ভারতের বিতর্কিত ওয়াক্ফ মামলার শুনানি প্রধান বিচারপতি নিজেই শুনবেন
Published: 11th, April 2025 GMT
বিতর্কিত ওয়াক্ফ মামলা শুনবেন ভারতের সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না নিজেই। তাঁর সঙ্গে মামলা শুনবেন বিচারপতি পিভি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথন। ১৬ এপ্রিল ওয়াক্ফ আইন চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা একগুচ্ছ মামলার শুনানি শুরু হচ্ছে। ওই আইন চ্যালেঞ্জ করে অন্তত ১৫টি আবেদন জমা পড়েছে সুপ্রিম কোর্টে।
ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারও প্রস্তুত। সরকারের পক্ষে আগেই সুপ্রিম কোর্টে এক ক্যাভিয়েট দাখিল করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সরকারের অভিমত না শুনে সর্বোচ্চ আদালত যেন কোনো কিছু নির্ণয় না করেন।
ওয়াক্ফ আইনের বিরোধিতা করে প্রথম মামলা করে অল ইন্ডিয়া মুসলিম পারসোনাল ল বোর্ড। প্রায় একই সঙ্গে মামলা করে জামায়াতে উলেমা–ই–হিন্দ ও বেসরকারি সংস্থা (এনজিও) অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য প্রটেকশন অব সিভিল রাইটস (এপিসিআর)।
পাশাপাশি বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, যেমন এআইএমআইএমের আসাউদ্দিন ওয়েইসি, কংগ্রেস নেতা মহম্মদ জাভেদ ও ইমরান প্রতাপগড়ি, আরজেডি নেতা মনোজ ঝা ও ফয়াজ আহমেদ, ডিএমকে নেতা এ রাজা, মণিপুরের শাসক জোট এনডিএর শরিক এনপিপির নেতা শেখ নুরুল হাসানও পৃথক মামলা করেছেন।
পশ্চিমবঙ্গের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রও আলাদাভাবে মামলা রুজু করেছেন। মামলা করেছে কেরালার জামায়াতুল উলেমা, জম্মু–কাশ্মীরের শাসক দল ন্যাশনাল কনফারেন্স ও বিরোধী দল পিডিপিও। আরও কিছু মামলা বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সুপ্রিম কোর্টে নথিভুক্ত হয়নি। প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ সব মামলা একসঙ্গে শুনবেন কি না, তা এখনো জানা যায়নি।
দেশজুড়ে প্রায় প্রতিদিনই বিভিন্ন রাজ্যে ওয়াক্ফ আইনের বিরুদ্ধে মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোও বিক্ষোভ দেখাচ্ছে। কোথাও কোথাও বিক্ষোভ হিংসাত্মক হয়ে উঠছে। জামায়াতে উলেমা–ই–হিন্দের কলকাতা শাখা সিদ্ধান্ত নিয়েছে, এই আইন বাতিলের দাবিতে এক কোটি মুসলমান জনতার সই–সংবলিত এক স্মারকলিপি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে পাঠাবে।
জামায়াতে উলেমা-ই–হিন্দের প্রধান ও রাজ্যের মন্ত্রী সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, রাজ্যের প্রতিটি জেলা ও শহরের এক কোটি মানুষ ওই স্মারকলিপিতে সই করবেন। তারপর তা পাঠানো হবে প্রধানমন্ত্রীর কাছে। ওয়াক্ফ আইন বাতিল করাই তাঁদের লক্ষ্য। কারণ, তাঁরা বুঝেছেন, কেন্দ্রীয় সরকারের উদ্দেশ্য হলো ওয়াক্ফের সম্পত্তি নিয়ন্ত্রণ করা। সেটা তারা করতে চাইছে মুসলমান সমাজের কল্যাণের কথা বলে।
বিজেপি অবশ্য পিছু হটতে নারাজ। বরং এই আইনের সমর্থনে তারাও জনমত গঠনে উদ্যোগী হয়েছে। আইনের ইতিবাচক দিকগুলো জনসমক্ষে তুলে ধরতে ও জনসচেতনতা বাড়াতে তারা এক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ২০ এপ্রিল থেকে শুরু করা হবে দেশব্যাপী অভিযান। সেই অভিযানের রূপরেখা তৈরি করতে বিজেপি সভাপতি জেপি নাড্ডা এক কমিটি তৈরি করেছেন। গত বৃহস্পতিবার দলীয় সদর দপ্তরে ওয়াক্ফ নিয়ে এক কর্মশালারও আয়োজন করা হয়।
বিজেপি প্রচারে বলবে, ওয়াক্ফ আইনের বিরোধিতা যারা করছে, তারা অনন্তকাল তুষ্টিকরণের রাজনীতি করে আসছে। মুসলিমদের তারা আইনের ভুল ব্যাখ্যা শোনাচ্ছে।
কর্মশালায় আইনের ব্যাখ্যা করে সংখ্যালঘু উন্নয়নমন্ত্রী কিরেন রিজিজু বলেন, এই আইন অনগ্রসর পসমন্দা মুসলিম ও নারীদের ক্ষমতায়নের লক্ষ্যে আনা। ওয়াক্ফ কাউন্সিল ও ওয়াক্ফ বোর্ডে অমুসলমানদের সদস্য করা হলেও তাঁরা শুধু সংগঠনের প্রশাসনিক কাজ করবেন। ধর্মীয় ক্ষেত্রে হস্তক্ষেপের কোনো অধিকারই তাঁদের থাকবে না।
বিজেপি ঠিক করেছে, ওয়াক্ফ আইনের ইতিবাচক দিকগুলো তুলে ধরে হিন্দি ও উর্দুতে লেখা প্রচারপত্র সারা দেশে বিলি করবে। সেই প্রচারপত্রে বিরোধীদের অভিযোগ ও তার জবাব লেখা থাকবে।
বিজেপির এক সূত্রের কথায়, এই আইন ওয়াক্ফের বাস্তুঘুঘুদের বাসা ভেঙে দিয়েছে। দুর্নীতি ও অব্যবস্থার আর কোনো উপায় থাকবে না। কিছু মানুষের মৌরসি পাট্টা ভেঙে দিয়েছে। মুসলিম সমাজ দেরিতে হলেও তা বুঝতে পারবে। তিনি বলেন, যাঁরা ভাবছেন বিরোধিতার মুখে কৃষি আইনের মতো এই আইনও সরকার প্রত্যাহার করে নেবে, তারা মূর্খের স্বর্গে বাস করছেন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন ব চ রপত আইন র ব সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।