মুন্সীগঞ্জের লৌহজংয়ে একটি স্কুলের পাশে এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জ মডেল থানার মালঞ্চ এলাকায় কার্টনে পলিথিনে মোড়ানো অজ্ঞাত ব্যক্তির মরদেহের পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম সবুজ মোল্লা। তিনি সাভারের যাদুরচর গ্রামের ইউনুস মোল্লার ছেলে। নিহতের মামা মহসিন মিয়া তাঁর মরদেহ শনাক্ত করেন বলে পুলিশ জানিয়েছে। 

শুক্রবার বিকেলে ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়ে সংলগ্ন লৌহজং উপজেলার মেদেনীমণ্ডল খানবাড়ি এলাকার আনোয়ার চৌধুরী উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে কার্টনে ভেতর পলিথিনে মোড়ানো অজ্ঞাত ব্যক্তির মাথা ও গলা থেকে কোমর পর্যন্ত খণ্ডিত অংশ পাওয়া যায়। এর আগে সকাল ১০টার দিকে কেরানীগঞ্জের মালঞ্চ এলাকায় পলিথিনে মোড়ানো একটি খণ্ড কুকুরকে টানাটানি করতে দেখেন স্থানীয় লোকজন। সেখানে মানুষের শরীরের অংশ দেখা যায়। পরে স্থানীয় লোকজন ৯৯৯-এ কল করে জানালে কেরানীগঞ্জ মডেল থানা পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা ঘটনাস্থলে যান। আলামত যেন নষ্ট না হয় সে কারণে সিআইডি ও পিবিআইয়ের বিশেষজ্ঞ টিম পলিথিন খুলে মানবদেহের অংশগুলো পর্যবেক্ষণ করে।

মুন্সীগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (শ্রীনগর সার্কেল) আনিসুর রহমান জানান, ঢাকার কেরানীগঞ্জে এ ধরনের মানবদেহের খণ্ডিত অংশ পাওয়ার খবর পেয়ে সেখানে কাজ করে সিআইডি ও পিবিআই। পর্যবেক্ষণ শেষে বিশেষজ্ঞ টিম মুন্সীগঞ্জে যায়। খণ্ডিত অংশগুলো একই ব্যক্তির বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া যায়। 

মুন্সীগঞ্জের গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আবুল কালাম আজাদ জানিয়েছেন, কার্টনে পলিথিনে মোড়ানো অজ্ঞাত ব্যক্তির খণ্ডিত অংশ উদ্ধার হওয়া ব্যক্তির পরিচয় পাওয়া গেছে। নিহত ব্যক্তির নাম সবুজ মোল্লা। তিনি সাভারের যাদুরচর গ্রামের ইউনুস মোল্লার ছেলে। নিহতের মামা মহসিন মিয়া তার মরদেহ শনাক্ত করেন। তিনি জানান, ধারণা করা হচ্ছে, ঘাতকরা হত্যার পর গুম করার উদ্দেশ্যে মরদেহ টুকরো টুকরো করেছিল।

নিহতের পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সবুজ বনানীতে একটা বেসরকারি কোম্পানিতে চাকরি করতেন। বৃহস্পতিবার থেকে নিখোঁজ ছিলেন। বিকেলে সাভার থানায় তাঁর পরিবারের পক্ষ থেকে একটি নিখোঁজের জিডি করা হয়। শুক্রবার সকাল থেকে নিহতের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যায়। পরে তারা জানতে পারেন, কেরানীগঞ্জ ও লৌহজংয়ে কার্টনে পলিথিন মোড়ানো মানুষের খণ্ডিত অংশ উদ্ধার করা হয়েছে। এরপরই পরিবারের স্বজনরা সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। খণ্ডিত অংশগুলো সবুজ মোল্লার বলে নিশ্চিত করেন তারা। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: মরদ হ সব জ ম ল ল ক র টন পল থ ন মরদ হ

এছাড়াও পড়ুন:

অধ্যাপক ইউনূসের সংস্কারের অঙ্গীকারের এক বছর পরেও কারাগারে সাংবাদিকেরা: সিপিজে

সাংবাদিক ফারজানা রুপা চলতি বছরের ৫ মার্চ ঢাকার একটি জনাকীর্ণ আদালতে আইনজীবী ছাড়াই দাঁড়িয়েছিলেন। বিচারক তাঁর বিরুদ্ধে আরেকটি হত্যা মামলা নথিভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু করছিলেন। ইতিমধ্যে অন্য মামলায় কারাগারে থাকা এই সাংবাদিক শান্তভাবে জামিনের আবেদন জানান। ফারজানা বলেন, ‘ইতিমধ্যে আমার বিরুদ্ধে এক ডজন মামলা দেওয়া হয়েছে। আমি একজন সাংবাদিক। আমাকে ফাঁসানোর জন্য একটি মামলাই যথেষ্ট।’

বিশ্বজুড়ে সাংবাদিকদের অধিকার রক্ষায় কাজ করা আন্তর্জাতিক সংগঠন কমিটি টু প্রটেক্ট জার্নালিস্টসের (সিপিজে) এক নিবন্ধে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, বেসরকারি একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপার বিরুদ্ধে ৯টি হত্যা মামলা রয়েছে। আর তাঁর স্বামী চ্যানেলটির সাবেক বার্তাপ্রধান শাকিল আহমেদের নামে রয়েছে আটটি হত্যা মামলা।

এক বছর আগে ছাত্রদের নেতৃত্বে কয়েক সপ্তাহের বিক্ষোভের পর পদত্যাগ করে দেশ থেকে পালিয়ে যান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই বিক্ষোভ চলাকালে দুজন সাংবাদিক নিহত হন। শেখ হাসিনার পদত্যাগ ও দেশ ছাড়ার পর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব নেন নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস।

অধ্যাপক ইউনূস গণমাধ্যম সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। শেখ হাসিনা সরকারের অধীন সাংবাদিকদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু ২০২৪ সালের নভেম্বরে ডেইলি স্টার পত্রিকাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে অধ্যাপক ইউনূস বলেছিলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে তাড়াহুড়ো করে হত্যার অভিযোগ আনা হচ্ছে। তিনি আরও বলেছিলেন, সরকার তখন থেকে এ ধরনের পদক্ষেপ বন্ধ করে দিয়েছে। মামলাগুলো পর্যালোচনা করার জন্য একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

কিন্তু প্রায় এক বছর পর এখনো সাংবাদিক ফারজানা রুপা, শাকিল আহমেদ, শ্যামল দত্ত ও মোজাম্মেল হক বাবু কারাগারে আছেন। হত্যায় উসকানি দেওয়ার অভিযোগে পৃথক মামলায় তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। বিগত সরকারের প্রতি সহানুভূতিশীল হিসেবে ব্যাপকভাবে পরিচিত সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে এ ধরনের অভিযোগের বারবার ব্যবহারকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সেন্সরশিপ বলেই মনে হচ্ছে।

এ ধরনের আইনি অভিযোগ ছাড়াও সিপিজে সাংবাদিকদের ওপর শারীরিক হামলা, রাজনৈতিক কর্মীদের কাছ থেকে হুমকি এবং নির্বাসনের ঘটনা নথিভুক্ত করেছে। বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল কমপক্ষে ২৫ জন সাংবাদিকের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগে তদন্ত করছে। এই অভিযোগ সাবেক শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের লক্ষ্যবস্তু করতে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।

সিপিজের আঞ্চলিক পরিচালক বেহ লিহ ই বলেন, ‘চারজন সাংবাদিককে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই এক বছর ধরে কারাগারে আটকে রাখা অন্তর্বর্তী সরকারের সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রক্ষার ঘোষিত প্রতিশ্রুতিকে দুর্বল করে।’ তিনি আরও বলেন, ‘প্রকৃত সংস্কার মানে অতীত থেকে বেরিয়ে আসা, এর অপব্যবহারের পুনরাবৃত্তি নয়। যেহেতু আগামী মাসগুলোতে দেশে নির্বাচন হতে চলেছে, তাই সব রাজনৈতিক দলকে সাংবাদিকদের খবর প্রকাশের অধিকারকে অবশ্যই সম্মান জানাতে হবে।’

আইনি নথি ও প্রতিবেদন নিয়ে সিপিজের এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, এফআইআর নথিভুক্ত হওয়ার অনেক পর সাংবাদিকদের নাম প্রায়ই এতে যুক্ত করা হয়। মে মাসে জাতিসংঘের বিশেষজ্ঞরা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, গত বছরের বিক্ষোভের পর ১৪০ জনের বেশি সাংবাদিকের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শ্যামল দত্তের মেয়ে শশী সিপিজেকে বলেন, তাঁর বাবার বিরুদ্ধে এখন কতগুলো মামলা চলছে, পরিবার তার হিসাব রাখতে পারেনি। তাঁরা অন্তত ছয়টি হত্যা মামলার কথা জানেন, যেখানে শ্যামল দত্তের নাম আছে। মোজাম্মেল বাবুর পরিবার ১০টি মামলার কথা জানে। ফারজানা রুপা ও শাকিল আহমেদের পরিবার সিপিজেকে জানিয়েছে, তারা পাঁচটি মামলার এফআইআর পাননি, যেখানে একজন বা অন্য সাংবাদিকের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মানে হলো তাঁদের কেউই জামিনের আবেদন করতে পারছেন না।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে প্রধান উপদেষ্টার প্রেসসচিব শফিকুল আলম ও পুলিশের মুখপাত্র এনামুল হক সাগরকে ই–মেইল করে সিপিজে। তবে তাঁরা সাড়া দেননি বলে সিপিজের নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ