আগুন আতঙ্কে চলন্ত ট্রেন থেকে দম্পতির লাফ, কোলে থাকা শিশুর মৃত্যু
Published: 15th, April 2025 GMT
কক্সবাজারগামী ট্রেন প্রবাল এক্সপ্রেসে চলন্ত অবস্থায় আগুন লাগার ঘটনা ঘটেছে। ট্রেনে আগুন লাগার খবরে আতঙ্কিত হয়ে এক দম্পতি তাঁদের এক ছেলেশিশুসহ লাফ দেন। এ ঘটনায় মো. হামদান নামের ৮ মাস বয়সী ওই শিশুর মৃত্যু হয়েছে। গুরুতর আহত হয়েছেন শিশুর মা-বাবা।
আজ মঙ্গলবার রাত পৌনে ৮টার দিকে রেললাইনের লোহাগাড়া উপজেলা অংশে এ ঘটনা ঘটে। লোহাগাড়া থানার উপপরিদর্শক জাহেদ হোসেন ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনজনকে উদ্ধার করে লোহাগাড়া উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গেলে চিকিৎসক শিশুটিকে মৃত ঘোষণা করেন। স্বাস্থ্যকেন্দ্রের চিকিৎসক শিমুল দত্ত বলেন, শিশুটি হাসপাতালে আনার আগেই মারা গেছে। আহত দম্পতিকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এ ঘটনায় গুরুতর আহতরা হলেন কক্সবাজার জেলার পিএমখালী ইউনিয়নের বাসিন্দা আবদুর রাজ্জাক (২৪) ও তাঁর স্ত্রী লিজা আক্তার (১৮)। ঈদের ছুটি শেষে আবদুর রাজ্জাক বাঁশখালী উপজেলার গুনগরীতে তাঁর শ্বশুরবাড়ি থেকে সাতকানিয়া রেলস্টেশন হয়ে কক্সবাজারে ফিরছিলেন।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও ট্রেনের যাত্রী হুমায়ুন কবির বলেন, চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজারগামী ট্রেনটি বিরতির পর সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে সাতকানিয়া স্টেশন ছেড়ে যায়। ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যে লোহাগাড়া উপজেলার পদুয়া এলাকায় ট্রেনের ‘ড’ বগিতে আগুন লাগে। আগুন লাগার খবরে যাত্রীরা চিৎকার করে বাঁচার আকুতি জানাতে থাকেন। এতে পুরো ট্রেনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় ট্রেনের সামনের দিকে থাকা এক দম্পতি তাঁদের কোলের শিশুসন্তানসহ দরজা দিয়ে লাফ দেন। এতে তাঁরা গুরুতর আহত হন। স্থানীয় লোকজন তাঁদের উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান।
লোহাগাড়া স্টেশনমাস্টার দিদার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে ট্রেনের একটি বগিতে আগুন লাগে। এ সময় বগিতে যাত্রীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। তবে ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যে নিভিয়ে ফেলা হয়।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রবাল এক্সপ্রেস প্রতিদিন চট্টগ্রাম স্টেশন থেকে বেলা ৩টা ১৫ মিনিটে ছেড়ে যায়। তবে আজ প্রায় দুই ঘণ্টা দেরিতে বিকেল ৫টার দিকে চট্টগ্রাম থেকে ছেড়ে যায়।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।