই তাঁর মস্তিষ্কের মাত্রার অবস্থা ছিল খুব খারাপ। প্রাণে বাঁচলেও বাসের ধাক্কায় তাঁর মাথা গুরুতরভাবে আঘাতগ্রস্ত। 

প্রেমার স্বজন জানান, ঈদের ছুটিতে কক্সবাজার যাওয়া নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই দুই পরিবারের সদস্যরা নানা পরিকল্পনা সাজাতে শুরু করেন। অবশেষে ছুটিতে রফিকুল ও লুৎফুন দম্পতি তাদের তিন মেয়ে এবং রফিকুলের সহকর্মী ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার দিলীপ বিশ্বাস, তাঁর স্ত্রী সাধনা মণ্ডল ও ছয় বছরের শিশুসন্তান আরাধ্যা বিশ্বাসসহ পর্যটননগরী কক্সবাজারে বেড়াতে যাচ্ছিলেন। যাওয়ার পথে গত বুধবার সকাল ৭টার দিকে তাদের বহনকারী মাইক্রোবাসের সঙ্গে বাসের সংঘর্ষ হয়। এতে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় আটজনের। 

রফিকুল ইসলাম ঢাকার মিরপুরে পরিবার নিয়ে থাকতেন। তাদের বাড়ি পিরোজপুর সদর উপজেলার কদমতলা এলাকায়। ভাতিজা পারভেজ ফকির বলেন, কয়েক বছর ধরে তিনি পরিবার নিয়ে গ্রামের বাড়িতে আসার কথা বলে আসছিলেন। এবার পরিবারের সঙ্গে ঈদ করার কথা বড় ভাইকে জানিয়েছিলেন। পরে বাড়িতে যাওয়া বাতিল করে অফিসের সহকর্মীর সঙ্গে কক্সবাজার ঘুরতে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। মঙ্গলবার রাতে চাচা মোবাইল ফোনে ভিডিও কল দিয়ে বাড়ির সবার সঙ্গে কথাও বলেন। কে জানত এই কথা শেষ কথা হবে! সেখান থেকে আর বাড়িতে ফিরতে পারলেন না তিনি। 

ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হলো শিশু আরাধ্যাকে

দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছয় বছর বয়সী শিশু আরাধ্যা বিশ্বাসের শারীরিক অবস্থার তেমন উন্নতি হয়নি। এ কারণে গতকাল দুপুরের দিকে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চমেক হাসপাতাল থেকে রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। বুধবারের দুর্ঘটনায় ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান তার বাবা ও মা। দুর্ঘটনায় আরাধ্যার দুই পায়ের হাড় ভেঙে গেছে। আঘাত পেয়েছে মাথা, হাত, বুকসহ বিভিন্ন অংশে। রক্ত জমাট বেঁধেছে শরীরের নানা অঙ্গে। 

গতকাল সন্ধ্যায় ঢাকায় আরাধ্যার সঙ্গে স্কয়ার হাসপাতালে থাকা আত্মীয় অসিত কুমার বাড়ৈ মোবাইল ফোনে সমকালকে বলেন, আরাধ্যাকে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়েছে। ভর্তির পর থেকে তার বিভিন্ন পরীক্ষা করার কথা জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র পর থ ক ই ত দ র ঘটন য় পর ব র র আর ধ য ন র পর ত র পর অবস থ গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

সেই রাতে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে যা ঘটেছিল

২৩ আগস্ট রাতে আমাদের গ্রেপ্তার

সৈয়দ নজরুল ইসলাম, তাজউদ্দীন আহমদ,  ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, এ এইচ এম কামরুজ্জামন, এই লেখক শেখ আবদুল আজিজ ও আবদুস সামাদ আজাদ—এই ৬ জনকে ১৯৭৫ সালের ২৩ আগস্ট একসঙ্গে গ্রেপ্তার করে আমাদের পল্টনে কন্ট্রোল রুমে একটি ভাঙা বাড়িতে নেওয়া হয়। আমরা বসা অবস্থায় বঙ্গবন্ধুর ভগ্নিপতি সৈয়দ আহমদকে মুক্তি দেওয়ার জন্য জনৈক কর্নেল ফারুককে অনুরোধ করেছিলেন।

কর্নেল ফারুক উত্তরে বলেছিলেন, ‘আপনাদের সবার ট্রায়াল এখানে হবে।’ আমাদের উদ্দেশ করে বলা হয়েছিল, ‘ইউ উইল হ্যাভ টু জাস্টিফাই ইয়োর করাপশন।’ এ কথা শুনে আমরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। ভাবলাম, এটা কোর্ট নয়, আদালত নয়, কীভাবে এখানে বিচার হবে? এই পরিস্থিতিতে আমাদের পরস্পরের কথা বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
ইতিমধ্যে মেজর ডালিম এসে এইচ এম কামারুজ্জামানের সঙ্গে আস্তে আস্তে কথা বলতে লাগল। কামরুজ্জামান ডালিমকে বলেছিল, ‘এ রকম তো কথা ছিল না!’ তারপর ডালিম চলে গেল। আমাদের সামনে আমাদের সহানুভূতিশীল পুলিশ কর্মচারীরা দৌড়াদৌড়ি করছিল। কিছু সময় পর তারা এসে বলল, ‘আপনারা এই গাড়ি ও মাইক্রোবাসে তাড়াতাড়ি ওঠেন; সেন্ট্রাল জেলে যেতে হবে।’ আমরা গাড়িতে উঠলাম এবং ভাবলাম, বেঁচে গেলাম। সেন্ট্রাল জেলে প্রবেশ করলাম। আমাদের নতুন জেলে থাকার জায়গা করে দেওয়া হলো।

শেখ আবদুল আজিজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ