মিয়ানমারে শক্তিশালী ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের দুর্দশা আরও বাড়িয়ে তুলেছে বৃষ্টিপাত ও গরম আবহাওয়া। গতকাল শনিবার ও আজ রোববার দেশটিতে বৃষ্টি হয়েছে। এতে ব্যাহত হয়েছে উদ্ধারকাজ ও ত্রাণ সরবরাহ। এরই মধ্যে দেশটিতে ভূমিকম্পে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ হাজার ৪৭১।

২৮ মার্চ মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলে ৭ দশমিক ৭ মাত্রার ভূমিকম্প হয়। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মৃত্যুর পাশাপাশি এখন পর্যন্ত দেশটিতে ৪ হাজার ৬৭১ জন আহত হয়েছেন। নিখোঁজ ২১৪ জন। এ ছাড়া ভূমিকম্পে ৫ হাজার ২২৩টি ভবন, ১ হাজার ৮২৪টি মন্দির ও প্যাগোডা, ১৬৭টি হাসপাতাল, ১৬৯টি সেতু, ১৯৮টি বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্পের (ইউএনডিপি) তথ্য অনুযায়ী, শনিবার সন্ধ্যায় ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থলের সবচেয়ে কাছের শহর মান্দালয়ে প্রায় ৪৫ মিনিট বৃষ্টি হয়। শহরটিতে এখনো মানুষ ভয়ে ঘরে ফেরেননি। খোলা আকাশের নিচে তাঁদের অনেক তাঁবু বৃষ্টি ও ঝোড়ো বাতাসে ভেঙে গেছে। পর্যাপ্ত ত্রিপলের অভাবে অনেক মানুষকে তাঁদের জিনিসপত্রসহ বৃষ্টিতে ভিজতে হয়েছে।

এ ছাড়া বৃষ্টিপাতের কারণে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে মরদেহগুলো বের করা আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করছেন উদ্ধারকারীরা। এমন শঙ্কার মধ্যে আজ সকালে আবারও মান্দালয়ে বৃষ্টি হয়েছে। সেখানে তাপমাত্রা ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত উঠবে এবং আরও বৃষ্টি হবে বলে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। ইউএনডিপির কর্মকর্তা টান টান বলেন, আবহাওয়া চরম রূপ ধারণ করেছে।

বৃষ্টিপাত ও প্রচণ্ড গরমের কারণে খোলা আকাশের নিচে গড়ে তোলা সাময়িক আশ্রয়শিবিরগুলোতে রোগবালাই ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি দেখা দিয়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে আজ জাতিসংঘের ত্রাণ ও মানবিক সহায়তাসংক্রান্ত সংস্থার (ওসিএইচএ) প্রধান টন ফ্লেচার বলেছেন, উপদ্রুত এলাকাগুলোয় জরুরি ভিত্তিতে খাবার, পানি ও বিদ্যুৎ–ব্যবস্থা মেরামত করা দরকার। অনেক মানুষ এখনো থাকার মতো কোনো আশ্রয় পাননি। তাঁদের জন্য তাঁবু প্রয়োজন।

২৮ মার্চের ভূমিকম্পে মিয়ানমারের পরেই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল প্রতিবেশী দেশ থাইল্যান্ড। দেশটির সরকার জানিয়েছে, ভূমিকম্পের কারণে দেশটিতে এখন পর্যন্ত ২৪ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। তাঁদের মধ্যে ১৭ জনই নিহত হয়েছেন রাজধানী ব্যাংককে ৩৩ তলা একটি ভবন ধসে। ওই ভবনের ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ৭৭ জন আটকা রয়েছেন।

যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘন করছে জান্তা

আগে থেকেই মিয়ানমারের অবস্থা বেহাল। ২০২১ সালে নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করে সামরিক জান্তা। তখন থেকে জান্তাবিরোধী বিদ্রোহী ও ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর সশস্ত্র যোদ্ধাদের সঙ্গে সামরিক বাহিনীর লড়াই চলছে। চার বছর ধরে চলা এই গৃহযুদ্ধের কারণে যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এতে ভূমিকম্প উপদ্রুত এলাকার ৫ কোটির বেশি মানুষের কাছে ত্রাণ পৌঁছানো জটিল হয়ে পড়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে ত্রাণ সরবরাহের জন্য ২ এপ্রিল থেকে সাময়িক যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে জান্তা সরকার। তবে নিজেদের দেওয়া যুদ্ধবিরতি ভেঙে এখন পর্যন্ত বিদ্রোহীদের ওপর অন্তত ১৬টি হামলা চালিয়েছে তারা। এরই মধ্যে শনিবার থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের সঙ্গে দেখা করেছেন জাতিসংঘের কর্মকর্তা টম ফ্লেচার। মিয়ানমারে মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য ‘জোরদার, সমন্বিত ও সামষ্টিক’ পদক্ষেপ নিতে আলোচনা হয়েছে বলে জানান তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ভ ম কম প ত হয় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
  • ইরানের ভুলে আজারবাইজান যেভাবে ইসরায়েলের দিকে ঝুঁকে পড়ল
  • গাজায় দুর্ভিক্ষের অংক
  • গ্যাস সংকট
  • ২৫ শতাংশ শুল্কে ভারতে যেসব খাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে
  • ইসরায়েলে মার্কিন অস্ত্র বিক্রি ঠেকানোর চেষ্টা সিনেটে ব্যর্থ
  • কাফকো সার কারখানায় গ্যাস বিক্রির চুক্তি সই
  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা
  • পাবনায় আগাম পাটের বাজার চড়া, বেশি দাম পেয়ে কৃষক খুশি
  • নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগ কড়া নাড়ছে দরজায়