মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশের পণ্য আমদানির উপর নূতন শুল্ক আরোপের যেই ঘোষণা দিয়াছেন, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। আমরা জানি, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে প্রধানত তৈরি পোশাক রপ্তানি করিয়া থাকে। আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্যটির শীর্ষ গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র।
শুক্রবার প্রকাশিত সমকালের এক প্রতিবেদনে বলা হইয়াছে, ২ এপ্রিল ঘোষিত ট্রাম্পের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বাংলাদেশের এই পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে এখন শুল্কহার হইবে ৫২ শতাংশ, যা এতদিন ছিল ১৫ শতাংশ। ফলে আগামী দিনগুলিতে আমাদের তৈরি পোশাক খাতে অপ্রত্যাশিত চাপ সৃষ্টি হইবে। বিশেষত যেই সকল কারখানা কেবল যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেই রপ্তানি করিয়া থাকে, তাহাদের বড় সংকটে পড়িবার শঙ্কা রহিয়াছে।
এই অতিরিক্ত শুল্ক এমন সময়ে আরোপিত হইল, যখন রাজনৈতিক পালবদলজনিত অস্থিরতার সহিত জ্বালানি সংকটের কারণে আমাদের তৈরি পোশাক শিল্প বেশ চাপে রহিয়াছে। এই সংকট হইতে উত্তরণে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে শুল্কমুক্ত সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করিতেছিল। উপরন্তু, বাংলাদেশের শতাধিক পণ্য রপ্তানি হয় উক্ত দেশে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের কারণে অন্যান্য খাতও ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। উদাহরণস্বরূপ চর্ম ও ঔষধের কথা বলা যায়।
বাংলাদেশ ঔষধ শিল্প সমিতির সাবেক মহাসচিব এবং হার্ডসন ফার্মাসিউটিক্যালস লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম শফিউজ্জামান সমকালকে বলিয়াছেন, প্রায় সকল প্রকার কাঁচামাল আমদানি করিতে হয় বলিয়া ডলারের বিনিময় হার বৃদ্ধির পর হইতে ঔষধ রপ্তানিতে নিজস্ব কাঁচামালনির্ভর চীন ও ভারতের নিকট বাংলাদেশকে রীতিমতো বেগ পাইতে হইতেছিল। নূতন শুল্ক আরোপ যুক্তরাষ্ট্রে ঔষধ রপ্তানির জন্য বৃহৎ ধাক্কা হইতে পারে। বাংলাদেশ লেদার গুডস ম্যানুফ্যাকচারিং অ্যাসোসিয়েশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং এমএসডি ট্রেডিং কোম্পানির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান বলিয়াছেন, নূতন শুল্কহারে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে চামড়া ও চামড়াপণ্য রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হইবে। রপ্তানিকারকদের বহুদিনের অভিযোগ, ব্র্যান্ডের ক্রেতারা ভোক্তা পর্যায়ে যেই মূল্যে পণ্য বিক্রয় করেন, তাহার অর্ধেকেরও কম পান এদেশীয় রপ্তানিকারকরা। নূতন শুল্কহার উক্ত ক্ষেত্রেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলিবে।
নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপ বিশ্বায়নবিরোধী। অথচ এই ধারণার ভিত্তিতেই দেশটি শুল্ক ও বাণিজ্য সংক্রান্ত সাধারণ চুক্তির (গ্যাট) মাধ্যমে মুক্ত ও অবাধ, বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রথা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করিয়াছিল। যাহার অংশরূপে ১৯৯৫ সালে ১৬৬ সদস্যের বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) যাত্রা শুরু হয়। বলা যায়, ট্রাম্পের এই পদক্ষেপ বিশ্বায়নের ধারণায় কুঠারাঘাত করিল। এই প্রেক্ষাপটে বিশেষজ্ঞদের অনেকেই বলিতেছেন, ডব্লিউটিওর নীতিবিরোধী এই মার্কিন পদক্ষেপ বুমেরাং হইতে পারে। কিন্তু ইহাও স্বীকার্য, ট্রাম্প ক্ষমতাসীন হইবার পূর্ব হইতেই এহেন ধারণা প্রচার করিয়াছেন। অর্থাৎ আমাদের প্রধান রপ্তানি বাজাররূপে উক্ত বিষয়ে আমাদের নীতিনির্ধারকগণের প্রস্তুতি গ্রহণের যথেষ্ট সুযোগ ছিল। দুঃখজনক, তাহা অদ্যাবধি দৃশ্যগোচর নহে।
আমরা দেখিয়াছি, তৈরি পোশাক খাতে আমাদের প্রতিদ্বন্দ্বীদের মধ্যে অন্যতম ভারত ট্রাম্প প্রশাসনের সহিত উক্ত বিষয়ে অনেক দেনদরবার করিয়াছে। ধারণা করা হইতেছে, ইহারই ফলস্বরূপ দেশটির উপর বাংলাদেশ অপেক্ষা কম শুল্ক আরোপিত হইয়াছে, যাহা মার্কিন বাজারে দেশটিকে বাংলাদেশ অপেক্ষা বিশেষ সুবিধা দিতে পারে। বলিয়া রাখা প্রয়োজন, যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পোশাক রপ্তানির প্রতিযোগিতায় ভারত ইতোমধ্যে আমাদের গ্রীবায় নিঃশ্বাস ফেলিতেছে। আশার কথা, বিলম্বে হইলেও সরকার বিষয়টি লইয়া ভাবনা শুরু করিয়াছে।
সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা বলিয়াছেন, যেহেতু বাংলাদেশের অনুকূলে বিরাজমান বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের উপর বিপুল পরিমাণ শুল্ক আরোপে উৎসাহ দিয়াছে, তাহারা দেশটি হইতে আমদানীকৃত পণ্যের উপর আরোপিত শুল্ক যাচাই করিতেছে, যাহাতে মার্কিন পণ্য আমদানিতে শুল্ক প্রত্যাহারের মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসনকে একটি ইতিবাচক ইঙ্গিত দান সম্ভব হয়।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ অনুযায়ী বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তির (টিকফা) মাধ্যমে উক্ত বিষয়ে দরকষাকষির সুযোগ রহিয়াছে বলিয়া আমরা মনে করি। রপ্তানি বাজার ও পণ্যের বৈচিত্র্যকরণের বহুল কথিত বিষয়ও আর উপেক্ষার সময় নাই।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প আম দ র কর য় ছ আমদ ন র উপর
এছাড়াও পড়ুন:
‘দেশটা তোমার বাপের নাকি’ গাওয়ার পর পালিয়ে থাকতে হয়েছিল
শিল্পীর সৌজন্যে