চা খাচ্ছিলেন মনোয়ার, হঠাৎ মোটরসাইকেলে এসে পাঁচ রাউন্ড গুলি
Published: 13th, April 2025 GMT
পাবনার ঈশ্বরদীতে অটোরিকশাস্ট্যান্ড দখল নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে এবার গুলিবিদ্ধ হয়েছেন মনোয়ারুল ইসলাম (৫০) নামে বিএনপির এক নেতা। আজ রোববার দাশুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সুলভ মালিথার বাড়ি ও হাইওয়ে থানার পাশে মুনশিদপুর এলাকায় গুলিবিদ্ধ হন তিনি।
ঈশ্বরদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। আহত মনোয়ারুল দাশুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির সহসভাপতি এবং নওদাপাড়া গ্রামের আবুল কালামের ছেলে। শ্রমিক দল ও যুবদলের দুই পক্ষের সংঘর্ষের এক দিন পর গুলির এ ঘটনা ঘটল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মনোয়ার দোকানে বসে চা খাচ্ছিলেন। এ সময় উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিপন প্রামাণিকসহ কয়েকজন মোটরসাইকেলে এসে চার থেকে পাঁচ রাউন্ড গুলি করে চলে যায়। এতে তাঁর পায়ে ও পেটে দুটি গুলি বিদ্ধ হয়। তাঁকে উদ্ধার করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
পুলিশ জানায়, কয়েক দিন আগে সিএনজিচালিত অটোরিকশাচালক মোশাররফ ও টেম্পোচালক আনিসের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রকু প্রামাণিক মোশাররফের এবং যুবদলের সদস্য সচিব বিপুল মোল্লা আনিসের পক্ষ নেন। এর জেরে গত শুক্রবার রকু এবং বিপুলের লোকজনের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।
আগের ঘটনায় রকুর অফিস ভাঙচুর করা হয়। আহত অনেকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিয়েছেন। শুক্রবারের সংঘর্ষের জেরে রোববার বিএনপি নেতা মনোয়ারুলকে গুলি করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। উপজেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক রিপন প্রামাণিক ও শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি রকু প্রামাণিককে এলাকায় পাওয়া যায়নি। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ থাকায় বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
দাশুড়িয়া ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক সুলভ মালিথা বলেন, মনোয়ারুলকে যারা গুলি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে দলীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ইউনিয়ন যুবদলের সদস্য সচিব বিপুল মোল্লা বলেন, অটোরিকশাস্ট্যান্ড দখলকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ ও গুলির ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।
ঈশ্বরদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম বলেন, দুই ঘটনা তদন্ত করে আইনি পদক্ষেপ নেওয়া হবে। গুলিবিদ্ধ মনোয়ারুলের পক্ষে মামলা দায়ের করার প্রস্তুতি চলছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: প বন ব এনপ মন য় র ল য বদল র ব এনপ র স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস আজ
‘উদয়ের পথে শুনি কার বাণী/ ভয় নাই ওরে ভয় নাই/ নিঃশেষে প্রাণ যে করিবে দান/ ক্ষয় নাই তার ক্ষয় নাই’। তাঁদের নিঃশেষে প্রাণদানের স্মৃতি আজ গভীর বেদনায় স্মরণ করবে জাতি। আজ থেকে ৫৪ বছর আগে দেশের শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীরা হানাদার পাকিস্তান সেনাবাহিনীর নীলনকশার শিকার হয়ে নির্মম হত্যার শিকার হয়েছিলেন।
অমিত বিক্রম বাঙালির জীবনপণ যুদ্ধে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর চূড়ান্ত পরাজয় তখন ছিল কেবল দিনগণনার বিষয়। সেই অনিবার্য পরাজয়ের প্রাক্কালে মরণকামড় দেওয়ার চেষ্টা করেছিল ঘাতক বাহিনী। স্বাধীনতা অর্জন করলেও বাঙালি জাতি যেন মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে না পারে, সেই চক্রান্ত করেছিল তারা। দেশের সেরা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা করে তাঁদের বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে গিয়ে নির্মম নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছিল। এ কাজে পাকিস্তানি সেনাদের সরাসরি সহায়তা করেছিল তাদের মিত্র এ দেশি রাজাকার, আলবদর বাহিনী। এরাই ঘাতক সেনাদের নিয়ে গিয়ে চিনিয়ে দিয়েছে বুদ্ধিজীবীদের বাড়ি। চিনিয়ে দিয়েছে সেই নিরীহ মানুষগুলোকে।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ে পরে মিরপুরে রায়েরবাজার পরিত্যক্ত ইটখোলা ও মিরপুরে বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাওয়া সেসব বুদ্ধিবৃত্তিক পেশায় যুক্ত মানুষের মরদেহগুলো উদ্ধার করা হয়। তাঁদের অনেকের ছিল পিছমোড়া করে হাত ও চোখ বাঁধা। ভয়ানক নির্যাতনের চিহ্ন ছিল শরীরে। তাঁদের মরদেহ উদ্ধার হওয়ার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বুদ্ধিজীবী হত্যার গভীর ষড়যন্ত্র প্রকাশ হয়ে পড়ে। এর পর থেকেই শহীদ বুদ্ধিজীবীদের প্রতি শ্রদ্ধা ও শোক প্রকাশ করে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালিত হয়ে আসছে।
শুধু ঢাকাতেই নয়, সারা দেশেই বুদ্ধিবৃত্তিক কাজে যুক্ত মানুষদের হত্যা করেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। এই হত্যাকাণ্ডের ছিল দুটি পর্যায়। ‘অপারেশন সার্চলাইট’ নামে ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে হানাদার সেনারা রাজধানীতে গণহত্যা শুরু করেই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকায় সাধারণ নিরীহ জনসাধারণের পাশাপাশি শিক্ষক, চিকিৎসকদেরও হত্যা করে। এরপর থেকে হানাদাররা সারা দেশের শিক্ষক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী, আইনজীবী, শিল্পী, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গবেষক, সংস্কৃতিসেবীসহ মেধা মনন সৃজনশীল কাজে যুক্ত মানুষদের বেছে বেছে হত্যা করতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধে শেষ পর্যায় তারা এই বুদ্ধিবৃত্তিক মানুষদের নিঃশেষ করে দেওয়ার জন্য তালিকা করে হত্যা চালাতে থাকে। তাঁদের মধ্যে যেমন প্রবীণ প্রাজ্ঞজনেরা ছিলেন, তেমনি ছিলেন উদিত যৌবনের বহু সম্ভাবনাময় তরতাজা প্রাণ। আজ তাঁদের স্মৃতির স্মরণ করা হবে সারা দেশে।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন ও প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস পৃথক বাণী দিয়েছেন।
কর্মসূচিশহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন উপলক্ষে অনুষ্ঠিত আন্তমন্ত্রণালয়ের সভায় জানানো হয়েছে, আজ রোববার সকাল ৭টা ৫ মিনিটে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন এবং ৭টা ৬ মিনিটে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। তাঁরা জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে সেখানে নীরবে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকবেন। এ সময় বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর একটি চৌকস দল রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টাকে রাষ্ট্রীয় স্যালুট প্রদান করবে।
রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টার পুষ্পস্তবক অর্পণের পর মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম, মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের সচিব ইসরাত চৌধুরী, শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্য এবং হুইলচেয়ারধারী যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারা মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন।