Samakal:
2025-12-13@19:12:49 GMT

জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করুন

Published: 5th, April 2025 GMT

জরুরি উদ্যোগ গ্রহণ করুন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানির উপর নূতন শুল্ক আরোপের যেই ঘোষণা দিয়াছেন, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। আমরা জানি, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানত তৈরি পোশাক রপ্তানি করিয়া থাকে। আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্যটির শীর্ষ গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।

শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, ২ এপ্রিল ঘোষিত ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশের এই পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এখন শুল্কহার হইবে ৫২ শতাংশ, যা এতদিন ছিল ১৫ শতাংশ। ফলে আগামী দিনগুলিতে আমাদের তৈরি পোশাক খাতে অপ্রত্যাশিত চাপ সৃষ্টি হইবে। বিশেষত যেই সকল কারখানা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেই রপ্তানি করিয়া থাকে, তাহাদের বড় সংকটে পড়িবার শঙ্কা রহিয়াছে। 

এই অতিরিক্ত শুল্ক এমন সময়ে আরোপিত হইল, যখন রাজনৈতিক পালবদলজনিত অস্থিরতার সহিত জ্বালানি সংকটের কারণে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প বেশ চাপে রহিয়াছে। এই সংকট হইতে উত্তরণে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করিতেছিল। উপরন্তু, বাংলাদেশের শতাধিক পণ্য রপ্তানি হয় উক্ত দেশে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের কারণে অন্যান্য খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। উদাহরণস্বরূপ চর্ম ও ঔষধের কথা বলা যায়।

বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সাবেক মহাসচিব এবং হার্ডসন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম শফিউজ্জামান সমকালকে বলিয়াছেন, প্রায় সকল প্রকার কাঁচামাল আমদানি করিতে হয় বলিয়া ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির পর হইতে ঔষধ রপ্তানিতে নিজস্ব কাঁচামালনির্ভর চীন ও ভারতের নিকট বাংলাদেশকে রীতিমতো বেগ পাইতে হইতেছিল। নূতন শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রে ঔষধ রপ্তানির জন্য বৃহৎ ধাক্কা হইতে পারে। বাংলাদেশ লেদার গুডস ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং এমএসডি ট্রেডিং কোম্পানির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলিয়াছেন, নূতন শুল্কহারে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চামড়া ও চামড়াপণ্য রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। রপ্তানিকারকদের বহুদিনের অভিযোগ, ব্র্যান্ডের ক্রেতারা ভোক্তা পর্যায়ে যেই মূল্যে পণ্য বিক্রয় করেন, তাহার অর্ধেকেরও কম পান এদেশীয় রপ্তানিকারকরা। নূতন শুল্কহার উক্ত ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলিবে।

নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ বিশ্বায়নবিরোধী। অথচ এই ধারণার ভিত্তিতেই দেশটি শুল্ক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তির (গ্যাট) মাধ্যমে মুক্ত ও অবাধ, বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রথা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছিল। যাহার অংশরূপে ১৯৯৫ সালে ১৬৬ সদস্যের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) যাত্রা শুরু হয়। বলা যায়, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্বায়নের ধারণায় কুঠারাঘাত করিল। এই প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলিতেছেন, ডব্লিউটিওর নীতিবিরোধী এই মার্কিন পদক্ষেপ বুমেরাং হইতে পারে। কিন্তু ইহাও স্বীকার্য, ট্রাম্প ক্ষমতাসীন হইবার পূর্ব হইতেই এহেন ধারণা প্রচার করিয়াছেন। অর্থাৎ আমাদের প্রধান রপ্তানি বাজাররূপে উক্ত বিষয়ে আমাদের নীতিনির্ধারকগণের প্রস্তুতি গ্রহণের যথেষ্ট সুযোগ ছিল। দুঃখজনক, তাহা অদ্যাবধি দৃশ্যগোচর নহে।

আমরা দেখিয়াছি, তৈরি পোশাক খাতে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে অন্যতম ভারত ট্রাম্প প্রশাসনের সহিত উক্ত বিষয়ে অনেক দেনদরবার করিয়াছে। ধারণা করা হইতেছে, ইহারই ফলস্বরূপ দেশটির উপর বাংলাদেশ অপেক্ষা কম শুল্ক আরোপিত হইয়াছে, যাহা মার্কিন বাজারে দেশটিকে বাংলাদেশ অপেক্ষা বিশেষ সুবিধা দিতে পারে। বলিয়া রাখা প্রয়োজন, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রতিযোগিতায় ভারত ইতোমধ্যে আমাদের গ্রীবায় নিঃশ্বাস ফেলিতেছে। আশার কথা, বিলম্বে হইলেও সরকার বিষয়টি লইয়া ভাবনা শুরু করিয়াছে।

সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা বলিয়াছেন, যেহেতু বাংলাদেশের অনুকূলে বিরাজমান বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের উপর বিপুল পরিমাণ শুল্ক আরোপে উৎসাহ দিয়াছে, তাহারা দেশটি হইতে আমদানীকৃত পণ্যের উপর আরোপিত শুল্ক যাচাই করিতেছে, যাহাতে মার্কিন পণ্য আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনকে একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত দান সম্ভব হয়।

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) মাধ্যমে উক্ত বিষয়ে দরকষাকষির সুযোগ রহিয়াছে বলিয়া আমরা মনে করি। রপ্তানি বাজার ও পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের বহুল কথিত বিষয়ও আর উপেক্ষার সময় নাই।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প আম দ র কর য় ছ আমদ ন র উপর

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ