পরীমণি কার সঙ্গে খাবে, শোবে, তা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার: তসলিমা
Published: 6th, April 2025 GMT
ঢাকাই সিনেমার নায়িকা পরীমণির বিরুদ্ধে গৃহকর্মীকে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ অভিনেত্রীর সন্তানকে খাবার খাওয়ানোকে কেন্দ্র করে গৃহকর্মী পিংকি আক্তারকে মারধরের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী গৃহপরিচারিকা রাজধানীর ভাটারা থানায় একটি অভিযোগ করেছেন।
গণমাধ্যমে খবর প্রকাশের পাশাপাশি বিষয়টি নিয়ে জোর চর্চা চলছে সোশ্যাল মিডিয়ায়ও। বিশেষ করে পরীমণিকে নিয়ে পিংকির মন্তব্য আলোচনার জন্ম দিয়েছে। বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন ভারতে বসবাস করলেও পরীমণি বিষয়টি তার দৃষ্টিগ্রাহ্য হয়েছে। এ নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন ‘লজ্জা’খ্যাত এই লেখক।
পরীমণির পাশে থাকার কথা স্মরণ করে তসলিমা নাসরিন বলেন, “পরীমণির সুসময়ে আমি পাশে থাকি না। ওর দুঃসময়ে আমি ছুটে আসি। আবার ওর আঙিনায় দুঃসময় এসে দাঁড়িয়েছে। এক মহিলা গৃহপরিচারিকার চাকরি নিয়ে ওর বাড়িতে ঢুকেছিল। কিছুদিন পর সে বেরিয়ে এসে পরীমণির বিরুদ্ধে মামলা ঠুকেছে, আর মিডিয়াও বেশ ফলাও করে মহিলার সাক্ষাৎকার ছাপাচ্ছে, যেন মহিলা যা বলছে সবই সত্যি। মিডিয়ার চরিত্র আমরা জানি। নারী, বিশেষ করে সে নারী যদি ব্যতিক্রমী, সাহসী, প্রতিভাময়ী হয়, তাহলে তার সর্বনাশ না করে ছাড়বে না মিডিয়া। গড্ডালিকা প্রবাহে গা ভাসানো, রক্ষণশীলতা আঁকড়ে রাখা, ক্ষমতার চাটুকারিতা বাংলাদেশের মিডিয়ার বিশেষ দোষ।”
আরো পড়ুন:
চটেছেন পরীমণি
বর্ষাকে নিয়ে পরীমণির দীর্ঘ পোস্ট, অনেক প্রশ্ন
গণমাধ্যমের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তসলিমা নাসরিন। তার মতে, “মিডিয়া তো রক্ষণশীল পুরুষতান্ত্রিক লোকদেরই তৈরি। এ আর নারীবিদ্বেষী সমাজ থেকে আলাদা কী হবে! পরীমণিকে আক্রমণ করার জন্য, তার চরিত্রে কালি লেপনের জন্য মহিলাটিকে ব্যবহার করা হচ্ছে। ব্যবহৃত হয়ে যাওয়ার পর মহিলাকেও কিন্তু মিডিয়া ছুড়ে ফেলে দেবে আস্তাকুঁড়ে। কোনো সৎ মিডিয়া কিন্তু কোনো সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতিতে এক তরফের বক্তব্য নিয়ে মেতে ওঠে না, দু’তরফের বক্তব্যই গ্রহণ করে। নিরপেক্ষ থাকা মিডিয়ার জন্য অবশ্য কর্তব্য হলেও সেটিকেই তারা সবচেয়ে বেশি অবজ্ঞা করে।”
গৃহপরিচারিকার ‘বদ উদ্দেশ্য’ রয়েছে বলে তসলিমা নাসরিনের। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “গৃহপরিচারিকার চাকরি করতে আসা মহিলাটি যে মিথ্যে কথা বলছে, তা সহজেই অনুমেয়। তার বর্ণিত চড় খেয়ে মুর্চ্ছা যাওয়ার ঘটনাটি যথেষ্ট সন্দেহ সৃষ্টি করে। পরীমণির বিরুদ্ধে সে যে নোংরা ভাষায় কথা বলেছে, তাতে মনে হয় সে বদ একটি উদ্দেশ্য নিয়ে পরীমণিকে বিপদে ফেলার ষড়যন্ত্র করছে এবং এই ষড়যন্ত্রে তাকে অনেকেই সাহায্য করছে। পরীমণির ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে তার জঘন্য মন্তব্য সব রকম সীমা অতিক্রম করেছে।”
পরীমণির ব্যক্তি স্বাধীনতার কথা উল্লেখ করে তসলিমা নাসরিন বলেন, “পরীমণি কার সঙ্গে কথা বলবে, খাবে, ঘুরবে, বেড়াবে, শোবে, তা তার একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। সম্মানীয় শিল্পীর বিরুদ্ধে অসম্মানজনক বাক্যাবলী উচ্চারণ করার জন্য মহিলাকে উৎসাহ দেওয়া বা উসকে দেওয়া এবং সেসব অবাধে প্রচার করা মিডিয়ার উচিত হয়নি। আদালতের উচিত নয় নারীবিদ্বেষী ষড়যন্ত্রের মামলাকে গ্রহণ করা বা আদপেই মূল্য দেওয়া। এই সত্যটা সবারই জানা উচিত, গরিব হলেই মানুষ সৎ হয় না। গরিবরাও অসৎ, ধুরন্দর, বদমাশ, মিথ্যুক, নিষ্ঠুর, চোর, ডাকাত, ধর্ষক, খুনী হতে পারে।”
ঢাকা/শান্ত
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর চলচ চ ত র গ হপর চ র ক র জন য তসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারীকে হত্যায় বিএনপি নেতা গ্রেপ্তার, পরিবার বলছে ষড়যন্ত্র
কুমিল্লার মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ নারীকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার ঘটনায় উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আলম সরকারকে গ্রেপ্তার করেছেন জেলা পুলিশের গোয়েন্দা শাখার (ডিবি) সদস্যরা। গতকাল সোমবার রাত সাড়ে আটটার দিকে উপজেলার আকুবপুর ইউনিয়নে পীর কাশিমপুর গ্রাম থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়।
শাহ আলম একই এলাকার বাসিন্দা ও সাবেক আকুবপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান। ডিবি পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তার দাবি, প্রাথমিক তদন্তে ওই ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ততা মেলায় শাহ আলমকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তিনি ওই তিন খুনের মামলায় এজাহারনামীয় আসামি।
আরও পড়ুনআড়াই ঘণ্টা অপেক্ষার পর আর স্বীকারোক্তি দেননি ‘অন্যতম পরিকল্পনাকারী’০৬ জুলাই ২০২৫তবে শাহ আলম ওই মামলার প্রকৃত আসামি নন বলে দাবি করেছেন তাঁর ছেলে উপজেলা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহ আজিজ সরকার। তিনি বলেন, ‘ডিবি পুলিশ বলছে, আমার বাবাকে ট্রিপল মার্ডার মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে, তিনি এজাহারনামীয় আসামি। তবে এ মামলার এজাহারের ২৫ নম্বরে থাকা শাহ আলম নামের আসামির বয়স ৪০ বছর। আর আমার বাবার বয়স ৭০ বছরের বেশি। এ ছাড়া আমার দাদার নাম জানেন না, এলাকায় এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাহলে আসামির পিতার নাম অজ্ঞাত রাখা হলো কেন? এটা সম্পূর্ণ ষড়যন্ত্র। আমার বাবাকে রাজনৈতিকভাবে হয়রানির জন্য এই মামলায় গ্রেপ্তার করানো হয়েছে।’
মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মহিউদ্দিনও বিষয়টি ষড়যন্ত্র বলে উল্লেখ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগে শুনিনি তিনি (শাহ আলম) এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত। এ ছাড়া ঘটনার সময় বা আগে-পরের কোনো সিসিটিভি ফুটেজে তাঁকে দেখা যায়নি। আমার মনে হয়, কোথাও ভুল হচ্ছে। তাঁকে অযথা গ্রেপ্তার করে বৃদ্ধ বয়সে হয়রানি করা হচ্ছে।’
আরও পড়ুনকুমিল্লায় মা, মেয়ে ও ছেলেকে হত্যার মামলায় আরও ৬ জন গ্রেপ্তার০৫ জুলাই ২০২৫ঘটনার সময় শাহ আলম ঘটনাস্থলে ছিলেন কি না, তা নিশ্চিত নন বলে জানিয়েছেন মামলার বাদী রিক্তা আক্তার। আজ সকালে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘এ ঘটনায় পীর কাশিমপুরের শাহ আলম নামের একজন জড়িত বলে যখন জানতে পেরেছি, তখন মামলায় নামটি উল্লেখ করেছি। পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারিনি বলে আমি মামলাতে আসামির বাবার নাম অজ্ঞাত রেখেছি। ডিবি পুলিশ মামলাটি তদন্ত করছে। আমি কাউকে অন্যায়ভাবে হয়রানি করতে চাই না। ডিবি পুলিশের তদন্তে যদি তিনি ঘটনায় জড়িত থাকেন, তাহলে গ্রেপ্তার করুক; না হলে, আমি চাই না কোনো নিরীহ মানুষের হয়রানি হোক।’
ঘটনার প্রায় এক মাস পার হলেও প্রধান আসামি শিমুল বিল্লাহ এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় ক্ষোভ ও আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন রিক্তা। তিনি বলেন, ‘শিমুল গ্রেপ্তার না হলে যেকোনো সময় আমার ওপর হামলা হতে পারে, আমাকে হত্যাও করতে পারে। আমি দ্রুত তার গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি।’
আরও পড়ুনকুমিল্লায় মা, মেয়ে ও ছেলেকে হত্যার ৩৯ ঘণ্টা পর মামলা, আটক ২০৫ জুলাই ২০২৫সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ডিবির উপপরিদর্শক (এসআই) নয়ন কুমার চক্রবর্তী বলেন, প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সঙ্গে শাহ আলমের সম্পৃক্ততা পাওয়ায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে মামলাটির মোট ১০ আসামি গ্রেপ্তার হয়েছেন। ৯ আসামি কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। নতুন করে গ্রেপ্তার শাহ আলমকে আদালতে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। বাকি আসামিদেরও গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
৩ জুলাই সকালে উপজেলার কড়ইবাড়ি গ্রামে মা, ছেলেমেয়েসহ একই পরিবারের তিনজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত ব্যক্তিরা হলেন ওই গ্রামের রোকসানা বেগম (৫৩), তাঁর ছেলে রাসেল মিয়া (৩৫) ও মেয়ে তাসপিয়া আক্তার (২৯)। পরদিন রাতে ৩৮ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় ২০ থেকে ২৫ জনকে আসামি করে উপজেলার বাঙ্গরা বাজার থানায় মামলা করেন রোকসানার বড় মেয়ে রিক্তা আক্তার। ওই মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে আকুবপুর ইউপির চেয়ারম্যান শিমুল বিল্লাহকে। তিনি পলাতক আছেন।
আরও পড়ুনমুঠোফোন চুরিকে কেন্দ্র করে খেপিয়ে তোলা হয় এলাকাবাসীকে০৩ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনকুমিল্লায় মাদক বেচাকেনার অভিযোগে মা ও দুই সন্তানকে গণপিটুনি, কুপিয়ে হত্যা০৩ জুলাই ২০২৫আরও পড়ুনস্থানীয় ইউপি সদস্যের পরিকল্পনায় মুরাদনগরে ‘মব’ সৃষ্টি করে তিনজনকে হত্যা০৫ জুলাই ২০২৫