বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদারে আগ্রহী স্প্যানিশ পোশাক জায়ান্ট ইন্ডিটেক্স
Published: 9th, April 2025 GMT
বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছে স্পেনের শীর্ষস্থানীয় পোশাক নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইন্ডিটেক্স। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অস্কার গার্সিয়া ম্যাসেইরাস বুধবার (৯ এপ্রিল) ঢাকায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সাক্ষাতে এই আগ্রহ প্রকাশ করেন।
বৈঠকে উভয় পক্ষ পারস্পরিক আগ্রহের বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন, যার মধ্যে ছিল বৈশ্বিক বাণিজ্যের পরিবর্তনশীল প্রেক্ষাপট, বাংলাদেশ-স্পেন সাংস্কৃতিক সম্পর্ক জোরদার এবং বাংলাদেশে ইন্ডিটেক্সের কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা (সিএসআর) কার্যক্রম।
ইন্ডিটেক্সের প্রধান নির্বাহী বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণকে ‘অত্যন্ত অনুপ্রেরণাদায়ক’ হিসেবে উল্লেখ করেন।
ইন্ডিটেক্স বিশ্বের বৃহত্তম ফাস্ট ফ্যাশন গ্রুপ, যার মালিকানায় রয়েছে জারা, বারশকা এবং মিসিমো ডাট এর মতো ব্র্যান্ড।
ম্যাসেইরাস বাংলাদেশকে ইন্ডিটেক্সের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সোর্সিং হাব হিসেবে অভিহিত করে দেশটির সঙ্গে অংশীদারত্ব আরো গভীর করার আগ্রহ জানান।
তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে। আমরা এই সম্পর্ক আরো দৃঢ় করতে চাই। সোর্সিংয়ের দিক থেকে বাংলাদেশ অত্যন্ত ব্যবসাবান্ধব।
বিশ্ব বাণিজ্যের জটিলতা এবং এর প্রভাব নিয়ে কথা বলতে গিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ উদীয়মান বৈশ্বিক বাণিজ্য গতিশীলতাকে কাজে লাগানোর জন্য আরো ভালো অবস্থানে রয়েছে। তিনি বৈশ্বিক বাণিজ্যের ‘চলমান উপাদানগুলোর’ কথাও স্বীকার করেন।
বাংলাদেশের বিভিন্ন পোশাক কারখানা পরিদর্শনের পর, ম্যাসেইরাস দেশটিতে উৎপাদিত বৈচিত্র্যময় পণ্যের প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ করেন।
তিনি ঘোষণা দেন, চট্টগ্রামের এশিয়ান ইউনিভার্সিটি ফর উইমেনের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি নতুন চুক্তির মাধ্যমে ইন্ডিটেক্স বাংলাদেশের পোশাক কারখানার অন্তত ৫০ জন নারী কর্মীর স্নাতক ও স্নাতকোত্তর শিক্ষার সম্পূর্ণ ব্যয় বহন করবে।
এ ছাড়াও, ইন্ডিটেক্স ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্প্যানিশ ভাষা ও সংস্কৃতি নিয়ে ‘ইন্ডিটেক্স চেয়ার’ প্রতিষ্ঠা করেছে বলেও জানান ম্যাসেইরাস।
প্রধান উপদেষ্টা কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতার উদ্যোগের প্রশংসা করেন। তিনি স্পেনে কাটানো সময় এবং স্পেনের সাবেক রানী সোফিয়ার সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের সম্পর্কের কথা স্মরণ করেন।
অধ্যাপক ইউনূস বাংলাদেশের পোশাক শ্রমিকদের জন্য স্বাস্থ্যসেবা খাতে আরো বেশি বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান। বৈঠকে উপস্থিত ইন্ডিটেক্স কর্মকর্তারা জানান, শিগগিরই প্রতিষ্ঠানটি সিলেট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এয়ার-কার্গো পরিবহন শুরু করবে।
ঢাকা/হাসান/এনএইচ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইন ড ট ক স
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।