কালশী ফ্লাইওভারে দুর্ঘটনায় নিহতরা ছিল ২ বন্ধু, গেম খেলতে গিয়ে পরিচয়
Published: 5th, April 2025 GMT
মোবাইল ফোনে ‘ফ্রি ফায়ার’ গেম খেলতে গিয়ে পরিচয় হয় ঢাকা ও চাঁদপুরের দুই কিশোরের। সেই সূত্র ধরে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। ঈদের ছুটিতে ঢাকায় বন্ধু তোফাজ্জলের সঙ্গে দেখা করতে আসে চাঁদপুরের রিয়াদ। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তারা একটি মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়। তবে তাদের আনন্দ স্থায়ী হয়নি। রাজধানীর পল্লবীর কালশী উড়াল সড়কে উল্টো দিক থেকে আসা প্রাইভেটকারের ধাক্কায় মুহূর্তে মোটরসাইকেলটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। উড়াল সড়ক থেকে ছিটকে নিচে পড়ে তোফাজ্জল। গুরুতর আহত অবস্থায় দু’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনায় দায়ী প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আফতাব হোসেন রাজ। তাঁকে আটক এবং গাড়িটি জব্দ করেছে পুলিশ। তবে নিহতদের পরিবার মামলা করতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার আদালতে পাঠানো হয়। দুর্ঘটনার সময় গাড়িতে থাকা তাঁর স্ত্রী সামান্য আহত হন।
পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাত ১০টা ১১ মিনিটের দিকে দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরে শনিবার তাদের স্বজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে মৃতদেহ শনাক্ত করেন। নিহত মো.
তোফাজ্জলের মামাতো বোন জেরিন আক্তার বলেন, ইসিবি চত্বর এলাকার ইএলএফ স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল তোফাজ্জল। দুর্ঘটনাকবলিত মোটরসাইকেলটি তার, সে-ই চালাচ্ছিল।
ঢামেক মর্গে তোফাজ্জলের বড় ভাই মো. নাঈম জানান, রিয়াদ বৃহস্পতিবার তাদের বাসায় বেড়াতে আসে। শুক্রবার দুই বন্ধু মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়। পরে তিনি দুর্ঘটনার খবর জানতে পারেন।
রিয়াদের মামাতো ভাই মো. রাসেল বলেন, রিয়াদ চাঁদপুরের একটি হাফেজি মাদ্রাসায় পড়ত। সকালে জানতে পারিম সে দুর্ঘটনায় মারা গেছে।
যেভাবে দুর্ঘটনা
পল্লবী থানার এসআই মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, কালশী উড়াল সড়কে দুর্ঘটনার স্থানে বিপরীতমুখী দুটি লেনের মাঝে কোনো সড়ক বিভাজক নেই। তবে সাদা রঙের রেখা দিয়ে সড়ক বিভক্ত করা আছে। ঘটনার সময় প্রাইভেটকারটি ডিওএইচএসের দিকে যাচ্ছিল। চালক অসাবধানতায় সড়কের ডান দিকে বেশি চেপে যান। তখন উল্টো দিকের লেনে থাকা মোটরসাইকেলের সঙ্গে গাড়ির সংঘর্ষের উপক্রম হয়। গাড়িচালক দ্রুত বাঁয়ে সরে আসার চেষ্টা করলে সংঘর্ষে মোটরসাইকেলটি ছিটকে পড়ে। গাড়িও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিসিটিভি ফুটেজে দুর্ঘটনার এমন দৃশ্য ধরা পড়েছে।
তিনি জানান, গুরুতর আহত দু’জনকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় কিংস্টোন হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাদের স্থানান্তর করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে রাত সাড়ে ১১টার দিকে চিকিৎসক দু’জনকে মৃত ঘোষণা করেন। স্বজনের অনুরোধে গতকাল ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ দুটি হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু (ইউডি) মামলা হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন দ র ঘটন র
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।