মোবাইল ফোনে ‘ফ্রি ফায়ার’ গেম খেলতে গিয়ে পরিচয় হয় ঢাকা ও চাঁদপুরের দুই কিশোরের। সেই সূত্র ধরে গড়ে ওঠে বন্ধুত্ব। ঈদের ছুটিতে ঢাকায় বন্ধু তোফাজ্জলের সঙ্গে দেখা করতে আসে চাঁদপুরের রিয়াদ। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তারা একটি মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়। তবে তাদের আনন্দ স্থায়ী হয়নি। রাজধানীর পল্লবীর কালশী উড়াল সড়কে উল্টো দিক থেকে আসা প্রাইভেটকারের ধাক্কায় মুহূর্তে মোটরসাইকেলটি ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। উড়াল সড়ক থেকে ছিটকে নিচে পড়ে তোফাজ্জল। গুরুতর আহত অবস্থায় দু’জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নেওয়ার পর চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

পল্লবী থানার ওসি নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনায় দায়ী প্রাইভেটকারটি চালাচ্ছিলেন একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আফতাব হোসেন রাজ। তাঁকে আটক এবং গাড়িটি জব্দ করেছে পুলিশ। তবে নিহতদের পরিবার মামলা করতে রাজি না হওয়ায় তাঁকে ৫৪ ধারায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে শনিবার আদালতে পাঠানো হয়। দুর্ঘটনার সময় গাড়িতে থাকা তাঁর স্ত্রী সামান্য আহত হন। 

পুলিশ জানায়, শুক্রবার রাত ১০টা ১১ মিনিটের দিকে দুর্ঘটনার পর তাৎক্ষণিকভাবে নিহতদের পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরে শনিবার তাদের স্বজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গে গিয়ে মৃতদেহ শনাক্ত করেন। নিহত মো.

তোফাজ্জল (১৭) পরিবারের সঙ্গে রাজধানীর ক্যান্টনমেন্টের মানিকদি বাজার এলাকায় থাকত। তাঁর গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জের ইটনায়। চার ভাই ও এক বোনের মধ্যে সে দ্বিতীয়। তার বাবা রেনু মিয়া পেশায় সবজি ব্যবসায়ী। অন্যদিকে, মো. রিয়াদের (১৬) বাড়ি চাঁদপুর সদরের দক্ষিণ হামানকদ্দি এলাকায়। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সে তৃতীয়। তার বাবা বিল্লাল কাজী দুবাইপ্রবাসী। 

তোফাজ্জলের মামাতো বোন জেরিন আক্তার বলেন, ইসিবি চত্বর এলাকার ইএলএফ স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র ছিল তোফাজ্জল। দুর্ঘটনাকবলিত মোটরসাইকেলটি তার, সে-ই চালাচ্ছিল। 

ঢামেক মর্গে তোফাজ্জলের বড় ভাই মো. নাঈম জানান, রিয়াদ বৃহস্পতিবার তাদের বাসায় বেড়াতে আসে। শুক্রবার দুই বন্ধু মোটরসাইকেল নিয়ে ঘুরতে বের হয়। পরে তিনি দুর্ঘটনার খবর জানতে পারেন। 

রিয়াদের মামাতো ভাই মো. রাসেল বলেন, রিয়াদ চাঁদপুরের একটি হাফেজি মাদ্রাসায় পড়ত। সকালে জানতে পারিম সে দুর্ঘটনায় মারা গেছে। 

যেভাবে দুর্ঘটনা 
পল্লবী থানার এসআই মোহাম্মদ আতিকুর রহমান বলেন, কালশী উড়াল সড়কে দুর্ঘটনার স্থানে বিপরীতমুখী দুটি লেনের মাঝে কোনো সড়ক বিভাজক নেই। তবে সাদা রঙের রেখা দিয়ে সড়ক বিভক্ত করা আছে। ঘটনার সময় প্রাইভেটকারটি ডিওএইচএসের দিকে যাচ্ছিল। চালক অসাবধানতায় সড়কের ডান দিকে বেশি চেপে যান। তখন উল্টো দিকের লেনে থাকা মোটরসাইকেলের সঙ্গে গাড়ির সংঘর্ষের উপক্রম হয়। গাড়িচালক দ্রুত বাঁয়ে সরে আসার চেষ্টা করলে সংঘর্ষে মোটরসাইকেলটি ছিটকে পড়ে। গাড়িও কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিসিটিভি ফুটেজে দুর্ঘটনার এমন দৃশ্য ধরা পড়েছে।

তিনি জানান, গুরুতর আহত দু’জনকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় কিংস্টোন হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাদের স্থানান্তর করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে রাত সাড়ে ১১টার দিকে চিকিৎসক দু’জনকে মৃত ঘোষণা করেন। স্বজনের অনুরোধে গতকাল ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ দুটি হস্তান্তর করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যু (ইউডি) মামলা হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: সড়ক দ র ঘটন দ র ঘটন র

এছাড়াও পড়ুন:

চট্টগ্রামে বছর শেষে বাড়ছে ডেঙ্গু, কমেছে চিকুনগুনিয়া

চট্টগ্রামে বছরের শেষে এসে আবারও বাড়ছে ডেঙ্গুর সংক্রমণ। চলতি নভেম্বর মাসের প্রথম দুই দিনেই ৮৭ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গতকাল রোববার বেলা একটা পর্যন্ত আগের ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১ জনের ডেঙ্গু শনাক্ত হয়েছে। গত বছরও এই সময়ে ডেঙ্গুর সংক্রমণ বেড়েছিল। এদিকে বছরের শেষ দিকে এসে চিকুনগুনিয়ার সংক্রমণ কমেছে। গতকাল ২৪ ঘণ্টায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল শূন্য।

ডেঙ্গু ও চিকুনগুনিয়া—দুটিই মশাবাহিত ভাইরাসজনিত রোগ। দুটিই এডিস মশার কামড়ে হয়। এডিসের বংশ বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখে বৃষ্টি। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, নভেম্বরের শুরুতে লঘুচাপের কারণে বৃষ্টি হতে পারে। ফলে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।

চট্টগ্রামে বছরের শুরু থেকে গতকাল বেলা একটা পর্যন্ত ৩ হাজার ৫৯২ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হন। সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়েছে গত অক্টোবর মাসে। পুরো জেলায় ওই মাসে আক্রান্ত হয়েছিলেন ৯৯০ জন। এর আগের মাসে অর্থাৎ সেপ্টেম্বরে আক্রান্তের সংখ্যা ৯৩৫। চলতি নভেম্বর মাসে এ সংখ্যা নির্ভর করছে বৃষ্টির ওপর। কারণ, শীত শুরু হলে এডিসের বংশবৃদ্ধির আশঙ্কা কম। তবে বৃষ্টি হলে সেটি বাড়তে পারে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়লেও চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত কমেছে। গতকাল পর্যন্ত জেলায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৬৬৯। তবে চিকুনগুনিয়ায় মাসভিত্তিক তথ্য দেয়নি সিভিল সার্জন কার্যালয়। যদিও প্রতিদিনের আক্রান্তের হিসাব দেয় তারা। প্রাথমিক হিসাবে, গত সেপ্টেম্বর মাসে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৭০৪। গত অক্টোবর মাসে আক্রান্ত হয়েছেন ১২১ জন। এ মাসে কেবল একজন।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে ডেঙ্গুতে সর্বশেষ মৃত্যু গত ৩০ সেপ্টেম্বর। এদিন বেলা সাড়ে তিনটার দিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় জয় তারা (১৬) নামের এক কিশোরীর মৃত্যু হয়। এ নিয়ে চলতি বছর চট্টগ্রামে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে নিহতের সংখ্যা ২০।

এদিকে গত বছরের তুলনায় এ বছর হাসপাতালে ভর্তি রোগীদের অবস্থা গুরুতর। তাঁদের উপসর্গগুলোও কিছুটা ভিন্ন বলে জানা গেছে। গতকাল দুপুর পর্যন্ত ৪১ জন রোগী জেলার বিভিন্ন হাসপাতালে ডেঙ্গুর চিকিৎসা নিতে ভর্তি হয়েছেন। এর মধ্যে ১৩ জন ভর্তি হয়েছেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসে (বিআইটিআইডি) এবং ১২ জন ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।এ এস এম লুৎফুল কবির, মেডিসিন বিভাগের প্রধান, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, গত বছর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে শ্বাসকষ্ট দেখা গেছে। তবে এ বছর যাঁরা আসছেন, তাঁদের মধ্যে শক সিনড্রোম বেশি। পাশাপাশি ডায়রিয়ার উপসর্গও আছে। শক সিনড্রোম হলে রোগীর রক্তচাপ বোঝা যায় না। এই দুটি উপসর্গ গুরুতর। কারণ, সময়মতো ফ্লুইড (তরল খাবার) না পেলে রোগীর অবস্থা আরও গুরুতর হতে পারে।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান এ এস এম লুৎফুল কবির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে ১৫ জন ডেঙ্গু রোগী ভর্তি আছেন। ডায়রিয়া ও বমি হলো ডেঙ্গু ওয়ার্নিং সাইন (সতর্ক সংকেত)। এগুলো দেখলে বোঝা যায় রোগীর অবস্থা গুরুতর হচ্ছে।’

চলতি বছর এপ্রিল থেকে মোটামুটি বৃষ্টি হচ্ছে। জুনে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টি হলেও পরের মাসগুলোয় স্বাভাবিক বৃষ্টি হয়। আর থেমে থেমে বৃষ্টির সঙ্গে গরম কিন্তু কমেনি। এই বৃষ্টি ও উচ্চ তাপমাত্রা চলতি বছর ডেঙ্গুর বিস্তারে বড় ভূমিকা রেখেছে বলে মনে করেন কীটতত্ত্ববিদেরা। তবে সংক্রমণ কমাতে সিভিল সার্জন কার্যালয় ও সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

নগরের ২৫টি এলাকাকে ডেঙ্গু ও ২৫টি এলাকাকে চিকুনগুনিয়ার জন্য হটস্পট হিসেবে চিহ্নিত করেছে সিভিল সার্জন কার্যালয়। এর মধ্যে বন্দর, ইপিজেড, হালিশহর, কোতোয়ালি, বায়েজিদ, পাহাড়তলী, কাট্টলী, খুলশী, ডবলমুরিং, লালখান বাজার, আগ্রাবাদ, চান্দগাঁও, দেওয়ানহাট, আন্দরকিল্লা, মুরাদপুর, সদরঘাট—এসব এলাকায় ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার ঝুঁকি রয়েছে। এসব এলাকায় সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশার ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।

সিটি করপোরেশনের ম্যালেরিয়া ও মশক নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা সরফুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিশেষ দল করা হয়েছে ডেঙ্গু-চিকুনগুনিয়ার জন্য। নিয়ম করে এলাকা ভাগ করে রুটিন অনুযায়ী ওষুধ ছিটানো হচ্ছে।’

চট্টগ্রামের ডেপুটি সিভিল সার্জন মোহাম্মদ তৌহিদুল আনোয়ার প্রথম আলোকে বলেন, সাধারণত বৃষ্টি হওয়ার ২৮ দিন পর্যন্ত মশার প্রকোপ থাকে বলে ধারণা করা হয়। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে শঙ্কা থেকে যাচ্ছে। এ মাসে বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানা গেছে। এতে ডেঙ্গু বাড়তে পারে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ