রংপুরের বদরগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহতের ঘটনায় থানায় হত্যা মামলা হয়েছে। আজ সোমবার সকালে নিহত বিএনপি কর্মী লাভলু সরকারের ছেলে রায়হান কবীর বাদী হয়ে বদরগঞ্জ থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কালুপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদুল হক ওরফে মানিক (৫০), তাঁর ছেলে তানভীর আহম্মেদ ওরফে তমাল (৩২), বদরগঞ্জ ব্যবসায়ী সমিতির সাবেক সভাপতি সারোয়ার জাহান ওরফে মানিকসহ (৫৫) ১২ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১০০ থেকে ১৫০ জনকে।

এ ঘটনায় পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন উপজেলার মধুপুর ইউনিয়ন পরিষদের রাজারামপুর পাইটকাপাড়া গ্রামের মো.

মোরসালিন (৩১) ও বদরগঞ্জ পৌরসভার জামুবাড়ী চাঁদকুঠিরডাঙ্গা গ্রামের হাবিবুর রহমান মন্ডল ওরফে হৃদয় (১৯)। গতকাল রাতে তাঁদের নিজ বাড়ি থেকে আটক করে পুলিশ। ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বদরগঞ্জ শহীদ মিনারের পাশে ইসতিয়াক হোসেনের একটি দোকানঘর রয়েছে। জাহিদুল হক নামের এক ব্যক্তি দোকানটি ভাড়া নিয়ে সেখানে ঢেউটিনের ব্যবসা করে আসছিলেন। এই দোকানকে কেন্দ্র করে ইসতিয়াক হোসেনের সঙ্গে ভাড়াটে জাহিদুল হকের লোকজনের মধ্যে ৪ এপ্রিল পাল্টাপাল্টি ধাওয়া হয়। এরপর দোকানটি তালাবদ্ধ ছিল। গত শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বিএনপির সক্রিয় কর্মী লাভলু সরকারকে সঙ্গে নিয়ে ইসতিয়াক বাবু শহীদ মিনারের পাশে যান। তখন আসামিরা ছোরা, রামদা, হাসুয়া, চাপাতি ও লোহার রড নিয়ে অতর্কিত তাঁদের ওপর হামলা করেন। এতে মাথায় ছুরিকাঘাতে লাভলু সরকার মারা যান।

বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম আতিকুর রহমান বলেন, ওই হত্যা মামলায় গ্রেপ্তার মোরসালিন এজাহারনামীয় আসামি এবং হাবিবুর রহমান মন্ডলকে ভিডিও ফুটেজ দেখে ওই ঘটনায় সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আজ দুপুরে আদালতের মাধ্যমে তাঁদের রংপুর জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। অন্য আসামিদের গ্রেপ্তার করতে পুলিশ কাজ করছে।

আরও পড়ুনবদরগঞ্জে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে একজন নিহত হওয়ার পর ৮ নেতা বহিষ্কার৬ ঘণ্টা আগে

বদরগঞ্জ পৌর শহরে গত শনিবার দুপুরে বদরগঞ্জ শহীদ মিনারের পাশে বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষে নিহত হন স্থানীয় বিএনপি কর্মী উপজেলার মধুপুর কালজানি গ্রামের লাভলু সরকার (৫০)। ওই ঘটনার পর দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে উপজেলা বিএনপি ও যুবদলের আট নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বদরগঞ জ ঘটন য় সরক র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ

‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।

অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।

মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।

শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।

কর্মসূচি

শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।

রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ