সূচনা ফাউন্ডেশনকে ৩৩ কোটি টাকা দেয় ২০ ব্যাংক, আত্মসাতের অভিযোগ সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে
Published: 6th, April 2025 GMT
সূচনা ফাউন্ডেশনের নামে ব্যাংকের করপোরেট সোশ্যাল রেসপনসিবিলিটি (সিএসআর) ফান্ডের প্রায় ৩৩ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের (পুতুল) বিরুদ্ধে। এ কাজে তাঁকে সহযোগিতা করতেন এক্সিম ব্যাংক ও বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) সাবেক চেয়ারম্যান মো.
যে ২০টি ব্যাংক সূচনা ফাউন্ডেশনে টাকা দিয়েছিল, সেই ব্যাংকগুলোর তথ্য পেয়েছে দুদক। দুদকের সংশ্লিষ্ট সূত্র বলছে, জনকল্যাণ ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ব্যাংকগুলো সিএসআর ফান্ড জমা করে। সেই টাকা জোর করে নিত সূচনা ফাউন্ডেশন। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারপারসনের দায়িত্বে ছিলেন সায়মা ওয়াজেদ। তাঁর বিরুদ্ধে গত ২০ মার্চ দুদকের উপপরিচালক তাহাসিন মুনাবীল হক বাদী হয়ে ঢাকা সমন্বিত কার্যালয়-১–এ একটি মামলা করেন।
সূচনা ফাউন্ডেশনকে সিআরএস ফান্ড থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়েছে বেসরকারি ব্যাংক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এফএসআইবিএল) ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল)। ব্যাংক দুটি দিয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। বাকি ব্যাংকগুলো পাঁচ লাখ টাকা থেকে আড়াই কোটি টাকা পর্যন্ত দিয়েছে।দুদকের উপপরিচালক আখতার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ক্ষমতার অপব্যবহার করে ২০টি ব্যাংক থেকে ৩৩ কোটি ৫ লাখ টাকা নিয়েছিল সূচনা ফাউন্ডেশন। ব্যাংকের সিএসআর ফান্ডের টাকা অপব্যয় ও আত্মসাতের অভিযোগে সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এ মামলায় নজরুল ইসলাম মজুমদারকেও আসামি করা হয়েছে।
সূচনা ফাউন্ডেশনকে টাকা দেওয়া ব্যাংকগুলোর একাধিক শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলেছে প্রথম আলো। একটি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, সূচনা ফাউন্ডেশনকে টাকা দিতে বিএবির সাবেক চেয়ারম্যান মো. নজরুল ইসলাম মজুমদার একটি চিঠি দিয়েছিলেন। তাই বাধ্য হয়ে তাঁরা টাকা দিয়েছেন।
ব্যাংকাররা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী সিএসআর ফান্ডের বেশির ভাগ অর্থ তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে ব্যয় করেন। নির্দেশনা অনুযায়ী, ব্যাংকগুলোকে তাদের সিএসআর তহবিলের ৩০ শতাংশ শিক্ষা খাতে, ৩০ শতাংশ স্বাস্থ্যসেবায় ও ২০ শতাংশ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজন খাতে বিনিয়োগ করতে হয়।
মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, ২০১৪ সালে সায়মাকে দুই বছরের জন্য সূচনা ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান করা হয়। প্রতিবন্ধীদের আর্থিক সহযোগিতার কথা বলে প্রতিষ্ঠানটি করা হয়েছিল। পরে ২০১৭ সালে সরকারি প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে সায়মা ওয়াজেদকে বাংলাদেশ অটিজম ও স্নায়ুবিকাশজনিত সমস্যা নিরসনে গঠিত জাতীয় স্টিয়ারিং কমিটির কার্যাবলি সম্পাদনে সহায়ক ও পরামর্শ দেওয়ার জন্য গঠিত জাতীয় উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারপারসন পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। দুদকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সায়মা ওয়াজেদ সূচনা ফাউন্ডেশনের হর্তাকর্তা ছিলেন।
সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের কর্মকর্তারা দুদককে বলেন, সিআরএস ফান্ডের টাকা তাঁরা জনকল্যাণ ও সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজের জন্য ব্যবহার করতেন। তবে ২০১৬ সাল থেকে এই ফান্ডের টাকা নেওয়া শুরু করে সূচনা ফাউন্ডেশন।
সূচনা ফাউন্ডেশনকে সিআরএস ফান্ড থেকে সবচেয়ে বেশি টাকা দিয়েছে বেসরকারি ব্যাংক ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক লিমিটেড (এফএসআইবিএল) ও ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেড (আইবিবিএল)। ব্যাংক দুটি দিয়েছে প্রায় ১০ কোটি টাকা। বাকি ব্যাংকগুলো পাঁচ লাখ টাকা থেকে আড়াই কোটি টাকা পর্যন্ত দিয়েছে। সূচনা ফাউন্ডেশনে টাকা দেওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে আরও রয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, সাউথইস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও এনআরবিসি ব্যাংক।
ব্যাংকাররা বলছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী সিএসআর ফান্ডের বেশির ভাগ অর্থ তারা শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও জলবায়ু পরিবর্তন অভিযোজনে ব্যয় করেন।দুদক সূত্র জানায়, সায়মা ওয়াজেদ বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (সাবেক বিএসএমএমইউ) শিক্ষকতার মিথ্যা দাবি করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক পদে নিয়োগের আবেদন করেছিলেন এবং পরিচালক পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন। এ অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুদক। এর আগে গত ১৫ জানুয়ারি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স এসআর ফ ন ড র ল ইসল ম র জন য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।